ফরেন্সিক সাইন্স

উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ হতে পারে ফরেন্সিক সাইন্স। কিভাবে এগোবে পড়ুয়ারা । রইল পরামর্শ।

কিছুদিন পরেই উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট। আর তারপরেই পেশা নির্বাচনের পালা। পড়ুয়াদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি হতে পারে ফরেন্সিক সাইন্সে। কেবল ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিংই যে একমাত্র উজ্জ্বল পেশা নয় এ কথা এখন আর নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়ার নয়। গতানুগতিক পেশার পাশাপাশি এমন অনেক পেশা এখন রয়েছে যেখানে ছেলেমেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে উঠতে পারে। ফরেন্সিক সাইন্সও তেমনই একটি শাখা।

আপনিও যদি চান ফরেন্সিক এক্সপার্ট হিসেবে নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে তাহলে আপনার জন্য বহু সুযোগ খোলা রয়েছে। চলুন আগে জেনে নিই ফরেন্সিক সাইন্সের ব্যাপারে দু এক কথা।

কি এই ফরেন্সিক সাইন্স?

বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় আসল সত্য খতিয়ে দেখার জন্য বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে। খুন হোক বা অগ্নিকাণ্ড, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ছাড়া ঘটনার কিনারা করা সম্ভব হয় না। ঘটনার জট ছাড়াতে যে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ডাক পড়ে এমনটা আমরা টিভিতে ধারাবাহিক বা নিউজ চ্যানেলে হামেশাই দেখে থাকি।

আর যারা গোয়েন্দা গল্প পড়তে আগ্রহী তারা তো ভালোই জানে যে দুঁদে গোয়েন্দাকেও অনেক রহস্যের কিনারা করতে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে হয়।

মূল বিষয় হল বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে অপরাধ বা অপরাধীর শেকড় খুঁজে বের করা। অপরাধের স্পট থেকে যথাযথ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেই সংগৃহীত নমুনা ফরেন্সিক ল্যাবে বিশ্লেষণ করে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই পরীক্ষার ভিত্তিতে তৈরি হয় ফরেন্সিক রিপোর্ট। দক্ষতার সঙ্গে এই কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমাদের দেশে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

ভারতবর্ষে ফরেন্সিক সাইন্স নিয়ে পড়ার সুযোগ সুবিধা কেমন?

আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি রয়েছে মোট ৭টি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরো আছে সর্বমোট ২৯টি। এছাড়া রয়েছে মোবাইল ফরেন্সিক ইউনিট এবং আঞ্চলিক ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি। আরো রয়েছে ডিএনএ প্রোফাইলিং এর জন্য সেন্টার ফর সেলুলার এন্ড মলেকিউলার বায়োলজি।

এত সুযোগ সুবিধার পরেও কিন্তু আমাদের দেশে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। আমাদের দেশে প্রায় ৮০টির বেশি কলেজে ফরেন্সিক সাইন্স পড়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে। সুতরাং এ কথা পরিষ্কার যে ফরেন্সিক সাইন্স নিয়ে পড়লে আপনার জন্য কাজের সুযোগ প্রচুর।

কোন কোন ক্ষেত্রে সুযোগ রয়েছে ফরেন্সিক সাইন্স নিয়ে পড়লে?

  • ফরেন্সিক ডিএনএ এনালিস্ট

কোন অপরাধমূলক ঘটনায় ডিএনএ(DNA) টেস্ট করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে একথা আমরা সকলেই কম বেশি শুনেছি। এই কাজটি করে থাকেন ডিএনএ এনালিস্ট। রহস্যের সুরাহার ক্ষেত্রে ডিএনএ এনালিস্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আপনি যদি ডিএনএ এনালিস্ট হিসেবে কাজ করতে চান তাহলে আপনার রসায়ন, বায়োলজি, জেনেটিক্স, বায়োকেমিস্ট্রি, ক্রিমিনালিটিকস ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তবেই আপনি ডিএনএ এনালিস্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং পরবর্তীতে কাজ করার সুযোগ পাবেন।

  • ডিজিটাল ফরেন্সিক এক্সপার্ট

টেকনোলজির বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে দেশে প্রতিদিন সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল ফরেন্সিক  এক্সপার্টের চাহিদাও দিন কে দিন বাড়ছে। ডিজিটাল ফরেন্সিক এক্সপার্ট হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চাইলে আপনার সাইবার সিকিওরিটি বা ইনফরমেশন টেকনোলজির জ্ঞান এবং ডিগ্রি দুটোই প্রয়োজন। এছাড়া কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে থাকলেও এই পেশা আপনার জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু আপনি যদি এই ফিল্ডে উচ্চ পদস্থ কর্মী হতে চান তাহলে আপনার একটি মাস্টার ডিগ্রি থাকতে হবে।

  • লাই ডিটেক্টর এক্সপার্ট

অনেক সময় আমরা টিভিতে দেখে থাকি কোন একজন অপরাধীকে অনবরত জেরা করা হচ্ছে এবং ততক্ষন পর্যন্ত তাকে ছাড়া হচ্ছে না যতক্ষন না সত্যি ফাঁস করে। যিনি জেরা করেন তার এই পদটিকেই লাই ডিটেক্টর এক্সপার্ট বলা হয়। এমন একটি কাজ আপনি যদি পেশা হিসেবে বেঁছে নিতে চান তাহলে আপনার ডিগ্রি থাকতে হবে সাইকলজি, ক্রিমিনাল জাস্টিস অথবা ল এনফোর্সমেন্টের উপর। অপরাধী আসলে কোনটি সত্যি বলছে এবং কোন তথ্যটি মিথ্যে তা বোঝার জন্য সাইকলজিতে যথেষ্ট দখল থাকাও দরকার।

  • ক্রাইম সিন ইনভেসটিগেটর

নাম থেকেই খানিকটা বোঝা যাচ্ছে যে ঘটনা স্থল খতিয়ে দেখাই এখানে মূল কাজ। কোন দুর্ঘটনা স্থলে গিয়ে সেখানে প্রাথমিক তদন্তের কাজ, তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ করে থাকেন ক্রাইম সিন ইনভেসটিগেটর। এই পেশায় নিযুক্ত হতে চাইলে একটি স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে ক্রিমিনাল জাস্টিস বা সাইন্সে মাস্টার ডিগ্রি থাকলে ভালো হয়।

  • ফরেন্সিক ব্যালিসটিক এক্সপার্ট

আগ্নেয়াস্ত্র খতিয়ে দেখার কাজে যারা নিযুক্ত থাকেন তাদের ফরেন্সিক ব্যালিসটিক এক্সপার্ট বলা হয়। এরা সাধারণত বোমা, গুলি, আগ্নেয়াস্ত্র, গুলির অংশ, গয়লা বারুদের নমুনা সংগ্রহ করা ইত্যাদি কাজ করে থাকেন। এখানেও ক্রিমিনাল প্রশিক্ষণ থাকতে হবে।

এই পদে নিযুক্ত হতে চাইলে আপনার ফরেন্সিক সাইন্সে স্নাতক ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। পাশাপাশি অঙ্ক, রসায়ন, ভৌত বিজ্ঞানের মোট বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। সুতরাং আপনাকে সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করে থাকতে হবে। তবেই আপনি এই পেশা ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবেন।

আসল অপরাধীকে সনাক্ত করতে পুলিসকে সাহায্য করা, ঘটনার কিনারা করার মত পেশা সত্যিই রোমাঞ্চকর। ছোটবেলার বিভিন্ন ক্রাইম শোয়ে দেখা কোন বিশেষ ফরেন্সিক এক্সপার্টের চরিত্র, যার একটি মাত্র রিপোর্ট সমস্ত ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, এমন চরিত্র কখনও না কখনও আমাদের মনকে বিশেষ ভাবে নাড়া দিয়েছে। এমনই একটি পেশায় সত্যিই যদি নিযুক্ত হওয়া যায় তাহলে মন্দ কি।

তথ্য সূত্র– wikipedia

আরো পড়ুন –

জেনে নিন নার্সিং প্রফেশনের খুঁটিনাটি

গর্ভবতী মায়েদের খাবারের তালিকা

পেরেন্টিং কী ?

হোমস্কুলিংয়ে কী আপনার সন্তান কিছু শিখতে পারছে ?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *