কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে? কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা?

কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা?

পরিবর্তিত সামাজিক কাঠামো এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে  বয়স বা লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কেউ যৌন লাঞ্ছনা বা হয়রানির শিকার হতে পারে। অন্তত এই বিপদ থেকে শিশুকে রক্ষা করার স্বার্থে যৌন শিক্ষা দেওয়া অপরিহার্য হয়ে দেখা দিয়েছে ।

কেন জরুরী যৌন শিক্ষা?

“যৌনতা” শব্দটি উচ্চারণের সময় আমাদের সকলেরই গলার স্বর একটু নীচু হয়ে আসে। উন্নত দেশগুলোতে সেক্স বা যৌনতা শব্দটি যত স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ব্যবহার করা হয় আমাদের দেশে কিন্তু তা একেবারেই নয়। আমরাই যৌনতা কে যেন ট্যাবু বানিয়ে রেখেছি। আর নিষিদ্ধ বিষয়ে মানুষের কৌতূহল সব সময়েই বেশি। যৌনতা নিয়ে এই কৌতূহল বশতই ছোট ছেলেমেয়েরা নানা ভুল করে বসে, আবার কখনও কখনও অপরাধের শিকার হয়। আপনার সন্তানকে সুরক্ষিত রাখতে চাইলে যৌন শিক্ষা দেওয়ার কথা ভাবুন।

●যৌন শিক্ষা কি?

যৌন শিক্ষার কথা বললে বহু বাবা মায়েরাই তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আসলে তারা এমন একটি ধারণা পুষে রেখেছেন যে যৌন শিক্ষা মানে শুধুই সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়া বোঝানো। আবার অনেকেই মনে করেন যৌন শিক্ষা দেওয়া সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানবে।

যৌনশিক্ষা আসলে কি সেটি আগে জেনে নেওয়া যাক।

যৌনতা, প্রজনন স্বাস্থ্য, গর্ভাবস্থা, গর্ভপাত, যৌনরোগ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ শারীরিক মিলন, মানসিক সম্পর্ক, দায়িত্ব, যৌন সম্মতি ইত্যাদি নানা বিষয়ের সমন্বয় হল যৌন শিক্ষা। সন্তানকে নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতন করা এবং সবচেয়ে জরুরী হল তাকে ভালো স্পর্শ এবং খারাপ স্পর্শের মধ্যে পার্থক্য করতে শেখানোর জন্য যৌন শিক্ষা অবশ্যই দিতে হবে।

● কোন বয়স থেকে শুরু করা যেতে পারে যৌন শিক্ষা?

শুনে আশ্চর্য হবেন যে শিশুর দু বছর বয়স হলেই তাকে যৌন শিক্ষা দেওয়া আপনি শুরু করতে পারেন। মনে রাখতে হবে যৌন শিক্ষা তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলার মত কোন শিক্ষা নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। একদিনেই আপনি সন্তানকে সমস্ত যৌন শিক্ষা দিয়ে ফেলতে পারবেন না। শিশুকে বয়সের উপযোগী যৌন শিক্ষা দেওয়া শুরু করতে হবে। এখন দু বছর বয়সে নিশ্চই আপনি সন্তানকে ইন্টারকোর্স সম্পর্কে বোঝাতে শুরু করতে পারেন না। কিন্তু এই সময় তাদের যৌনাঙ্গের সঠিক নাম বলা দিয়ে শুরু করতে পারেন। দেহের অন্যান্য অংশের যেমন সঠিক নাম বলে থাকেন ঠিক তেমনই যৌনাঙ্গেরও সঠিক নাম বলতে শেখান। আবার ধরুন কমবেশি সব বাচ্চারাই জিজ্ঞাসা করে থাকে সে কোথা থেকে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে তাকে যতখানি সম্ভব সহজ ভাষায় বাস্তব বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করবেন।

● কিভাবে যৌনতা বা শরীর সম্পর্কে কথা বলবেন?

প্রথমেই আপনার নিজের  সঙ্কোচ কাটিয়ে ওঠার প্রয়োজন আছে। সন্তান কিছু জিজ্ঞাসা করলে তাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেবেন না। আপনি কথা বলার সময় যৌনাঙ্গ বা পুরুষাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে সঙ্কোচ বোধ করলে কথোপকথন এগোবে না। আপনি আগে থেকেই ভেবে রাখুন কিভাবে কথা শুরু করবেন, সন্তানের দিক থেকে কি কি সম্ভাব্য প্রশ্ন আসতে পারে, কোন প্রশ্নের জবাবে আপনি কি বলবেন, এভাবে মোটামুটি সাজিয়ে নিন। কথোপকথন এমন ভাবে করবেন যাতে শিশু বুঝতে পারে যে যৌনতা বা যৌনাঙ্গ সম্পর্কে কথাবার্তা খাওয়া ঘুমের মতই অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।

● ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে তথ্য দিন

সাধারণত বারো থেকে চোদ্দ বছর বয়সের মধ্যেই একজন কিশোরী ঋতুমতী হতে শুরু করে বা কখনও কখনও তার থেকেও কম বয়সে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সময় একজন কিশোরী প্রথম ঋতুমতী হয় তখন ঋতুস্রাব সম্পর্কিত কোন তথ্যই তার কাছে থাকে না। ফলে তাদের ভয়ে মুষড়ে পড়তে দেখা যায়। ছেলেদের দাঁড়ি গোফ গজানোর মতই মেয়েদের ঋতুস্রাবের বিষয়টিও অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রাকৃতিক একটি ঘটনা। তাই বয়সন্ধিকালে পৌঁছনোর আগেই কন্যা সন্তানকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জানিয়ে রাখুন। তবে শুধুই মেয়েরা নয় ছেলেদেরও এই বিষয়ে বলতে ভুলবেন না। অনেক সময় দেখা যায় ঋতুস্রাবের মত অতি সাধারণ ঘটনা ঠাট্টা তামাশার বিষয় হয়ে ওঠে। তা যাতে না হয় সেজন্য ছেলে সন্তানকেও ঋতুস্রাব সম্পর্কে জানিয়ে দিন।

এগুলোর সঙ্গেই সন্তানকে সেক্সুয়ালিটির বিভিন্ন ওরিয়েন্টেশন সম্পর্কেও জানান। আমাদের সমাজব্যবস্থা হেটেরোসেক্সুয়ালিটি কেই শুধু মান্যতা দিয়ে থাকে এবং অন্যান্য ওরিয়েন্টেশনগুলোকে প্রায় নস্যাৎ করে দিয়েছে। আমাদের সমাজে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষেরা যেমন রয়েছেন ঠিক তেমনই হোমোসেক্সুয়ালিটিও অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি বিষয়। লিঙ্গ সম্পর্কে সন্তানের মধ্যে যাতে কোন রকম খারাপ ভাবনা তৈরি হতে না পারে অভিভাবক হিসেবে সেদিকে নজর দেওয়ার দায়িত্ব কিন্তু সম্পূর্ণটাই আপনার উপরে বর্তায়। সংবিধান যাই বলুক না কেন সমাজস্থ মানুষের ভাবনা উন্নত না হলে কখনোই একটি লিঙ্গ বৈষম্যহীন সময় গড়ে তোলা সম্ভব নয়। আর এই বৈষম্যহীন সমাজ তৈরির প্রথম পদক্ষেপটাই হোক না অভিভাবকের।

১।কোন বয়স থেকে যৌন শিক্ষা দেওয়া উচিত?

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিশুর মধ্যে জিজ্ঞাসা আসলে তার যথাযথ উত্তর দিয়ে যৌন শিক্ষা শুরু করতে পারেন।

২।শিশুর প্রতি কোন নিকট আত্মীয়ের স্পর্শ
সন্দেহজনক মনে হলে কি করণীয়?

শিশুকে আড়াল করুন, তাকে এমনভাবে বোঝান যাতে সে নিজে থেকেই দূরে সরে আসে।

৩।বাড়ির যে কোন সদস্য কি শিশুকে স্নান  করাতে পারে?

সিদ্ধান্ত আপনার, তবে বাবা মা করালেই ভালো।

৪।শিশুর কোন বয়স থেকে অন্যদের সামনে শিশুর জামাকাপড় বদলানো উচিৎ নয়?

মোটামুটি তিন বছর।

আরো পড়ুন –

বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে। হঠাৎ কিছু গিলে ফেললে কি করবেন?

স্কুলে যাওয়ার সময় বাচ্চা কেঁদে ভাসাচ্ছে । জেনে নিন আপনার করণীয় কি?

শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে

এই গরমে দেহে জলের ঘাটতি মেটাতে খাবারে কি দেবেন শিশুকে

1 thought on “কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা?”

  1. Pingback: শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো - Parenting

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *