১১ টি এমন লাইফ স্কিল যা আপনার সন্তান কে না শেখালেই নয়

১১ টি এমন লাইফ স্কিল যা আপনার সন্তান কে না শেখালেই নয়

উন্নত প্রযুক্তির বর্তমান সময়ে বাচ্চারা নতুন নতুন অনেক কিছু আজকাল স্মার্টফোনেই শিখে ফেলছে। কিন্তু ব্যাবহারিক জীবনের বহু প্রয়োজনীয় স্কিল বাচ্চাদের অধরা ই থেকে যাচ্ছে। এমন কিছু লাইফ স্কিল আছে যা আপনার সন্তানের সুন্দর জীবন যাপনের জন্য অপরিহার্য। আপনি যদি চান সন্তান কে একজন দায়িত্বশীল সুনাগরিক তৈরি করতে, তাহলে দেখে নিন এমন কিছু লাইফ স্কিল যা অভিভাবক হিসেবে আপনার সন্তান কে শেখানো আপনার অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

 স্বাস্থ্যবিধি

 

বাচ্চাদের স্বাস্থ্যবিধি শেখানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল। নিজেকে কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে তা ছোটবেলা থেকেই শিশু কে শেখান। তবে বয়সের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি শেখানোর ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন আপনার সন্তান যদি ছোট হয়  তাহলে তাকে ব্রাশ করা, মুখ ধোয়া, স্নান করা, চুল আঁচড়ানো, নখ কাটা এগুলো শেখান। সন্তান যখন বয়ঃসন্ধিতে প্রবেশ করছে তখন তাকে এসবের পাশাপাশি অতিরিক্ত কিছু স্বাস্থ্যবিধি আয়ত্ত করান যা বয়সন্ধিকালের জন্য উপযুক্ত।

ঘর গৃহস্থালির কাজকর্ম শেখান

 

সন্তান কে দিয়ে গৃহস্থলির কাজ করান মানে কখনই শিশুর প্রতি নিষ্ঠুর হওয়া নয়। বাড়ির কাজে সন্তান কে সাহায্য করতে শেখান। এতে আপনার সময় তো বাঁচবেই, পাশাপাশি আপনার সন্তানের কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়বে, শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধা তৈরি হবে। তবে কোন কাজ দেওয়ার পূর্বে বিবেচনা করে নেবেন কাজটি আপনার সন্তানের বয়সের জন্য উপযুক্ত কিনা। বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য তাকে পুরষ্কার দিতে পারেন, তাতে সে আরো বেশি উৎসাহিত বোধ করবে।

আরো পড়ুন আপনার সন্তান ব্রাশ করতে চায় না? কিভাবে তাকে শেখাবেন? 

সন্তান কে সিদ্ধান্ত নিতে দিন

সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতাও যে শেখানোর মত একটি ব্যাপার হতে পারে তা হয়তো বহু অভিভাবক মনেই করেন না। অন্যের দ্বারা পরিচালিত না হয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারাও শিশুর একটি অন্যতম দক্ষতা যা তার পরবর্তী জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সবটাই আপনি ঠিক না করে দিয়ে সন্তান কে সিদ্ধান্ত নিতে দিন। কোন রঙের মোজা আজকে পরতে চাইছে, কোন ফল খেতে ভালো লাগছে, আজকে কোন জামা সে পরতে চায় – এমন ছোটখাটো ব্যাপার গুলোতে তাকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিন।

খাবার তৈরি করা শেখান

 

নিজের প্রয়োজনীয় খাবার টুকু যাতে তৈরি করতে পারে অন্তত সেটুকু রান্না আপনি সন্তান কে অবশ্যই শেখান। মোটামুটি ছয় সাত বছর বয়স হলেই আপনি সন্তান কে খাবার বাসানোর কাজে সহায়তা করতে বলুন। প্রথম দিকে স্যান্ডউইচ বানানো বা কড়াইশুঁটির খোসা ছাড়ানোর মত সহজ কাজগুলো দিন বা আপনি হয়তো বাজার থেকে ফিরেছেন, বাচ্চাকে সব্জিগুলো জায়গা মত গুছিয়ে রাখতে বলুন। কম ধারালো কোন ছুরি দিয়ে ফল কাটতে দিন। এইভাবে ধীরে ধীরে তাকে ইনভল্ভ করুন।

ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা দিন

 

ফার্স্ট এইড একটি বড়ো স্কিল যা প্রত্যেক বাচ্চার জানা দরকার। এমন হতে পারে যখন আপনি সন্তানের কাছে উপস্থিত নেই এবং কোনভাবে সে আঘাত পেয়েছে। অথবা খেলতে গিয়ে তার কোন বন্ধু হয়তো ব্যথা পেয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে কম বেশি জানা থাকলে তা  এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কার্যকর হয়।

যথাযথ কথপোকথন

 

আপনার সন্তানকে শেখান কীভাবে কোন ব্যাক্তির সঙ্গে কথোপকথন করতে হয়। গুরুজন ব্যাক্তি, ছোট ভাইবোন বা বন্ধু-বান্ধব- ব্যাক্তি বিশেষে কীভাবে কথোপকথন হওয়া উচিৎ তা সন্তান কে শেখান। কোন গুরুজনের সঙ্গে কীভাবে বিনয়ী আচরণ করা উচিৎ, বাড়িতে কোন অতিথি এলে তার আচরণ কেমন হবে এসব সন্তানের শেখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আরো পড়ুন আপনার সন্তান কে ঘড়ি দেখে সময় বলা শেখাবেন কীভাবে? 

আত্মরক্ষা করতে শেখান

 

বাচ্চাদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর ক্ষেত্রে আজকাল অভিভাবকেরা অনেক বেশি সচেতন। বিশেষত যাদের কন্যা সন্তান রয়েছে। পিতামাতা হিসেবে আপনি কখনই চান না আপনার সন্তানের জীবনে এমন পরিস্থিতি আসুক যাতে তাকে এই কৌশল কাজে লাগাতে হয়। ইভ টিজিং বা অপহরনের মত বিপদ থেকে

বাঁচতে আত্মরক্ষার উপায় শেখা আপনার সন্তানের জন্য অপরিহার্য।

টাইম ম্যানেজমেন্ট

 

বাচ্চাদের টাইম ম্যানেজমেন্ট শেখানোর কাজটি খুব ছোট থেকেই শুরু করতে হয়। বাচ্চার এই সময়ের অভ্যাস গঠন ই সারাজীবন থেকে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে কতটা সময় দিলে ভালো হয় তা বাচ্চাদের শৈশবেই শেখান। পড়াশোনা, খেলাধুলা, টিভি দেখা, হাতের কাজ – কোনটির জন্য কতটা সময় তার দেওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে বাচ্চাদের স্পষ্ট ধারণা তৈরি করুন। যেমন- প্রতিদিন বিকেলে খেলার জন্য ২ ঘণ্টা, সন্ধেবেলা পড়াশোনার জন্য ৩ ঘণ্টা সময় তোমাকে দিতে হবে। এভাবে তাকে ঠিক করে দিন।

শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন

 

শিশু কে শরীরচর্চায় অভ্যস্ত করুন। তবে খুব বেশি কঠোর হতে যাবেন না। খেয়াল রাখুন সন্তান যাতে প্রয়োজনীয়তা বুঝে আনন্দের সঙ্গে শরীরচর্চা করে। আরো ভালো হয় যদি আপনার সন্তান কে কোন স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন।

পরিবেশ বান্ধব হতে শেখান

 

পরিবেশ সম্পর্কে বাচ্চাকে সচেতন করুন। আপনি তার সঙ্গে প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটান। বিভিন্ন গাছের সঙ্গে পরিচিত করাতে পারেন। বাড়িতে বাগান বা ফুলগাছের টব রাখুন। সন্তান কে প্রতিদিন নিয়ম করে জল দিতে বলুন।

আরো পড়ুন যে কোন ভারতীয় বাবা-মা মেয়েকে বড় করতে গিয়ে যে ভুল করে থাকেন, আপনিও তেমন টা করে ফেলছেন না তো? তাহলে এক্ষুনি সতর্ক হোন 

ইন্টারনেট ব্যাবহারের ক্ষেত্রে সাবধান করুন

 

যথাযথ ব্যাবহার না জানলে ইন্টারনেট ব্যাবহারের সুফল অপেক্ষা কুফল ই বেশি। প্রযুক্তি থেকে এখন বাচ্চাদের দূরে সরিয়ে রাখা এককথায় অসম্ভব। ইন্টারনেটের জন্য কি কি বিপদ হতে পারে তা বুঝিয়ে বলুন। বাচ্চাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাদের ফোন ব্যাবহারের সময় বেধে দিন, সঙ্গে তাদের নেভিগেশনের উপর নজর রাখুন।

আজকাল বেশিরভাগ মা-বাবা ই সন্তান কে শেখানোর পরিবর্তে তাদের জন্য সবকিছু রেডি করে দিতে বেশি আগ্রহী যা বাচ্চার জন্য ভবিষ্যতে সমস্যার তৈরি করবে। অভিভাবক হিসেবে আপনার কর্তব্য সন্তান কে পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করা, পরিস্থিতি কে সন্তানের জন্য নয়। এক্ষেত্রে এই স্কিল গুলি আপনার সন্তান কে তার আগামী দিনের জন্য প্রস্তুত করবে, যাতে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে সহজেই সে এগিয়ে যেতে পারে।

2 thoughts on “১১ টি এমন লাইফ স্কিল যা আপনার সন্তান কে না শেখালেই নয়”

  1. Pingback: হোমস্কুলিং এ আপনার সন্তান সত্যিই কতটা শিখতে পারছে, তা বুঝবেন কি করে? – Parenting

  2. Pingback: এই গরমে দেহে জলের ঘাটতি মেটাতে খাবারে কি দেবেন শিশুকে – Parenting

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *