পরীক্ষা সন্তানের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এই উপায়গুলো দিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারেন

পরীক্ষা সন্তানের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এই উপায়গুলো দিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারেন

একটা সময় ছিল যখন পরীক্ষা বলতে পড়ুয়ারা কেবল হাফ ইয়ারলী আর ফাইনাল পরীক্ষার কথাই জানতো। সে সময় পরীক্ষা নিয়ে এত বেশি মানসিক চাপ বা উদ্বেগ দেখা যেত না। বছরের মাঝামাঝি হাফ ইয়ারলী পরীক্ষা আর শেষে শুধু একখানা ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে দিতে পারলেই কেল্লাফতে।
কিন্তু এখনকার পরীক্ষা ব্যবস্থা অনেক আলাদা। এখানে ছাত্রছাত্রীদের প্রায় সারাবছর ধরেই মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। সারা বছরই বাচ্চারা যাতে পড়াশোনার করে সেজন্য ইউনিট টেস্টের মত পরীক্ষা সরকারি বেসরকারি সব স্কুলেই এখন প্রচলিত। একের পর এক পরীক্ষা পড়ুয়াদের মধ্যে বাড়তি চাপ তৈরি করতে থাকে।
পাশাপাশি অভিভাবকেরা খুব ছোট বয়স থেকেই সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়ে এত বেশি চিন্তিত যে তারা ছোট থেকেই সন্তানের মধ্যেও সেই একই মনোভাব তৈরি করার চেষ্টা করেন। ফলে একটা সময় শিশুরাও ভাবতে শুরু করে পরীক্ষার নম্বরই জীবনের সব কিছুকে নির্ধারিত করে দেয়।

আপনার সন্তানেরও কি এইরকম পরীক্ষার ভীতি রয়েছে? কাজে লাগাতে পারেন এই টিপসগুলি

বেশি চাপ দিলেই ভালো ফল হবে না


সাধারণত পরীক্ষার সময় বা পরীক্ষার আগের বেশ কিছু দিন সময় ধরে পড়ুয়াদের উপর সবচেয়ে বেশি চাপ আসে পরিবারের লোকেদের দিক থেকেই। এখানে অভিভাবক হিসেবে আপনার সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বেশি চাপ দিলেই আপনার সন্তানের রেজাল্ট বেশি ভালো হবে- এমন ধারণা থাকলে এক্ষুণি তার থেকে বেড়িয়ে আসুন। প্রত্যেকেরই একটা নির্দিষ্ট মানসিক ক্ষমতা থাকে এবং সেই অনুযায়ী সে পড়াশোনা করে থাকে। পরীক্ষা নিয়ে সন্তানেরা নিজেরাই কম বেশি উদ্বেগে থাকে। তাদের উপর আলাদা করে চাপ সৃষ্টি করতে যাবেন না। বরং তাদের সমর্থন করুন। যতখানি সম্ভব পরীক্ষার প্রস্তুতি চলাকালীন সময়ে আপনি ইতিবাচক থাকুন এবং সন্তানকেও ইতিবাচক রাখতে চেষ্টা করুন। “একেবারেই পড়াশোনা করে না” এই ধরনের কথা বলে তাদের সমালোচনা করবেন না। একটি মাত্র পরীক্ষায় সব কিছু নির্দিষ্ট করে দেয় না এমনটা বুঝিয়ে বলুন, সন্তানকে আশ্বস্ত করুন। পরীক্ষার পর সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। না পারা কঠিন প্রশ্ন নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবেন না, বরং যেগুলো ভালো ভাবে উত্তর করতে পেরেছে সেগুলো আলোচনা করুন। কঠিন মনে হওয়া অংশগুলি কিভাবে সহজ করে শেখানো যায় সেদিকে নজর দিন। পরবর্তী পরীক্ষায় মনোনিবেশ করতে সন্তানকে প্রেরণা যোগান।

উদ্বেগ কমাতে এক্সারসাইজ, মেডিটেশনের ভালো কাজ দিতে পারে

পরীক্ষার সময় মানসিক চাপ কমাতে যে কোন ধরনের ব্যায়াম খুব উপকারী হতে পারে। মানসিক চাপের উপর ব্যায়াম খুব ভালো কাজ করে। তাই সন্তানের মানসিক চাপের সঙ্গে মোকাবেলা করতে হলে তাকে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিন। ব্যায়াম বলতে কেবল ই যোগাসন নয়। সাইকেলিং , সকালে বা বিকেলে হাঁটা, দৌড়ানো, এরোবিকস, জুম্বা ডান্স ইত্যাদির যে কোন একটি কে পছন্দ মত বেছে নেওয়া যেতে পারে।
মেডিটেশন মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। দেহের ব্যায়ামের পাশাপাশি মনের ব্যায়াম হল মেডিটেশন। পরীক্ষার ভীতির মত মানসিক চাপ কমাতে সন্তানকে মেডিটেশন করতে বলুন। ডিপ ব্রিদিং (Deep Breathing) ও এক্ষেত্রে খুব কার্যকরী হতে পারে।

আরো পড়ুন – বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি

টাইম ম্যানেজমেন্টের দিকে নজর দিন


অনেক ছাত্রছাত্রীই আছে যারা সারা বছর পড়ে না, পরীক্ষার আগে দু মাস পড়ে সিলেবাস শেষ করে থাকে। আপনার সন্তানও যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে অযথাই তাকে বকাবকি করবেন না, তার স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী সন্তানকে পড়তে দিন। কেন এতদিন পড়াশোনা করেনি, কেন দুমাস পড়ছে, এসব নিয়ে বাক্য ব্যয় করবেন না। বরং যে সময় এখন হাতে আছে সেটা কত ভালো ভাবে কাজে লাগানো যায় সেদিকে নজর দিন। ঘুমের সময়ের সঙ্গে কোন রকম কম্প্রোমাইজ একেবারেই নয়। মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো এক্টিভ রাখার জন্য দিনে অন্তত সাত ঘন্টা ঘুম অবশ্যই প্রয়োজন। বেশি বেশি পড়ার জন্য যেন ঘুমের ঘাটতি কোন ভাবেই না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। খাওয়া দাওয়া সময় মত এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়া একান্তই প্রয়োজন। দিনের অনেকটা সময় পড়াশোনা করার জন্য এই ব্যাপারগুলো ঠিক রাখা দরকার।

সন্তানের পরীক্ষার প্রতি যে ভীতি রয়েছে তার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। হতে পারে তার বন্ধুদের রেজাল্ট ভালো হচ্ছে, আর তার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে বলে পরীক্ষা নিয়ে সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। কারণ যা কিছুই হোক না কেন সমাধান তো চাই। পড়াশোনার জন্য তাকে রুটিন বানিয়ে দিন। কোন সাবজেক্ট দিনের কোন সময় পড়বে, কতটা সময় দেওয়া প্রয়োজন সেই সমস্ত কিছু রুটিনের আকারে লিখে দেওয়ালে টাঙিয়ে দিন। তবে একের পর এক বিষয় পড়ে গেলেই হবে না, যথাযথ রিভিশনও করতে হবে। একটি বিষয় পড়ার পর অন্য বিষয় শুরু করার আগে মাঝে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখতে হবে। পড়া মনে রাখার খুব ভালো কৌশল হল পড়ার পর তার একটা জিস্ট বা সারাংশ লিখে ফেলা।
পরীক্ষা যখন একেবারেই দোরগোড়ায় তখন আগের কয়েক বছরের প্রশ্ন থেকে সাজেশন বানিয়ে দিতে পারেন। যদিও সাজেশন দেখে পড়ার অভ্যাস খুব একটা ভালো নয়, কারণ এতে শেখার কাজটাই ভালো ভাবে হয় না। তবে পরীক্ষার সময় সাজেশন কাজে লাগানো যেতেই পারে। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলি কোন ভাবেই বাদ দেওয়া চলবে না।
গল্পের মতো করেও পড়তে বলতে পারেন। শুধু পড়লেই হবে না। পড়ার পর সেই চ্যাপ্টারের প্রশ্ন সল্ভ করতে হবে।
চেষ্টা করুন এই সময় সন্তানকে যে কোন প্রকার ঝামেলা থেকে দূরে রাখতে। বাড়িতে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন।

১) সময় মত সিলেবাস শেষ করতে পারছে না ?

উওর : শুরু থেকেই প্ল্যান মাফিক পড়াশোনা করতে হবে।
আপনি ঠিক করে দিন দৈনন্দিন কতটা অংশ পড়তে হবে এবং সপ্তাহ শেষে আপনি একটা মূল্যায়ন নিন ।

২) মৌখিক পরীক্ষার সময় খুব বেশি ভয় পাচ্ছে, করনীয় কী ?

উওর: বাড়িতে মৌখিক পরীক্ষা দেওয়া প্র্যাকটিস করান।

৩) লিখলে অনেক বেশি মনে থাকে, কিন্তু লিখতে চায় না।

উওর: পড়ার সময় রেকর্ড করে, সেটাই পরে শুনলে ভালো মনে থাকে। এছাড়াও গল্পের ছলে পড়াটি বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বলুন । পরে তাকে সেই গল্পটি বলতে বলুন।

৪)বেশিক্ষণ পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না , করনীয় কী

উওর: আপনি পোমোডোরো(Pomodoro technique) পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। ৩০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিট করে বিশ্রাম ।

আরো পড়ুন-

সন্তানের সফল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে এখন থেকেই কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন । দেখে নিন 6টি কার্যকর উপায়

রাগারাগি হয়েছে বলে সন্তানের সঙ্গে কথা বন্ধ রেখেছেন। বড় ক্ষতি করে ফেলছেন না তো ?

সন্তানের মধ্যে এই লক্ষনগুলি দেখা দিলে এক্ষুনি সচেতন হন

আপনার সন্তান কি কোন বিশেষ প্রতিভার অধিকারী? বুঝবেন কীভাবে?

সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ

১১ টি এমন লাইফ স্কিল যা আপনার সন্তান কে না শেখালেই নয়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *