বলা হয় গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর মধ্যে স্বর্গীয় সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। কিন্তু এই সময়ে একজন মায়ের বাড়তি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। হবু মায়ের খাদ্যাভ্যাস যেন স্বাস্থ্যকর হয় সেদিকটির প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক। কেননা গর্ভবতী মায়ের খাদ্যাভ্যাসের উপর সন্তানের দৈহিক বিকাশ ও মস্তিষ্কের গঠন নির্ভর করে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় সব রকম খাবার সঠিক পরিমানে আছে কিনা অর্থাৎ সুষম খাবার পাচ্ছে কিনা তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এমন কতগুলি খাবার ডায়েটিশিয়ানরা বিসেসভাবে গর্ভবতী মায়েদের ডায়েটে রাখার জন্য সুপারিশ করে থাকেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক এমন খাবারগুলি যা গর্ভবতী মা ও শিশুর পুষ্টির যোগানের জন্য অপরিহার্য।
১) ডিম
সুষম খাদ্যের কথা বলা হচ্ছে আর ডিম বাদ যাবে, তা কিকরে হয়। প্রোটিন, ভিটামিন ও বিভিন্ন খনিজের ভরপুর ভাণ্ডার ডিম। গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি যোগাতে ডিমের জুরি মেলা ভার। ওমলেট হোক বা সেদ্ধ, যে কোন উপায়েই গর্ভাবস্থায় ডায়েটে ডিম রাখা যেতে পারে। যে সব মায়েরা মাংস খেতে পছন্দ করেন না, তাদের জন্য ডিম একটি খুব ভালো বিকল্প প্রোটিনের উৎস হতে পারে। ডিমের মধ্যে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড কোষ কে মেরামত করতে সক্ষম এবং শিশুর জন্যেও অপরিহার্য।
২) কলা
গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্য তালিকায় রাখার মত সেরা খাবার গুলির মধ্যে অন্যতম একটি হল কলা। কলায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ৬। আর রয়েছে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম। আপনি যদি একজন গর্ভবতী মহিলা হয়ে থাকেন তাহলে দিনে তিনটি বা চারটি কলাও খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় মায়েদের বারবার খিদে পায়। সেক্ষেত্রে কলা একটি সহজ সমাধান হতে পারে। আরো একটু সুস্বাদু ও পুষ্টিকর উপায়ে খেতে চাইলে এক গ্লাস দুধের সঙ্গে একটি কলা ও একটু মধু মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে নিয়ে খেতে পারেন।
৩) রাঙ্গা আলু
বিটা ক্যারোটিন নামের যৌগ গর্ভস্থ শিশুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আর এই বিটা ক্যারোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস রাঙ্গা আলু। এছাড়াও রাঙ্গা আলুতে রয়েছে ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার যার সবকটিই মা এবং শিশু উভয়ের জন্য স্বাস্থ্যের উপকারী। রাঙ্গা আলু সেদ্ধ করে খান। অথবা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মত বানিয়ে নিয়ে খেতে পারেন। বেক করা রাঙ্গা আলুও খাওয়া যেতে পারে। বেক করে খেতে চাইলে কোন সস সঙ্গে রাখতে পারেন। মুখরোচক হবে। এগুলির মধ্যে যে কোন উপায়েই আপনি ডায়েটে রাঙ্গা আলু রাখতে পারেন।
আরো পড়ুন – অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কোন কাজগুলো করবেন আর কোনগুলো করবেন না। জেনে নিন 10টি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
৪) লিভার ওয়েল
গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের ডায়েটে ওমেগা ৩ এবং ফ্যাতি অ্যাসিডের যোগান রাখা দরকার। মাছের লিভার থেকে যে তেল পাওয়া যায় তা ওমেগা ৩ এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। মাছের লিভারের তেল বলতে সাধারণত আমরা কড লিভার অয়েলের সঙ্গেই পরিচিত। এই ধরণের তেল ভিটামিন ডি এর যোগান দেয়। সরাসরি এই তেল আপনি খেতে পারেন। আবার কড লিভার ক্যাপ্সুলের আকারেও বাজারে পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে ডোজ কতটা হবে সে ব্যাপারে আপনার ডাক্তার বা ডায়েটেশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই খান।
৫) পিনাট বাটার বা চিনে বাদামের মাখন
পিনাট বাতারে থাকা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। গর্ভবতী মায়েদের জন্যেও রতি একটি ভালো খাবার। তবে যেহেতু এতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি টাই প্রত্যহ দু চামচের বেশি পিনাট বাটার ডায়েটে রাখবেন না। বারবার খিদের জন্য পিনাট বাটার দিয়ে তৈরি করা স্যান্ডউইচ একটি উপাদেয় খাবার হতে পারে।
৬) ওটমিল
ওটমিল আমাদের সকলের সুস্বাস্থ্যের জন্যই প্রয়োজন। তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি। ওটমিল আমাদের তৎক্ষণাৎ শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এছারা ওটমিল হাই কোলেস্টেরল কে কম করতেও বিশেষ উপকারী। গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের ডায়েটে ওটমিল রাখতে চাইলে খুব সহজ উপায়েই সুস্বাদু ওটমিল বানিয়ে নিতে পারেন। দুধের সঙ্গে খানিকক্ষণ ওটমিল ফুটিয়ে নিয়ে কাজু, কিশমিশ বা চীনেবাদামের মত ড্রাই ফ্রুট দিয়ে ওটমিল পরিবেশন করা যেতে পারে।
৭) সবুজ শাকসবজি
যে কোন পুষ্টিকর খাদ্য তালিকাই সবুজ শাকসবজি ছাড়া অসম্পূর্ণ। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকাতেও প্রচুর পরিমানে টাটকা শাকসবজি ও ফল রাখার পরামর্শ ডাক্তার ও ডায়েটেশিয়ান উভয়েই দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সবুজ শাকসবজি থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া আঁশ জাতীয় ফল ও সবজিও এসময় খাওয়া দরকার। আঁশ জাতীয় খাবারে থাকা ফাইবার হজমের ক্ষেত্রে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যকে দূরে রাখে।
৮) পনির বা চীজ
ক্যালসিয়ামের খুব ভালো একটি উৎস পনির বা চীজ। এসময়ে চর্বিযুক্ত দুধের পরিবর্তে পনির বা চীজ ডায়েটে রাখা যেতে পারে।
গর্ভধারণের জন্য মায়ের শরীরে অধিক চাপ পড়ে। দেহের এই ধকল যেমন সামাল দিতে হয় ঠিক তেমনই গর্ভস্থ শিশুর বিকাশের দিকেও নজর দেওয়া ও আবশ্যক। এসব কারণে গর্ভবতী অবস্থায় যে কোন মায়েরই পুষ্টির চাহিদা অনেকখানি বেড়ে যায়। এর জন্য সব সময় যে বাজার চলতি সাপ্লিমেণ্টই আপনাকে খেতে হবে তেমন নয়। খাদ্য তালিকার পরিবর্তন করেই সেই বাড়তি পুষ্টির চাহিদা অনায়াসেই পূরণ করা যেতে পারে।
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ অ্যাটিক্যালটি লেখা হয়েছে পাঠকের তথ্যের জন্য, কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
আরো পড়ুন:-
Good Handwriting:শিশুর হাতের লেখা সুন্দর করতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাদ্য তালিকায় কোন খাবার গুলি রাখতে হবে?
গর্ভবতী মায়েদের শোওয়ার সঠিক ধরন কেমন হওয়া উচিৎ। কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?