সন্তান ভুল করলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন । জেনে নিন অভিভাবক হিসেবে আপনার কর্তব্য

সন্তান ভুল করলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন । জেনে নিন অভিভাবক হিসেবে আপনার কর্তব্য


সন্তান ভুল করবে এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাচ্চাদের শুধুমাত্র ভুল ধরিয়ে দিলেই হবে না। সেই ভুল থেকে শিশু যাতে শিক্ষা নিতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সব বাবা মায়েরাই চান সন্তান জীবনে ভালো মানুষ হয়ে উঠুক। আর এজন্য শৈশবের ভুল ভ্রান্তি থেকে তাকে একটু একটু করে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার কাজটি আপনাকে শুরু করতে হবে। সন্তান ভুল করলে শুধুমাত্র তা নিয়ে বকাঝকা করলেই চলবে না, সেই ভুল যাতে সে নিজে থেকেই শুধরে নিতে পারে তার জন্য বাচ্চাদের সুযোগ করে দিতে হবে।
মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। এটি সর্বজনীন সত্যগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। সন্তানের ভুলের জন্য পিতামাতারা বিভিন্ন ভাবে প্রতিক্রিয়া করে থাকেন। কেউ সন্তানের উপর চিৎকার করেন, আবার কেউ বা শাস্তি দেন। কিন্তু এই উপায়গুলির কোনটিই সন্তানের ভালো করে না। সাময়িকভাবে এগুলি কাজে দিচ্ছে বলে হয়তো আপনি মনে করছেন, কিন্তু এর দ্বারা সন্তানের আচরণে পরিবর্তন আনা কিন্তু সম্ভব নয়।

দেখে নিন এমনই কিছু উপায় যা ভবিষ্যতে আপনার সন্তান ভুল করলে আপনি কাজে লাগাতে পারেন-

আগে দেখুন ভুলটি কোন দুর্ঘটনা ছিল কিনা


আপনার খুদের বারবার ভুল করার জন্য আপনিও মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি সে আদৌ ভুলটি ইচ্ছাকৃত করেছে কিনা। বাচ্চারা যে সবসময় উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল কাজ করতে যায় তা কিন্তু নয়। এমন অনেক সময়েই হয় যে তারা আপনাকে বা বাড়ির অন্য কোন সদস্যকে সাহায্য করতে গিয়েই ভুল কাজটি করে ফেলেছে। আবার এমন ও হয় আপনাকে দেখে নকল করে কোন কাজ সে করতে গিয়েছিল এবং ভুল হয়ে গেছে। তাই আগে বিবেচনা করে দেখুন।

আরো পড়ুন – সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা তে কিভাবে সঞ্চয় করবেন?

রাগারাগি একেবারেই চলবে না


ভুল কাজটি ছোট হোক বা বড়, সন্তানের যে কোন ধরনের ভুলভ্রান্তি সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে হলে প্রথমেই আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। আপনি যদি খুব বেশি রাগারাগি করাকেই সুশাসন বলে মেনে নেন তাহলে পরিস্থিতি আরো বেশি জটিল হয়ে পড়তে পারে। ধৈর্য রেখে ঠান্ডা মাথায় সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। জীবনে ভুল হওয়া খুবই স্বাভাবিক, বড়দের ও অনেক সময়তেই ভুল হয়ে থাকে, ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তবেই এগিয়ে যেতে হয় একথা তাকে বুঝিয়ে বলুন। এতে করে সন্তানের কাছে স্বীকারোক্তির বিষয়টি অনেক বেশি সহজ হবে।

সন্তান কি বলতে চাইছে তা মন দিয়ে শুনুন


সচরাচর বাচ্চারা মনের সব কথা বুঝিয়ে বলতে পারে না। তাই সবার আগে বাচ্চার কথা মন দিয়ে শুনুন। কেন তার ভুল কাজটি হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করুন। হতে পারে এমনই কোন কাজ কোথাও সে কোন বড় কাউকে করতে দেখেছে। সত্যি কথা বলার জন্য তাকে বাহবা দিতে ভুলবেন না যেন। আর সত্যি কথা শুনে রাগারাগি করার ভুলটি আপনি কখনোই করতে যাবেন না। এর ফলে শিশু পরের বার থেকে আপনার কাছে সত্যি কথা বলতে ভয় পাবে। তার কথা শুনে যথাযথ বিচার করার চেষ্টা করুন। তারপর পদক্ষেপ নিন।

বকুনি এড়িয়ে চলুন


এক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে বকুনি কিছুটা এড়িয়েই চলার চেষ্টা করতে হবে। যদি গুরুতর ভুল হয়ে গিয়ে থাকে তাহলেও অত্যধিক বকাঝকা, মারধর এসব এড়িয়ে চলুন। সন্তানের মধ্যে যদি এসব নিয়ে ভয়ের উদ্রেক হয় তাহলে তা আগামীতে ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তাই এই দিক দিয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। অত্যধিক বকাবকি বা মারধর করলে তা শিশুর মধ্যে জেদ তৈরি করে দেয়। ফলে সে একগুয়ে হয়ে যায় এবং নিজেকে শুধরে নিতে চায় না।

নিজেদেরকেই সমাধান খুঁজে দিতে বলুন

নিজেদেরকেই সমাধান খুঁজে দিতে বলুন
ভুল যখন করেই ফেলেছে তখন সমস্যার সমাধান ও বাচ্চাদের কেই খুঁজে বের করতে বলুন। তবে শুরুতেই একেবারে একা ছেড়ে দেবেন না। একসঙ্গে বসে আলোচনা করুন। যে ভুল সন্তান নিজের অজান্তেই করে ফেলেছে অথবা তার ভুলের জন্য যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তার সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আপনি সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন। এবার এই সম্ভাব্য সমাধানগুলির মধ্যে থেকে উপযুক্ত সমাধানটি তাকে বেছে নিতে বলুন। একটু উদাহরণ দিয়ে বলা যাক। ধরুন আপনার শিশু তার কোন বন্ধুকে কোনভাবে আঘাত করেছে। তাহলে সেক্ষেত্রে সে তার বন্ধুর কাছে গিয়ে সরি বলতে পারে, তাকে উপহার দিতে পারে কিনা এভাবে বিভিন্ন উপায়গুলি তার কাছে তুলে ধরুন, তারপর তাকে কোন একটি নির্বাচন করে নিজে থেকে ভুল সংশোধন করার সুযোগ করে দিন।

সন্তানের ভুলগুলিকে শুধুই ভুল হিসেবে না দেখে নতুন কিছু শেখার জন্য একেকটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করুন। আমাদেরও তো ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। তাহলে বাচ্চারাই বা এর ব্যতিক্রম হবে কেন? ভুল থেকেই সর্বত্তম শিক্ষাগুলি পাওয়া যায়। ভুলভ্রান্তি জীবনের অপরিহার্য অংশ। খুদেরা চেষ্টা করবে, ভুল করবে, ব্যর্থ হবে এবং শেষ পর্যন্ত শিখে সফলও হবে। কিন্তু আপনাকে তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। সন্তানের করা ভুলের জন্য তাকে লজ্জিত করবেন না বা তিরস্কার করতে যাবেন না। ভুলভ্রান্তি আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা এবং কার্যকর শিক্ষকের ভূমিকা পালন করে।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নোত্তর

১) সন্তান বারংবার একই ভুল করলে কি করার আছে ?

উওর : অস্থির হবেন না, বারবার বুঝিয়ে বলুন তাকে, ভুল থেকে শেখানোর চেষ্টা করুন।

২) বাচ্চা কোন কথাই শোনে না। উপায় বলুন।

উওর: সবসময় রাগারাগি, বিরক্ত প্রকাশ করবেন না। সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন।হয়তো আপনার অনেক সময় লাগবে কিন্তু সে ওই ভুল আর পুনরাবৃত্তি করবেন না ।

৩) বাচ্চা সব সময় এটা সেটা জিনিস ভেঙে ফেলছে।কী করব ?

উওর: বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলার পাশাপাশি নাগালের বাইরে জিনিসপত্র রাখতে হবে ।

আরো পড়ুন

শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো

বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি

শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে

পরীক্ষা সন্তানের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।এই উপায়গুলো দিয়ে তাকে সাহায্য করতে পারেন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *