গুড পেরেন্টিং এর 10 টি নীতি

গুড পেরেন্টিং এর 10 টি নীতি

কোন কোন নীতি অনুসরণ করলে আপনার পেরেন্টিং কে আদর্শ বলে বিবেচনা করা যাবে বলে আপনার মনে হয়? সেই অর্থে পেরেন্টিং এর কোন হার্ড এন্ড ফাস্ট রুল নির্ধারণ করা যায় না। কখনই তা গ্রহণযোগ্য নয়। সন্তানের প্রকৃতি, বয়স, তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পেরেন্টিং এর ধরন নির্বাচন করাই বাঞ্ছনীয়। প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রে একই পেরেন্টিং ফলপ্রসূ হবে একথা বলে সমীচীন নয়। যে ধরনের পেরেন্টিং একটি শিশুর জন্য ভালো প্রমানিত হয়েছে, অপর একটি শিশুর ক্ষেত্রে তা কার্যকর নাও হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ নীতির কথা বলা যেতে পারে যা মোটামুটি সকল শিশুর ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা যেতে পারে। আসুন দেখে নেওয়া যাক এমন দশটি নীতি যা আপনার পেরেন্টিং এ অবশ্য পালনীয়।

   সন্তানের রোল মডেল হয়ে উঠুন

আপনার সন্তানের কাছে আদর্শ হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। আপনার শিশুর মধ্যে যে সকল গুণের প্রকাশ করতে চাইছেন, সবার আগে নিজের মধ্যে সেই সব গুণাবলীর বিকাশ ঘটান। অনুকরণ শিশুর অন্যতম ধর্ম। সন্তান কে ইতিবাচক উপায়ে শেখানোর ক্ষেত্রে তার এই অনুকরণধর্মীতা কাজে লাগান।

  • আপনার আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকুন

কোন কোন আচরণ শিশুর সামনে বর্জনীয় সে সম্পর্কে আপনি নিজে সচেতন থাকুন এবং বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের ও অবগত করুন। নতুবা সন্তানের মধ্যেও সেগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পাবে। যেমন, আপনি যদি চিৎকার করে কথার উত্তর দেন তাহলে সন্তানের কাছে সেই আচরনই স্বাভাবিক মনে হবে সেও একই আচরণ আয়ত্ত করবে।

  • ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন

আদর্শ অভিভাবকত্ব কখনই একদিনের কাজ নয়। সময়ের সঙ্গে পেরেন্টিং এর বিভিন্ন ধাপ আপনাকে বিচিত্র পরিস্থিতির সম্মুখীন করবে। বিচলিত না হয়ে যে কোন পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অপরিহার্য।

আরো পড়ুন কীভাবে আপনার সন্তানের মধ্যে সমস্যা সমাধানের স্কিল গড়ে তুলবেন? 

  • সন্তানের ভরসার জায়গা হয়ে উঠুন

মানসিক ভাবে সন্তান কে সমর্থন করুন। তার মানসিক চাহিদা জানার চেষ্টা করুন, দূরত্ব কমিয়ে এনে নিজেকে তার একমাত্র ভরসার জায়গায় পরিনত করুন, যে কোন সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতেই আপনি যেন তার পাশে থাকতে পারেন। যতখানি সম্ভব সহজ সম্পর্ক বজায় রাখুন। মনে রাখবেন বন্ধুত্বই সব সম্পর্কের শেষ কথা। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব বজায় রাখুন। তার জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।

  • নিয়মানুবর্তিতা শেখান

শৈশবেই শিশুকে নিয়মানুবর্তিতা শেখান, নতুবা পরবর্তী জীবনে তা আয়ত্ত করা শিশুর কাছে সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।সন্তানের মেনে চলার জন্য কিছু নিয়ম-নীতি সুনির্দিষ্ট করুন এবং নিজেরাও তা মেনে চলুন। আপনার থেকে পাওয়া শৃঙ্খলাবোধ শিশুর পরবর্তী জীবনের ছাঁচ তৈরি করবে।

  • অত্যধিক প্রশ্রয় দেওয়া এড়িয়ে চলুন

সন্তানের সমস্ত দাবী মেনে নেবেন না। শিশুর যে কোন চাহিদা কেই তৎক্ষণাৎ পূরণ করা কখনই সন্তানের প্রতি আপনার ভালবাসার মানদণ্ড হতে পারে না। শিশুর  যে কোন আবদার মেনে নিলে তা শিশুর মধ্যে ক্রমেই আরো  বেশি লালসার জন্ম দেয়। অত্যধিক প্রাচুর্যে সন্তান কে বড়ো না করে সন্তান কে কখনও কখনও অভাব বুঝতে দিন।

  • সন্তানের সঙ্গে অতিরিক্ত কঠোর হবেন না

মানুষ মাত্রেই ভুল হয়। আপনার সন্তানের ছোটখাটো ভুলের জন্য তাকে অত্যধিক বকাবকি করতে যাবেন না। আপনার অতিরিক্ত কঠোর মনোভাব তার মধ্যে হীনমন্যতার জন্ম দিতে পারে।

তার সঙ্গে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলুন, এমন আচরণের কারন জানতে চান, তার জবাবদিহি ও মনোযোগ সহকারে শুনুন, কেন তার আচরণ ভুল এবং কোন আচরণ এক্ষেত্রে উপযুক্ত তা বুঝিয়ে বলুন।

  • মারধর করা থেকে বিরত থাকুন

যতখানি সম্ভব শিশুকে মারধর করা এড়িয়ে চলুন। এর সুফল অপেক্ষা কুফলই বেশি। নিজেকে অত্যধিক সক্রিয় অভিভাবক প্রমাণ করতে গিয়ে কখনই আপনার সন্তান কে লঘু পাপে গুরু শাস্তি দিতে যাবেন না। শারীরিক শাস্তি শিশুর মধ্যে আরো বেশি করে ক্ষোভের সঞ্চার করে, মানসিক বিকাশ কে ব্যাহত করে।

  • প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার পেরেন্টিং স্টাইল পরিবর্তন করুন

কোন একটি পেরেন্টিং স্টাইল কে কখনই আদর্শ বলে বিবেচনা করা যায় না। আপনার অভিভাবকত্ব আপনার ব্যাক্তিত্ব, মূল্যবোধ, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ইত্যাদি অনেকগুলি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। আবার আপনার সন্তানের চাহিদা, তার মানসিক বিকাশের স্তর, তার পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা, আগ্রহ ইত্যাদির উপরেও নির্ভর করে থাকে। সদ্যজাত শিশুর প্রতি আপনার পেরেন্টিং এবং বয়ঃসন্ধি সময়ের সন্তানের প্রতি আপনার পেরেন্টিং কখনই এক হওয়ার কথা নয়।  

আরো পড়ুন পেরেন্টিং স্টাইলের চারটি ধরণ এবং আপনার শিশুর উপর এগুলির প্রভাবঃ 

সন্তান কে মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ঠ তৈরি করুন

 

অর্থ, প্রতিষ্ঠা, প্রতিপত্তির দৌড়ে সামিল হতে গিয়ে মানবিকতার দিকটি ক্রমেই নিজের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে। সন্তানের স্কিল ডেভেলপ করার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়ার কথা আজ আমারা একেবারেই ভুলতে বসেছি। শিক্ষাঙ্গন কেবল ই ডিগ্রী অর্জনের কারখানা নয়, শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম আঙিনা হল শিক্ষাঙ্গন। সমাজস্থ অন্যান্য ব্যাক্তি বর্গের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের শিক্ষা শিশু বিদ্যালয় থেকেই লাভ করে থাকে। সে কারনেই বিদ্যালয় কে সমাজের ক্ষুদ্র সংস্করণ বলা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও দেখা যায় সহপাঠীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করার চাইতে তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা কেই বর্তমানে অধিক উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সন্তান কে ভালো মানুষ তৈরি করুন। ভালো মানুষ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। সুন্দর সমাজ গঠনের স্বার্থে আপনার সন্তান কে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা অপরিহার্য।