শৈশবে পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা, কেননা এটি সরাসরি শিশুর বিকাশকে প্রভাবিত করে থাকে। শিশুর শারীরিক বিকাশ হোক বা মানসিক বিকাশ, তা আপনার সঙ্গে শিশুর সম্পর্কের দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত। আবার শিশুর বিকাশই নির্ধারণ করে তার ব্যাক্তিত্ব, আচরণ ইত্যাদি কেমন হবে। সন্তানের সঙ্গে সুন্দর দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করা জরুরী ব্যাপার। কিন্তু বর্তমানে পরিবারে পিতা-মাতা উভয়েই কর্মক্ষেত্রে থাকার ফলে বেশিরভাগ পিতা মাতা এই ব্যাপারে উদাসীন। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক অভিভাবকই তুচ্ছ জ্ঞান করে এসব নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে আগ্রহী নন। কিন্তু কেন এই সম্পর্ক এত বেশি গুরুত্ব রাখে ? চলুন দেখে নেওয়া যাক-
অভিভাবকের সঙ্গে সন্তানের সুন্দর সম্পর্ক কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
সন্তান এবং পিতামাতার সম্পর্ক এমন একটি সম্পর্ক যা সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি প্রস্তুত করে। এটি অন্যতম একটি বন্ধন যা শিশু এবং পিতামাতা উভয়েই উপভোগ করতে পারে। শৈশবে যে সকল শিশু পিতা- মাতার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে ভবিষ্যত জীবনে তারা অন্যান্যদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি তারা কঠিন চাপের মুখোমুখি হলে আবেগ নিয়ন্ত্রণ, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি ক্ষেত্রেও পারদর্শী হয়ে থাকে। শিশুর একজন সুস্থ্য সামাজিক ব্যাক্তি হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য আপনার সঙ্গে তার সুন্দর সম্পর্ক থাকা জরুরী। সন্তানের সঙ্গে আপনি কীভাবে সুন্দর ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করবেন বা বজায় রাখবেন সে সম্পর্কে কিছু ধারণা এখানে আপনি পেতে পারেন।
আপনার সন্তানের মতামত কে সমর্থন করুন
সন্তানের ভালো লাগা মন্দ লাগা গুলোকে সমর্থন করুন, তাকে কিছুটা নিজের মত করেও বেড়ে উঠতে দিন, সব সময় আপনার কথাই শেষ কথা- এমন টা করতে যাবেন না। ছোটদের নির্দেশনার প্রয়োজন আছে, একথা ঠিক। তবে সব সময় শুধুই নির্দেশনা মেনে চললে যে কোন ব্যাপারেই সে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা শিখতে পারবে না।
আরো পড়ুন “শুধু সন্তানের দিকেই ফোকাস করবেন না”: অভিভাবকদের জন্য এমনই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সুধা মূর্তি
সন্তানের প্রতি মনযোগী হয়ে উঠুন
প্রায়শই অভিভাবকদের ব্যাস্ত সময়সূচী থাকে। তবে কখনই তা আপনার ছোট্টটির সঙ্গে সময় না কাটানোর অজুহাত হতে পারে না। শত ব্যাস্ততা থাকলেও কিছুটা সময় অবশ্যই বাচ্চাদের সঙ্গে কাটানোর জন্য তুলে রাখুন। আপনি তার প্রতি মনযোগী, এমন টা তাকে উপলব্ধি করতে দিন। বাড়িতে সন্তানের খেলার সঙ্গী হয়ে উঠুন, একসঙ্গে টিভি দেখুন, গান শুনুন, গল্প বা কবিতা পড়ে শোনাতে পারেন। অথবা সে যখন ছবি আঁকছে, তাকে রঙ করতে সাহায্য করুন। সন্তানের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটান।
শিশুর অনুভুতির দিকগুলিকে গুরুত্ব দিন
সন্তান যদি কোন ব্যাপারে আপনার সঙ্গে তার অনুভুতি শেয়ার করতে চায়, তাহলে অবশ্যই তা শুনুন। তার জায়গায় নিজেকে রেখে অনুভব করার চেষ্টা করুন। হতে পারে আজকে স্কুলে বন্ধুর সঙ্গে কোন কারণে তার ঝগড়া বা মনোমালিন্য হয়েছে। সেক্ষেত্রে তুচ্ছ জ্ঞান করে তা এড়িয়ে যাবেন না, আলোচনা করুন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন।
সন্তানের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করবেন না
আপনি সন্তান কে কতটা ভালোবাসেন, তার প্রতি আপনি কতকখানি যত্নশীল তা আপনার ব্যবহারে প্রকাশ করুন। ভালোবাসা প্রকাশে কার্পণ্য করবেন না। প্রত্যেক পিতামাতার ক্ষেত্রেই এটি একটি অবশ্য করনীয়। আপনি যে সন্তান কে ভালোবাসেন তা তাদের জানতে দিন, বুঝতে দিন। এমনকি ভুল বোঝাবুঝি বা মনোমালিন্য হলেও এটি বজায় রাখুন। সন্তান কে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে নিঃশর্ত ভালোবাসেন।
সম্পর্কে শ্রদ্ধা এবং বিশ্বাস তৈরি করুন
যে কোন সম্পর্কেই বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা অপরিহার্য, পিতামাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কেও তার অন্যথা হয় না। আপনি যখন তাকে কোন কিছু প্রমিস করছেন, তখন যে কোন উপায়েই তা রক্ষা করুন। ধরুন আপনি তাকে কথা দিয়েছেন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে তাকে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে নিয়ে যাবেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সেই কথা রাখতে হবে। আপনি যা বলছেন তা যেন সন্তান বিশ্বাস করতে শেখে।
সন্তান কে জানার চেষ্টা করুন।তার যদি কবিতা পড়তে ভালো লাগে তাহলে তাকে উৎসাহিত করুন, সেরা কবিতার বইগুলি তার হাতে তুলে দিন। সন্রানের অনুভূতি, মতামত বা ভালো লাগার প্রতি সম্মান দেখান।তাহলে সে আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে আরো বেশি উৎসাহ পাবে। কোন বিষয়ে আপনার সন্তান আপনার থেকে ভিন্ন মতামত প্রকাশ করলে তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়বেন না, শুধু আপনিই ঠিক এমন টা জোর দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করতে যাবেন না। বিরক্ত না হয়ে সন্তানের কথাও শুনুন।
সন্তানের রুচি, পছন্দ বা আগ্রহের পরিবর্তন হলে তা গ্রহণ করুন। গতিসূত্রের ন্যায় এমন কোন সূত্র নেই যে কোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে যা প্রয়োগ করা যেতে পারে। প্রতিটি সম্পর্কের ধরণ আলাদা, তাই এমন কোন ফর্মুলা নেই যা যে কোন সম্পর্কেই খাটানো যায়। সন্তানের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলুন, তাকে গুরুত্ব দিন। উষ্ণতা, আদর দিয়ে আগলে রাখার মত অভিব্যাক্তি যে কোন সম্পর্কের মতই পিতামাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক কেও আরো বেশি সুন্দর করে
Pingback: আপনার বাচ্চাদের বনিবনা হচ্ছে না, দেখে নিন ম্যানেজ করার ৯ টি কার্যকরী উপায় – Parenting
Pingback: “শুধু সন্তানের দিকেই ফোকাস করবেন না”: অভিভাবকদের জন্য এমনই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সুধা মূর্তি – P
Pingback: যতক্ষণ টিভি দেখলে শিশুর সৃজনশীলতা প্রভাবিত হতে পারে । আসুন জেনে নেই সত্যি কি দেখে আপনার সন্তানে
Pingback: সন্তানের সফল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে এখন থেকেই কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন । দেখে নিন 6টি কার্যকর উপায় - Parenting
Pingback: গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাদ্য তালিকায় কোন খাবার গুলি রাখতে হবে? - Parenting