অভিভাবকত্বকে কঠিনতম কাজগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেট হল সন্তানের সফল ভবিষ্যৎ । কেননা অভিভাবকত্ব নিয়ে তেমন কোন পুঁথিগত শিক্ষাক্রম বা ট্রেনিং উপলব্ধ নয়। তবে এমন অনেক উপায় আছে, যা দিয়ে আপনি নিজের অভিভাবকত্বকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন। এগুলির মধ্যে অভিভাবকত্বের একটি বিশেষ দিক হল সন্তানকে ভবিষ্যৎ জীবনে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করা। আগামীতে কি হবে তা পরে দেখা যাবে- অভিভাবকের এই ধরণের মনোভাব সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কাম্য নয়। তাই সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর ও সফলভাবে গড়ে তুলতে হলে আপনাকে এখন থেকেই খানিকটা তৎপর হতে হবে। আমাদের আর্টিকেলে রইল এমনই কিছু বিজ্ঞানন্সম্মত উপায় যা আপনার সন্তানকে ভবিষ্যৎত জীবনে সফল করে তুলতে সহায়ক হতে পারে।
-
আরো বেশি উদবুদ্ধ করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে
ব্যর্থতায় বাচ্চারা সহজেই ভেঙ্গে পড়তে পারে। কিন্তু সফল হতে গেলে বারবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, একথা তাদের শেখান। যে কোন মানুষের ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা আসা স্বাভাবিক। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় না। কিন্তু যা সমস্যা হয়ে দেখা দেয় তা হল একটুতেই তাদের ভেঙ্গে পড়া। কিন্তু ভেঙ্গে পড়তে দিলে তো চলবে না। আপনাকেই হয়ে উঠতে হবে সন্তানের চিয়ারলিডার। “ আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবো যতক্ষণ না সফল হতে পারছি ” এই ধরণের পসিটিভিটি দিয়ে তাকে আরো বেশি করে উৎসাহিত করুন।
-
সন্তানের সফল ভবিষ্যৎ এর জন্য প্রাণ খুলে তাদের প্রশংসা করুন
বাচ্চাদের মধ্যে নতুন কিছু শেখার আগ্রহ, সমস্যা সমাধান করার মত ক্ষমতার বিকাশ করতে পারলে তা শিশুকে আগামী জীবনে সফলতার দিকে কয়েক কদম এগিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এই গুণগুলি কারোর ক্ষেত্রে সহজাত হয়ে থাকে, আবার কাউকে হয়তো পরিশ্রমের সঙ্গে অর্জন করতে হয়। যখন আপনি কোন কারণে বাচ্চার প্রশংসা করছেন, তখন তার পরিশ্রমের জন্য প্রশংসা করুন। এতে করে সে প্রচেষ্টা করতে আরো বেশি আগ্রহ পাবে।
-
সন্তানের সফল ভবিষ্যৎ এর জন্য শিশুকে সামাজিকতার শিক্ষা দিন
গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল শিশুরা সামাজিকভাবে যত বেশি দক্ষ, পরবর্তী জীবনে তারা অন্যদের তুলনায় বেশি উন্নত করে। শিশুর এই সামাজিকতার শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া প্রয়োজন। আপনি ভাবছেন বর্তমানের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলিতে সদস্য তো মাত্র তিন থেকে চার জন, এখানে শিশুকে সামাজিকতার শিক্ষা দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে সামাজিক দক্ষতাকে গড়ে তোলার সবচেয়ে ভালো উপায় হল পারিবারিক আচার অনুষ্ঠান। খাবার তৈরির সময় শিশুর সাহায্য নেওয়া, একসঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটির দিন যাপন, সকাল বা সন্ধ্যেবেলা হাঁটতে যাওয়ার মত ব্যাপারগুলি শিশুর মধ্যে সামাজিক দক্ষতা তৈরি করার ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে।
আরো পড়ুন –সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
-
রোজকার অভিজ্ঞতা থেকেই শেখার সুযোগ করে দিন
শিশুকে শেখানোর দিক থেকে বইয়ের পাতা অপেক্ষা রোজকার অভিজ্ঞতা খানিকটা এগিয়ে রয়েছে। প্রতিটি অভিজ্ঞতাকেই শিশুর শেখার একটি সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান। বাস্তব অভিজ্ঞতার থেকে শেখা যে কোন কিছুই শিশুর কাছে অনেক বেশি মনোগ্রাহী হয়। ভাষার জ্ঞান বাড়িয়ে তুলতে সন্তানের সঙ্গে কথা বলার সময় ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করুন, কীভাবে শব্দ ব্যবহারে অর্থের পরিবর্তন হয় তা বর্ণনা করুন। বাজার থেকে কিনে আনা ফলগুলি সাজিয়ে রাখতে রাখতে তাকে গুণে ফেলতে বলুন। পাশাপাশি কোন মরশুমে কোন ফল পাওয়া যায়, কোন ফলের কি গুনাগুন রয়েছে, ফল খেলে শরীরের কি উপকার হয় সেসব বলুন। বইয়ের পড়ার চেয়ে এভাবে শেখানো অনেক বেশি আনন্দদায়ক হবে। বাস্তব থেকে যে কত কিছু শেখা যায় তা শিশু এই বয়স থেকেই বুঝতে পারবে।
-
স্নেহশীল পিতামাতা হয়ে উঠুন
একটি সুখী এবং সফল জীবনের চাবিকাঠি হল সুন্দর সম্পর্ক। যে ব্যক্তির জীবনে সুন্দর সম্পর্কের সংখ্যা যত বেশি তিনি তত বেশি নিরাপদ বোধ করেন এবং তার সফলতার মাত্রাও অন্যান্যদের তুলনায় বেশি। এমনই আশ্চর্যজনক তথ্য গবেষণায় উঠে এসেছে। সন্তানের প্রতি স্নেহশীল আচরণ পিতামাতার সঙ্গে একটি সুন্দর সম্পর্কের আধার তৈরি করতে সাহায্য করে, যা ভবিষ্যৎ জীবনে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের ভিত্তি স্থাপন করে। একটি সুন্দর শৈশবের স্মৃতি ব্যক্তিকে আজীবন আনন্দ দেয়। তাই আগামীতে বাচ্চাদের সফল হিসেবে দেখতে চাইলে তার সর্বোত্তম উপায় হল সন্তানের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা, তাকে একটি সুন্দর শৈশব উপহার দেওয়া।
-
সবসময় শাস্তি বা পুরষ্কার না দিয়ে মূল্যবোধের দ্বারা অনুপ্রানিত করুন
পুরষ্কার বা শাস্তি শিশুর মধ্যে কোন ভালো আচরণ তৈরি করতে বা মন্দ আচরণ ছাড়ানোর জন্য কাজ দেয়- একথা মনোবিজ্ঞানে স্বীকৃত। কিন্তু সব পুরষ্কার বা শাস্তি শিশুর মধ্যে সমানভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না। এগুলি শিশুর মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য বাহ্যিক প্রেরনা তৈরি করতে পারে। ফলত এটি কোন দীর্ঘমেয়াদী ভালো সমাধান নয়। তাহলে ভালো সমাধানটি কি? বাচ্চাদের মধ্যে ভেতরের অনুপ্রেরণাকে জাগিয়ে তুলতে হবে, তার মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। শুধুমাত্র A গ্রেড পাওয়ার জন্য পড়াশোনা নয়, শেখার জন্য বাচ্চাকে পড়তে শেখাতে হবে। বাচ্চারা যদি আনন্দের সঙ্গে শিখতে পারে তাহলেই তারা জীবনে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। সন্তানকে শেখার জন্য অনুপ্রানিত করুন। নতুন কিছু শেখা কীভাবে উপভোগ করা যায় তা বলুন।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করে আপনার পরিজনদের পড়ার সুযোগ করে দিন। পেরেন্টিং সম্পর্কিত আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানান ।
আরো পড়ুন-
শিশুর হাতের লেখা কিভাবে ভালো করাবেন ?
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গঠনের অসাধারন কিছু টিপস
Very good content and it’s a very important innitiative for the parenthood. Thank you so much for the valuable information 😊.
Thank you for your valuable feedback.
This article will be really helpful…