বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি

বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি

বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি

 

প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের প্রভাব আজকের জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক। মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি ছাড়া জীবনযাপনের কথা আজকাল আমরা আর একেবারেই কল্পনা করতে পারি না। তাহলে বাচ্চারাই বা আর পিছিয়ে থাকে কেন? প্রতিটি মা বাবাই চান তাদের সন্তান বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠুক। ফলে ছোট থেকেই তারা সন্তানের মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক বাড়িয়ে তুলতে আগ্রহী।

বাড়িতে যদি বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক বাড়ানোর মত একটি যথাযথ পরিবেশ থাকে, তাহলে খুব সহজেই শিশুর মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ততই হতে শুরু করে। যেমন ধরুন বাচ্চাদের প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করা, সমালোচনামূলক ভাবে তাদের চিন্তা করতে সহায়তা করা, ছোটখাটো জিনিস পরীক্ষা করা, যুক্তি দিয়ে কোন কিছু ব্যখ্যা করা, টিভিতে বিজ্ঞান সম্পর্কিত অনুষ্ঠান দেখা, মডেল তৈরি করা ইত্যাদি।

এখানে আমরা আলোচনা করবো এমন কিছু টিপস নিয়ে যেগুলি আপনার সন্তানকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে সহায়ক হবে। চলুন দেখে নেওয়া যাক সহজ কিছু টিপস

 

  • সম্প্রতি হয়েছে এমন আবিষ্কারগুলি সম্পর্কে শিশুকে বলুন

বিজ্ঞানের জগতে হয়ে যাওয়া সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলি সম্পর্কে শিশুকে জানতে সাহায্য করুন। প্রথম দিকে এইভাবে এগোতে পারেন যে আপনি নিজে আগে আবিষ্কার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিতে তারপর তা বাচ্চার কাছে গল্পের মত করে বলুন। নতুন এই আবিষ্কারগুলি জানার জন্য আপনি সায়েন্স ম্যাগাজিন, নিউজ এগুলির সাহায্য নিতে পারেন। এছাড়া টিভিতে এমন কিছু চ্যানেল রয়েছে যেগুলি বিজ্ঞানভিত্তিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে এবং সেগুলি বাচ্চাদের উপযোগী ও বটে। কার্টুনের পরিবর্তে সেই সব চ্যানেল বেছে নিতে পারেন। তাতে করে বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়বে।

আরো পড়ুন আপনার সন্তান কি কোন বিশেষ প্রতিভার অধিকারী? বুঝবেন কীভাবে?

  • শিশুকে প্রশ্ন করতে আরো বেশি উৎসাহিত করুন

জিজ্ঞাসা থেকেই বিজ্ঞানের উৎপত্তি। জিজ্ঞাসাকে বাদ দিয়ে কখনোই বিজ্ঞানের  কথা ভাবা যায় না। আপনাকে সন্তানও যদি বিজ্ঞানের প্ৰতি আগ্রহ বোধ করে, তাহলে সেও অনেক প্রশ্ন আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে। যেমন- তারাদের শুধু রাতের আকাশেই দেখা যায় কেন, রাতে সূর্য কথায় যায় বা বৃষ্টি হয় কেন ইত্যাদি। এই প্রশ্ন করাকে উৎসাহিত করুন। বাবা মায়েরা অনেক সময়েই কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য শিশুর বারংবার প্রশ্ন করায় বিরক্ত বোধ করতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে সন্তানকে এগিয়ে রাখতে হলে তাদের প্রশ্নের উত্তর যথাসম্ভব বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে দেওয়ার চেস্টা করুন।

 

 

  • দৈনন্দিন জীবনের উদাহরণকে কাজে লাগান

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সব কিছুতেই বিজ্ঞানের অস্তিত্ব রয়েছে। এই সমস্ত উদাহরণকে কাজে লাগিয়ে শিশুকে বিজ্ঞানের ধারণা দিতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি ভৌত পরিবর্তন এবং রাসায়নিক পরিবর্তন সম্পর্কে তাকে ধারণা দিতে চাইছেন। এখন ভৌত পরিবর্তনের জন্য বরফ থেকে জল ও জল থেকে বরফ হওয়ার উদাহরণ আপনি নিয়ে নিতে পারেন। আবার কাগজ পুড়ে গিয়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে এবং তা আর আগের অবস্থায় ফিরে আসছে না,  এমন উদাহরণ কে রাসায়নিক পরিবর্তন বোঝানোর জন্য ব্যবহার করতে পারেন। আবার মেঘ থেকে কীভাবে বৃষ্টি হয় তা যদি বোঝাতে চান তাহলে রান্নাঘরে জল থেকে বাষ্প হওয়ার বিষয়টি হাতে কলমে করে দেখাতে পারেন।

আরো পড়ুন Kids Memory : কি খেলে বাচ্চাদের মস্তিষ্ক (ব্রেইন) ভালো হয়

 

  • প্রাকটিক্যাল দিকগুলিকে বেশি গুরুত্ব দিন

পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত – বিজ্ঞানের মূল তিনটি স্তম্ভ। পাঠ্যবই পড়ে যত জ্ঞানই কেউ লাভ করুক না কেন, ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ না থাকলে এর সবটুকুই বৃথা। বইয়ে পড়া বিষয়গুলিকে বাস্তবিক ভাবে দেখার সুযোগ করে দিন। কিভাবে করবেন?  ফুলের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে শুধু বই না পড়ে একটি ফুল হাতে নিয়ে সবটা তাকে বিশ্লেষণ করে দেখান। কিভাবে দিন ও রাত হচ্ছে তা বোঝানোর জন্য একটি গ্লোব আর টর্চলাইটের পরীক্ষা বাড়িতে একবার করেই ফেলুন। আবার ধরুন বাড়িতে গোটা মাছ আনা হয়েছে। সেটি কাটার আগে মাছের দেহের বিভিন্ন অংশগুলো তাকে একবার দেখিয়ে দিন। পরের বার মাছ কিনে আনলে তাকেই বিভিন্ন অংশগুলি দেখাতে বলুন।

  • সাইন্স সেন্টারে নিয়ে যেতে পারেন

শেখানোর ক্ষেত্রে অভিনবত্ব আনতে চাইলে বাচ্চাদের ছুটি কাটানোর সময়কেও স্মার্ট উপায়ে কাজে লাগানো যেতেই পারে। সপ্তাহের শেষের ছুটিতে বাচ্চাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করলে একবার সায়েন্স সেন্টারে ঘুরে আসতেই পারেন। আজকাল ছোট বড় প্রায় সব শহরেই সায়েন্স সেন্টার রয়েছে। সেখানে এমন অনেক কিছু থাকে যা বাচ্চারা হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ পায়, ফলে বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের মধ্যে আগ্রহ বাড়তে থাকে। একান্তই যদি সায়েন্স সেন্টার আপনার শহরে না থাকে তাহলে চি্ড়িয়াখানা যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন। সেখানে বিভিন্ন পশুপাখি, তাদের খাদ্যাভ্যাস, কীভাবে তারা বেঁচে থাকে সেসব অনেক কিছুই বাচ্চারা জানতে পারবে। বইতে পড়া বিষয় সামনে থেকে দেখতে পেলে বাচ্চাদের ভালো লাগবে আবার কিছুটা জানাও হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন আপনার সন্তান কে ঘড়ি দেখে সময় বলা শেখাবেন কীভাবে?

  • উপহারে দিতে পারেন আতস কাঁচ বা মাইক্রোস্কোপের মত জিনিস

বিজ্ঞানের প্রতি সন্তানের আগ্রহ বাড়াতে উপহারে তাকে দিতেই পারেন মাইক্রোস্কোপ। যে কোন সূক্ষ্ম জিনিসকেই অনেক বড় করে দেখতে পেলে এটি শিশুর কাছে খুব মজার একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সন্তান খুব ছোট হলে শুরুটা করতে পারেন আতস কাঁচ দিয়ে।

 

যে কোন ব্যাপারেই শিশুর মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারলে নিজে থেকেই শিশু আকৃষ্ট হতে শুরু করে। শিশুর মধ্যে বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক তৈরিতেও এটি প্রয়োগ করা যেতেই পারে।