Parenting tips:শিশুর বয়স দু-বছর ও হয়নি, এখনই স্কুলে পাঠাতে চাইছেন। কোথাও ভুল করে ফেলছেন না তো?

আজকাল বাচ্চাদের খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে ভর্তি করানোর একটা প্রবণতা বাবা মায়েদের মধ্যে তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। অভিভাবকদের মধ্যে এই ট্রেন্ড তৈরি হওয়ার একটি কারণ এখনকার দিনে মা ও বাবা উভয়েই কর্মক্ষেত্রে যুক্ত। ফলে তারা চাইছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে স্কুলে দিয়ে দিতে পারলেই হয়। পাশাপাশি যে শিশুদের বাবা এবং মা দুজনে কর্মরত নয়, তাদের ও খুব ছোট বয়সে স্কুলে ভর্তি করা হচ্ছে। কেন? কারণ সেই অভিভাবকেরা ভাবছেন এখনই বাচ্চাকে স্কুলে না দিতে পারলে অন্য বাচ্চাদের তুলনায় তাদের সন্তান পিছিয়ে পড়বে।

কোন কোন অভিভাবকেরা ভাবেন যত তাড়াতাড়ি শিশু স্কুলে যাওয়া শুরু করবে ততই তা সন্তানের জন্য ভালো হবে। আবার কেউ হয়তো কেবলমাত্র শিশুদের স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করার জন্য তাদের স্কুলে ভর্তি করে দেন।
প্রি-স্কুল বা প্লে-স্কুলের বলেও যে কোন একটা বস্তু রয়েছে এ কথা আপনাদের ছোটবেলায় কজনের জানা ছিল? এখন বাচ্চাদের প্লে-স্কুলে না পাঠালে তাদের শিক্ষারম্ভ হয় না। এমনকি নামীদামী স্কুলগুলোতে এখন প্রি-স্কুল শেষ না করে এডমিশন পাওয়া ও দুষ্কর।
কিন্তু পেছনে যে কারণই থাকুক না কেন, এত ছোট বয়সে স্কুলে যাওয়া কি আদৌ শিশুর জন্য ভালো হচ্ছে? নাকি আপনার অজান্তেই শিশুর কোন ক্ষতি হচ্ছে? বিস্তারিত আলোচনা রইল এই আর্টিকেলে –

মানসিক চাপের কারণে হয়ে দাঁড়াতে পারে


সন্তানের ভালো ভেবে খুব ছোট বয়সেই তাকে স্কুলে দিতে চাইছেন। কিন্তু এতে করে শিশুর মনের উপরেই চাপ বাড়তে পারে। স্কুলের অন্যান্য বাচ্চাদের বয়স আপনার সন্তানের থেকে বেশি হলে তাদের বিকাশের দিক থেকেও আপনার ছোট্টটির তুলনায় কিন্তু এগিয়ে আছে। আর এটিই আপনার সন্তানের মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যখন সে দেখছে যে প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই অথচ তার সহপাঠীরা খুব সহজেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছে, তখন শিশুর মধ্যে হীনমন্যতা দেখা দিতে শুরু করে। এই সময়ে বয়সের কম ফারাকের জন্য শিশুর মানসিক বিকাশের বেশ খানিকটা তফাৎ হতে পারে। তাই খুব কম বয়সে স্কুলে দিতে চাইলে এই দিকটি বিবেচনা করুন।

শিশুর ভাষার বিকাশ কতখানি হয়েছে


আজকাল বাবা মায়েরা দেড় বছর বয়সেও বাচ্চাকে স্কুলে দেওয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু আগে দেখুন তার ভাষার বিকাশ কতখানি হয়েছে? শিশু মনের ভাব বোঝানোর জন্য কি তা যথেষ্ট? আপনি হয়তো বাড়িতে আকার ইঙ্গিতে শিশুর মনের ভাব বুঝে ফেলতে পারছেন। কিন্তু স্কুলের পরিবেশ তো আলাদা। সেখানে তাকে নিজেকে বুঝিয়ে বলতে হবে। এর জন্য শিশুর ভাষার নূন্যতম বিকাশ প্রয়োজন। শিশুকে স্কুলে দেওয়ার আগে সেই অবধি অপেক্ষা করতে হবে।

শিশুকে যথাযথ টয়লেট ট্রেনিং আয়ত্ত করতে দিন


এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা শিশুকে স্কুলে পাঠানোর আগে তাকে আয়ত্ত করানোর প্রয়োজন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল তার টয়লেট ট্রেনিং। প্রত্যেক বাড়িতেই বাচ্চাদের টয়লেট ট্রেনিং এ অভ্যস্ত করানো হয়ে থাকে। আর এই টয়লেটের সুঅভ্যাস তৈরীতেও শিশুর ন্যূনতম একটি বিকাশের স্তর পর্যন্ত পৌঁছনোর প্রয়োজন আছে। যতদিন না পর্যন্ত শিশুকে টয়লেট ট্রেনিং দিতে পারছেন, ততদিন স্কুলে পাঠানোর কথা ভাববেন না। কারণ প্রথমত তা শিশুর জন্য সমস্যার হবে। তার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সে যদি বলতে না পারে তাহলে শিশুর ক্ষেত্রে তা স্বাস্থ্যের সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

সন্তান আপনাদের ছেড়ে থাকতে পারে কি না ভেবে দেখুন


শিশুরা জন্মের পর থেকে বেশিরভাগ সময় আপনাদের ই কাছে পায়। ফলে কেবল আপনাদের সঙ্গই তাদের ভালো লাগে। শিশুর পুরো পৃথিবী জুড়েই কেবল আপনারা। স্কুলে শিশুর প্রথম সামাজিকীকরণ শুরু হয়। বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রথম দরজা খোলা হয় স্কুলের মধ্যে দিয়েই।
অনেক বাচ্চা এমন হয় যাদের মা বাবা ছাড়াও অন্যদের সঙ্গে সহজেই ভাব হয়ে যায়। কিন্তু অনেক শিশুর কাছে আবার বাইরের কারোর উপস্থিতি বা অচেনা কারোর সান্নিধ্য পছন্দের নয়। আপনাকে ছাড়া শিশু বেশ কিছুটা সময় থাকতে পারে কি না তা দেখতে হবে। শিশু যদি আপনাদের ছেড়ে থাকতে না চায় তাহলে এখনও তাকে স্কুলে দেওয়ার সময় হয়নি। আরেকটু ধৈর্য ধরুন। বাইরের লোকজনের সঙ্গে সে একটু মেলামেশা করতে শিখুক। তারপর তাকে স্কুলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিন।

এই বিষয়গুলো তো রয়েছেই, পাশাপাশি আপনাকে আর যে বিষয়টি লক্ষ্য করতে হবে তা হল শিশুর মানসিক প্রস্তুতি কতখানি। আপনি হয়তো শিশুকে তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাড়াতাড়ি স্কুলে পাঠাতে চাইছেন। কিন্তু এত ছোট বয়সে শিশু আদৌ মানসিক ভাবে কি প্রস্তুত স্কুলে যাওয়ার জন্য? উত্তর হল “না” । আসলেই এত ছোট বয়সের বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকে না। বাড়ির বাইরে সম্পূর্ণ অন্য একটা পরিবেশ, যেখানে বাড়ির কোন সদস্যই তার সঙ্গে থাকবে না তেমন একটা জায়গায় সে যেতে চায় না। অজানা জায়গা বা অচেনা কোন ব্যক্তির প্রতি ভয় হওয়া এর একটি কারণ হতে পারে। কেননা বাচ্চারা এখন আর বাড়ির পাশের বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সুযোগ তেমন একটা পায় না। খুদেরা আগে তাদের পাশের বাড়ির বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে খেলতেই বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারত। সেই সুযোগ এখন অমিল। তাই শিশুকে খুব তাড়াতাড়ি স্কুলে দেওয়ার আগে ভালো ভাবে বিচার বিবেচনা করে নিন।

FAQ

১) কিছুতেই টয়লেট ট্রেনিং দেওয়া যাচ্ছে না। কি করবো?

উওর: আরেকটু সময় দিন, অধৈর্য হবেন না।

২) কোন প্লে স্কুল ভালো বুঝবো কিভাবে?

উওর: দূরত্ব, খ্যাতি, খরচ, ছাত্ৰ-শিক্ষক অনুপাত এগুলো বিবেচনা করে দেখুন।

৩) কম ফি যুক্ত প্লে স্কুল কি একেবারেই ভালো নয়?

উওর: টাকার অঙ্কই সব নয়, কি ধরনের সিলেবাস বা কো ক্যারিকুলার এক্টিভিটি করানো হয় সেসব খোঁজ নিন।

আরো পড়ুন:-

Good Handwriting:শিশুর হাতের লেখা সুন্দর করতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি

সবে মাত্র শিশুকে স্কুলে দিয়েছেন।বাড়িতে এগুলো শেখাতে ভুলবেন না।

খাবার সময়তেই যত ঝামেলা। শিশুর সঠিক পুষ্টি নিয়ে চিন্তিত। দেখে নিন কিছু সহজ টোটকা

শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *