রাগারাগি হয়েছে বলে সন্তানের সঙ্গে কথা বন্ধ রেখেছেন। বড় ক্ষতি করে ফেলছেন না তো ?

রাগারাগি হয়েছে বলে সন্তানের সঙ্গে কথা বন্ধ রেখেছেন। বড় ক্ষতি করে ফেলছেন না তো ?

মতের অমিল হয়েছে বলে সন্তানের সঙ্গে কথাই বন্ধ। সন্তানকে আপনি তিরস্কার করতে চান নি। তাই এই অহিংস উপায়টিকেই বেছে নিয়েছেন। সন্তানকে শাস্তি দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় বলে  আপনার মনে হয়েছে।

কথা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যাপারটি আসলে কতখানি ক্ষতি করে ফেলছে জানেন কি ?

কোন কারণবশত সন্তানের সঙ্গে বাবা মায়ের মনোমালিন্য হয়েছে বলে বাবা মা তার সঙ্গে কথা বন্ধ করে তাকে কোথাও না কোথাও শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এর ফলে আপনার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে জানতেন কি ? নীরব থেকে এইভাবে শাস্তি দেওয়া যে কোন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেই প্রভাব ফেলে। আর যদি প্রশ্ন আসে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের তাহলে এই নীরবতার প্রভাব আরো বেশি। কেননা বাবা মা ই কিন্তু শিশুর নির্ভরতার একমাত্র জায়গা। এই মৌনতার সময়ে সে যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে না পারে তাহলে তাকে কতখানি প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে কখনও ভেবে দেখেছেন সে কথা ?

● আপনিও কি সন্তানের সঙ্গে এই আচরণগুলো করে থাকেন ? মিলিয়ে নিন তো একবার

অনেক সময় আমরা কোন আপনজনের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেই তাকে  তার ভুল বোঝানোর জন্য। কখনও কখনও তা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যে আমরা তার উপস্থিতিকেই উপেক্ষা করি। শাস্তি হিসেবে অনেকেই এই পন্থা বেছে নেন।

কোন একটি ব্যাপারে সন্তান আপনার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি। আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। তার সঙ্গে যে কোন ধরনের কথাবার্তা বা আলোচনা আপনি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। সে কোন প্রশ্ন করলে আপনি উত্তর দিচ্ছেন না। বা উত্তর দিলেও তাতে নম্রতা নেই, আচরণে রুক্ষভাব রেখে কথার উত্তর দিচ্ছেন। এগুলোর সঙ্গে আপনি যদি নিজের আচরণের মিল খুঁজে পান তাহলে আপনার সচেতন হওয়ার সময় উপস্থিত হয়েছে।

আরো পড়ুন –আপনার সন্তান কে ঘড়ি দেখে সময় বলা শেখাবেন কীভাবে?

কিন্তু বাবা মায়েরা কেন এমন আচরণ করেন সন্তানের সঙ্গে?

সন্তানের সঙ্গে বাবা মায়ের কথা বন্ধ করে দেওয়ার পেছনে অনেক রকম কারণই থাকতে পারে। সন্তানের সঙ্গে কোন বিষয়ে বাক বিতণ্ডা হয়েছে। আপনার মতামত সন্তানের একেবারে বিপক্ষে। আবার সন্তানও “না” শুনতে নারাজ। নিজের পক্ষে সে একের পর এক যুক্তি দেখিয়েই যাচ্ছে। অথচ আপনিও নিজের জায়গায় অনড়। এখন আপনি দেখলেন তার সঙ্গে কোন রকম দ্বন্দ তর্কে আর না গিয়ে বরং যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয়।

আবার এমন অনেক বাবা মা রয়েছেন যারা সন্তানের উপর খুব বেশি কঠোর। তাদের কর্তৃত্বের বাইরে গিয়ে সন্তানের কোন কিছুকেই তারা মেনে নিতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতেও সন্তানের সঙ্গে কথা বন্ধ করে দেন বাবা মায়ের।

সন্তান হয়তো এমন কিছু করে ফেলেছে বা করতে চাইছে যাতে আপনার মনে হয়েছে কাজটি আপনার সম্মানের জন্য হানিকর। সেই কারণে আপনি কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছেন।

তবে কারণ যা কিছুই হোক না কেন, নেপথ্যের আসল কারণটি কিন্তু এটাই যে অভিভাবক হিসেবে আপনারাও মানসিকভাবে অপরিণত।

কেননা এর সুদূরপ্রসারী কুপ্রভাব সম্পর্কেই আপনি ওয়াকিবহাল নন।

কথা বন্ধ করে দেওয়া আসলে সন্তানের উপর কি ধরনের কুপ্রভাব ফেলে ?

টডলার (১-২ বছরের শিশু) হোক কিংবা টিনেজার, বিকাশের যে কোন পর্যায়েই সন্তান থাকুক না কেন আপনার সহযোগিতা তার সব সময় প্রয়োজন। আপনার সঙ্গে শিশুর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে সাহায্যের পথটিও বন্ধ। মনে রাখতে হবে এতে করে শিশুর যে কোন সমস্যাই কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আপনার আচরণে যদি এমন ভাব ফুটে ওঠে যে আপনি ইচ্ছা করেই সন্তানকে উপেক্ষা করছেন, তাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন তাহলে সন্তানের মধ্যে আপনার এই আচরণ নিরাপত্তাহীনতার মনোভাব তৈরি করবে। বারবারই সে আপনার সঙ্গে কথা বলে সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে, আর বারবারই আপনি তাকে প্রত্যাখ্যান করছেন। এমন চলতে থাকলে সন্তান নিজেকে পরিত্যক্ত ভাবতে শুরু করে, একাকিত্ব অনুভব করে। এগুলো আপনি না বুঝলে কে বুঝবে বলুন? সন্তানের কাছে সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা তো আপনারাই। সন্তানের সঙ্গে আপনার আচরণ যেমন হওয়া উচিৎ তা তো হচ্ছে না। বরং তার ঠিক উল্টোটাই হচ্ছে যদি আপনি কথা বন্ধ করে দেন। গবেষণা থেকে জানা যায় যে ব্যক্তি একাধিক বার প্রত্যাখ্যাত হন তার আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান অন্যদের তুলনায় কম। তাই বলে বাইরের জগতের প্রত্যাখ্যান তো আর আটকে রাখা যাবে না। কিন্তু আপনাদের থেকে যদি এমন ব্যবহার অন্তত না আসে তাহলে তা সন্তানের জন্য কল্যাণকর হয়।

১) কথা না বলা যদি কার্যকর হয় তাহলেও কি এটি বর্জন করা আবশ্যক ?

উত্তরঃ ভবিষ্যতে এটি কি কুপ্রভাব ফেলতে পারে সে কথা ভুলে গেলে চলবে না।

২) সন্তানকে শিক্ষা দিতে এভাবেই অভ্যস্ত হলে কি করণীয় ?

উত্তরঃ একদিনে সব পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়, ধীরে ধীরে বদল আনার চেষ্টা করুন।

৩) মনোমালিন্য হলে সন্তানের দিক থেকেই আগে কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কি করা যেতে পারে?

উত্তরঃ আপনারা আগে কথা শুরু করতে এগিয়ে যান।

৪) মনোমালিন্য হলে সন্তান যে কারোর সঙ্গেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কি করবো?

উত্তরঃ কথাবার্তা বন্ধ করা কোন সমাধান নয়, মনোমালিন্য  হলে তার মীমাংসা করতে হবে, এ কথা সন্তানকে বোঝান।

আজকের লেখাটি আপনার ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন ।আর এরকম লেখার আপডেট সবসময় পাওয়ার জন্য যুক্ত থাকুন আমাদের হোটাসঅ্যাপ গ্রুপের সাথে ।

আরো পড়ুন –

সন্তানের সফল ভবিষতের জন্য আপনার করনীয় কী ?

শিশুর হাতের লেখার সুন্দর করার অসাধারন কিছু টিপস ?

সন্তানের সংঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতটা জরুরি

আপনি কি করে আদর্শ পিতামাতা হয়ে উঠবেন ?

আপনার সন্তানকে কিভাবে যৌন শিক্ষা দেওয়া শুরু করবেন ?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *