সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছেন। সারা রাস্তা সবটাই ঠিক ছিল। কিন্তু স্কুলের গেটে পৌঁছনো মাত্র সন্তান কান্নাকাটি জুরে দিচ্ছে। বাচ্চা যখন প্রি-স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন নতুন পরিবেশ তাদের কাছে খুব একটা সহজ মনে হয় না। সুতরাং বাচ্চাদের স্কুল শুরু হওয়ার কিছুদিন পর্যন্ত এমন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। কিন্তু এমন পরিস্থিতি যদি মাসের পর মাস চলতে থাকে তাহলে আপনাকে একটু ভাবতে হবে।
আসলে বেশিরভাগ বাচ্চারাই সহজে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সক্ষম হলেও অনেক শিশু এমনও রয়েছে যারা কিনা চট করে অন্য পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে না এবং মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি তাদের জন্য কঠিন সময় হয়ে দাঁড়ায়। এবং আর কোন উপায় না দেখে তারা কান্নাকাটি করে প্রতিবাদ জানায়। তবে এমন পরিস্থিতি তো কোন পিতামাতার কাছেই কাম্য নয়। তাই এমন অবস্থা দেখা দিলে আপনি কি করবেন, আসুন জেনে নিই এমনই কিছু টিপস
-
স্কুলে যাওয়ার সময় বাচ্চা কান্নার কারণ নিয়ে বাড়িতে খোলাখোলি আলোচনা করুন
স্কুলের পরিবেশে এমন কোন না কোন ব্যাপার রয়েছে যা আপনার সন্তানের কাছে অপ্রিয় বা তাকে কোন অপ্রিতিকর পরিস্থিতে ফেলেছে। যার জন্য শিশু স্কুলে যাওয়ার সময় কেঁদে ভাসাচ্ছে। আবার এমনও হতে পারে যে আপনাদের সান্নিধ্য শিশু যতটা নিরাপদ বোধ করে, স্কুলে হয়তো তেমনটা বোধ করছে না। বাচ্চার কান্নার কারণ নিয়ে বাড়িতে খোলাখুলি ভাবে তার সঙ্গে আলোচনায় আসুন। বাড়ি ফেরার পর তার সঙ্গে কথা বলুন, জানার চেষ্টা করুন কেন সে স্কুলে যাওয়ার সময় এমন করছে। এর কারণ হতে পারে সে শুধুই আপনাদের মিস করে, অথবা এমনও হতে পারে স্কুলের টিচারকে সে খুব বেশি ভয় পাচ্ছে। যা কিছুই কারণ হোক না কেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
-
সমাধানের উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন
শিশুর সমস্যা খুঁজে পেলেই হল না, তার একটা ভালো সমাধান খুঁজে দেওয়াটাও জরুরী। হতে পারে সন্তানের কাছে যা খুব সমস্যার মনে হয়, আপনার কাছে তা অযৌক্তিক ঠেকছে। শিশুর কান্নার কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। ধরুন সে ভাবছে , আপনি যদি তাকে স্কুল থেকে ফেরত নিতে না আসেন। আবার এমনও হতে পারে স্কুলে তার প্রিয় বন্ধুর পাশে বসতে না পারার জন্য , স্কুল যেতে তার একেবারেই ভালো লাগে না এবং সেই কারণে স্কুলে যাওয়ার সময়ে সে খুব কান্নাকাটি করছে। কোন একজন টিচার হয়তো তার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, ফলে সে কাউকে কিছু বলতে পারছে না, আর স্কুলেও যেতে চাইছে না, এমন ঘটনাও কিন্তু বিরল নয়। এই ধরণের কারণ কিন্তু সত্যি গুরুতর এবং বড়োদের কাছে খুব সামান্য মনে হলেও শিশুরা এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় আসলেই খুব সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। তাই এটাই কাম্য যে এসব কারণগুলোকে ছোট করে না দেখে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করুন। স্কুল শুধুমাত্র পড়াশোনার জায়গা নয়, এখানে শিশুর প্রথম সামাজিকীকরণ শুরু হয়, শিশু প্রথম তার পরিবারের গন্ডি পেরিয়ে অন্য পরিবেশে মানিয়ে নিতে শেখে।
আরো পড়ুন-বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
-
স্কুলে যাওয়ার সময় আগে থেকেই স্কুল সম্পর্কে ভয় দেখাবেন না
স্কুল সম্পর্কে আগে থেকেই নেগেটিভ কিছু বলা থেকে দূরে থাকুন। বহু অভিভাবকেরাই বাচ্চাকে স্কুলের দিদিমনি কে দিয়ে ভয় দেখাতে চান। কিন্তু এতে করে বাচ্চার মনে স্কুল নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এটিই পরবর্তীতে শিশুর স্কুল যাওয়ার প্রতি অনীহার কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই যতটা সম্ভব স্কুল সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলুন। স্কুলে গেলে অনেক বন্ধু হতে পারে, তাদের সঙ্গে একসাথে বসে টিফিন ভাগ করে খাওয়া যেতে পারে, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা করা কতখানি আনন্দের এই ধরণের কথা তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। যাতে করে তারা আরো বেশি করে স্কুল যেতে উৎসাহিত বোধ করবে।
-
কান্না মনোযোগ আকর্ষণের উপায় নয়তো?
মনোযোগ আকর্ষণের প্রবণতা অনেক শিশুর মধ্যে দেখা যায়। একটু খেয়াল করলে দেখতে পারবেন মা- বাবা মুখ ঘুরিয়ে নিলেই শিশু কান্না জুরে দেয় এবং সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারণ শিশু জানে যে আসলেই কান্না মনোযোগ আকর্ষণের দারুন একটি উপায়। একই ভাবে স্কুলে যাওয়ার সময়ে কান্নাকাটিও কিন্তু শিশুর মনোযোগ আকর্ষণের দরুন হতে পারে। যদি তেমন তাই টের পান, তাহলে কিন্তু শিশুর এই মনোযোগ সন্ধানী আচরণ আপনাকে উপেক্ষা করে যেতে হবে। কারণ আপনি মনোযোগ দিলেই এটি করতে সে আরো বেশি উৎসাহ পাবে।
আরো পড়ুন-হোমস্কুলিং এ আপনার সন্তান সত্যিই কতটা শিখতে পারছে, তা বুঝবেন কি করে?
-
টিচারের সঙ্গে শিশুর সম্পর্ক কেমন তা দেখতে হবে
স্কুল সম্পর্কে ভীতির জন্য বাচ্চা যদি প্রায়শই কান্নাকাটি করতে থাকে তাহকে অবিলম্বে শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলুন। টিচারের সঙ্গে বাচ্চাদের সম্পর্কের বন্ধন এমন হওয়া দরকার যাতে বাবা মায়ের অনুপস্থিতিতেও শিশু ঠিক ততটাই নিরাপদ বোধ করে যতটা সে বাড়িতে নিজেকে নিরাপদ ভাবে। কোন শিক্ষক শিক্ষিকার অত্যধিক কঠোর হওয়া হয়তো শিশুর কাছে ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিশুর এডজাস্ট করতে অসুবিধা হলে তা টিচারদের জানাতে হবে। যে কোন অভিজ্ঞ শিক্ষকই ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন এবং শিশুর প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেবে বলে আশা করা যায়। শিশুর সঙ্গে শিক্ষকের সুসম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রাখে।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজনদের সাথে শেয়ার করে তাদের পড়ার সুযোগ করে দিন । আজকের আর্টিকেল সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন ।
আরো পড়ুন-
সন্তানের মূল্যবোধ গঠনে আপনার কর্তব্য
সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
কীভাবে আপনার সন্তানের মধ্যে সমস্যা সমাধানের স্কিল গড়ে তুলবেন?
Pingback: কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা? - Pare