কত শখ করে বেছে বেছে একটা দারুণ শেডের রং দেওয়ালের জন্য পছন্দ করেছিলেন, যা আপনার ড্রয়িং রুমে আলাদা মাত্রা যোগ করে। কিন্তু আপনার বাড়ির খুদেটি সেই দেওয়ালটিকেই বেছে নিয়েছে তার আঁকার জায়গা হিসেবে। এই করে আপনার দেওয়ালের শৌখিনতার একদম বারোটা বেজে গেছে। আবার সন্তানের শিল্প সত্বাকে থামিয়ে রাখাও যাচ্ছে না। আঁকার খাতা নয়, দেওয়াল ই তার অধিক প্রিয়। কিন্তু তা বলে কি শৌখিনতাকে একেবারেই বিসর্জন দিয়ে দিতে হবে? শুধু আপনি নন, আপনার মত বহু অভিভাবকরা এই একই সমস্যায় জর্জরিত। তাহলে উপায়ই বা কি? আসুন খুঁজে দেখি
ছবির নিপুনতার দিকে শিশুর ঝোঁক বাড়ান
শিশুরা তাদের কল্পনাকে ছবির মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করার চেষ্টা করে। সুন্দরের প্রতি শিশুর ঝোঁক বেশি। আঁকা যদি নিখুঁত হয় তাতেও শিশু আরো বেশি উৎসাহিত বোধ করে। সেজন্যই খাতায় সে আপনাকে এঁকে দিতে বলে। যাতে সেই নিপুন ছবি সে রং দিয়ে ভরিয়ে তুলতে পারে। কিন্তু খাতায় আর সবটা সীমাবদ্ধ থাকছে কোথায়। বারংবার ই হাত নিশপিশ করছে দেওয়ালে আঁকার জন্য। কিন্তু ছবি নিখুঁত করতে হলে তো তা বারবার মুছে তারপর নিখুঁত করতে হবে। দেওয়ালে তো আর সেটা সম্ভব নয়। এটিই হল ব্রহ্মাস্ত্র। এটি শিশুকে বুঝিয়ে বলুন। নিপুন ছবি আঁকতে হলে দেয়াল নয়, খাতাই সবচেয়ে ভালো। দেখবেন দেয়ালে আঁকার প্রবণতা বেশ কমে আসবে।
●শিশুর অঙ্কন প্রতিভার জন্য হোয়াইট বোর্ড কাজে দিতে পারে
হোয়াইট বোর্ড এক্ষেত্রে বেশ কাজে দিতে পারে। বাড়িতে একটি হোয়াইট বোর্ড আনিয়ে নিন। প্রথম দিকেই যখন লক্ষ্য করছেন শিশুর মধ্যে দেওয়ালে আঁকার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে, সে সময় আনতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। শিশুকে হোয়াইট বোর্ড দেখিয়ে দিয়ে বলুন তার আঁকিবুকি করার এক্তিয়ার এটুকুই। যা কিছু আঁকা এখানেই করতে হবে। শুরুতে শিশুদের যেভাবে শেখানো যায় তারা সবাই শেখে, তেমন ভাবেই অভ্যস্ত হয়। তাই অভ্যাস তৈরি হওয়ার আগেই ব্যবস্থা করুন। আর একান্তই যদি অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে অন্য পন্থা নিন। শিশুরা নকল করতে সব সময়েই পছন্দ করে। তাই সময় পেলে আপনিও চলে যান হোয়াইট বোর্ডে, আঁকিবুকি করুন। দেখাদেখি শিশুও সেখানেই আঁকতে শুরু করবে। নিস্তার পাবে আপনার সাধের সৌখিন দেওয়াল।
আরো পড়ুন – এই গরমে দেহে জলের ঘাটতি মেটাতে খাবারে কি দেবেন শিশুকে
●আঁকায় বাঁধা দিতে যাবেন না, বরং উৎসাহিত করুন
দেওয়ালে আঁকা অপ্রিয়, তাই বলে শিশুর আঁকায় বাঁধা দেবেন না। খেলাধুলার মত আঁকাও শিশুর একটি ভালো লাগার জায়গা। তাকে আরো বেশি উৎসাহিত করুন, তবে একটু স্মার্ট উপায়ে। যেমন ধরুন আপনি শুধু তার খাতাই আঁকা ছবিগুলোকে প্রশংসা করলেন, দেওয়ালের গুলোকে গুরুত্ব দিলেন না। দেওয়ালে যে ছবি ভালো দেখায় না যে কথা তাকে বুঝতে সাহায্য করুন। আবার ধরুন এখন ওয়াল পেইন্টিং বেশ ট্রেন্ডি। তাকে কোন ওয়াল পেইন্টিং দেখান, এভাবে বোঝাতে পারেন যে দেওয়ালে আঁকতে হলে অনেক বেশি করে আঁকা শিখে তবে দেওয়ালে আঁকা যায়। এ ব্যাপারে আপনাকে একটু স্মার্ট উপায়ে এগোতে হবে।
●সহজেই দাগ উঠে যায় এমন রঙ করিয়ে নিতে পারেন
বাজারে এখন বহু নামী দামী কোম্পানির পেইন্ট রয়েছে যার মধ্যে রং পেন্সিলের দাগ বসে না, একটুতেই মুছে যায়। তেমন রং ঘরের দেয়ালেও করিয়ে নিতে পারেন। এছাড়া বাচ্চাদের ছবি আঁকার এমন রং ও পাবেন যা দেয়ালে তেমন দাগ তৈরি করে না, হালকা ঘষাতেই উঠে যায়। যদি এটি সমস্যার পুরোপুরি সমাধান করে না। কারণ হালকা দাগ তাতে থেকে যায়।
আরেকটি উপায় ছবি আঁকার বই। বাজারে অনেক ধরণের ছবি আঁকার বই পাবেন। সেগুলো বাচ্চাকে দিতে পারেন। হোম ওয়ার্কের পর সেই বইয়ে রং করতে দিন। প্রথম থেকেই এমন অভ্যাস তৈরি হলে শিশু আর দেওয়ালে আঁক কাটবে না।
আরো পড়ুন – শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
●পরিষ্কারের সময় খুদেটিকেও সঙ্গে নিন
শিশুকে আঁকার জন্য একটি জায়গা নির্বাচন করে দিয়েছেন। অথচ নির্ধারিত একটি জায়গার বাইরে গিয়ে সে আঁকিবুকি করে ফেলছে। আর রোজ তা আপনাকে পরিষ্কার করতে হচ্ছে। একা পরিষ্কার করতে যাবেন না, সন্তানকে সঙ্গে নিন। এটি তার সামনে শাস্তি হিসেবে প্রদর্শন করবেন না। এটা সন্তানের সামনে দায়িত্ব হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করুন। কাজের পরিণতির দিক থেকে শিশুকে সচেতন করে তুলতে হবে। এটি কখনোই শাস্তি নয়। এটি একটি শিক্ষামূলক দিক। এর ফলে আপনার শিশুকে তাদের কাজের প্রতি আরো বেশি দায়িত্বশীল করে তুলতে সাহায্য করবে।
দেওয়ালে আঁকিবুকি করাকে যদি শুধুই আপনার সন্তানের অভ্যাসগত সমস্যা ভেবে থাকেন তাহলে ভুল করছেন। আসলে এটি শিশুর বিকাশের এমন একটি স্তর যখন তার সঞ্চালনগত ব্যাপারগুলি ঠিক মত বিকাশ লাভ করে না। ফলে সে টেবিলে বসে কাগজে আঁকার সময় অস্বস্তি বোধ করে এবং দেওয়ালে কাজটি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই করতে পারে বলে দেওয়ালই বেছে নেয়। শিশুকে দেওয়ালে আঁকা থেকে বিরত রাখতে নিউটনের গতিসূত্রের মত ফর্মুলা দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে সাধারণ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অনেক বেশি স্মার্টলি বিষয়টি হ্যান্ডেল করতে হবে। শুধুই শিশুকে তিরস্কার, বকাঝকা বা শাস্তি না দিয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজার দিকে আরো বেশি ফোকাস করতে হবে।
১।দেওয়ালের অবস্থা ইতিমধ্যেই শোচনীয়। এখন উপায় কি?
আপাতত ওয়াল স্টিকার দিয়ে কাজ চালাতে পারেন।
২।আঁকা শেখানোর জন্য কোন বয়সে ভর্তি করা যেতে পারে?
শিশুর আগ্রহ থাকলে তিন বছরে দিয়ে দিতে পারেন।
৩।বাচ্চা সমস্ত রং পেন্সিল ভেঙে ফেলছে, এখন কি করবেন?
স্কেচ পেন দিতে পারেন, তবে ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক।
আরো পড়ুন-
বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
বাচ্চাদের মোবাইলের ক্ষতিকারক প্রভাব
অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে বাচ্চাদের কী কী ক্ষতি হতে পারে ?
আপনার সন্তানের হাতের লেখা কি করে ভালো করবেন ?