প্রত্যাশা অনুযায়ী সন্তান উচ্চ মাধ্যমিকে ফল করতে পারেনি, তাহলে এখন কি করণীয়?
স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা। উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় সন্তানের আগামীর যাত্রা। কোন বিষয়ে অনার্স পাবে, কোন কলেজে কত নম্বরের উপরে পেলে ভর্তি হওয়া সম্ভব তার বেশির ভাগটাই নির্ভর করে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্টের উপর। এসব কারণেই পড়ুয়াদের মনের উপর একটা চাপ তৈরি হয়। বাবা মায়েরাও কিছু কম দুশ্চিন্তায় থাকেন না। একবছর ধরে তার প্রস্তুতি পর্ব চলতে থাকে। কিন্তু কোন কারণ বশত সন্তান আশানুরূপ ফলাফল পরীক্ষায় করে উঠতে পারেনি। পরীক্ষা আমাদের হাতের নাগালে থাকলেও তার ফলাফল কি হবে এর পুরোটাই তো আর আমরা নির্ধারণ করতে পারি না। আর তাছাড়া সব সময় সব কিছু আমাদের প্ল্যান মাফিক চলবে এমন টাও নয়। সন্তানের এই বিপর্যয়ের সময় আপনি কি করে তার পাশে থাকতে পারেন ভেবে দেখেছেন কি?
একে তো সে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল করতে পারেনি। বন্ধু বান্ধব তার তুলনায় ভালো ফলাফল করেছে। এসবের একটা হতাশা তো রয়েছেই। তার উপর পাড়া- প্রতিবেশী, আত্মীয়- স্বজনের বারংবার ফোন বা অহেতুক কৌতূহল তাদের আরো বেশি বিচলিত করে তোলে। রেজাল্ট যেমনই হোক না কেন, মাথায় রাখতে হবে এ সময় সন্তানের পাশে থাকাটাই আপনার প্রাথমিক কাজ। আসুন জেনে নিই কিভাবে সন্তানের পাশে থাকবেন –
উচ্চ মাধ্যমিকে ফল (West Bengal Higher Secondary Result)
● আগে নিজেকে বোঝান
প্রথমেই যেটা বলার, আপনি নিজে হতাশায় ভুগবেন না। অথবা হতাশ হলেও সন্তানের সামনে তা প্রকাশ করবেন না। দেখুন একটা পরীক্ষার নম্বর জীবনের সব কিছু ঠিক করে দিতে পারে না, এ কথা আগে আপনাকে বুঝতে হবে। এমন অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা বোর্ডের পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করা সত্ত্বেও সেভাবে জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে নি। আবার এমন অনেকের উদাহরণ ও পাবেন যারা মাঝারি ফলাফল করেও সাফল্যের চূড়ায় নিজেদের নিয়ে গেছে। এগুলো কথার কথা নয়। বাস্তবের মাটিতে এমন ভুড়ি ভুড়ি উদাহরণ আপনি দেখতে পাবেন। কিছু নম্বর কখনই শেষ কথা বলতে পারে না। যে কথা উপলব্ধি করুন। আপনি উপলব্ধি করলে তবেই তো সন্তানকে বোঝাতে পারবেন। তাই সবার আগে নিজেকে বোঝানো জরুরী।
আরো পড়ুন সন্তানের মূল্যবোধ গঠনে আপনার কর্তব্য
● অত্যধিক প্রত্যাশা একেবারেই নয়
সব ছাত্রছাত্রীদের মেধা কিন্তু সমান হয় না। সুতরাং কেউ 90 শতাংশ পেয়েছে বলেই যে আপনার সন্তানকেও পেতেই হবে, নাহলে আর কারোর কাছে মুখ দেখানো যাবে না, এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। সবার একটা নিজস্ব ক্ষমতা থাকে। আপনার সন্তানেরও তাই। যদি বরাবর স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় সে 70 থেকে 75 শতাংশ নম্বর নিয়ে পাস করে থাকে তাহলে এই পরীক্ষায় হঠাৎ করেই আপনি 95 শতাংশ আশা করতে পারেন না। “অনেক আগে থেকেই বলেছিলাম ভালো করে পড়াশোনা করতে” , “এই বছর টা বাকি সব বাদ দিয়ে আরেকটু খাটলেই হয়ে যেত” – এই ধরনের কথা এড়িয়ে চলুন। এসব বলা খুব সহজ, আসলে কাজটা কঠিন। নিজেকে সেই জায়গায় রেখে দেখুন। হঠাৎ করেই কোন কিছুতে আমূল পরিবর্তন চলে আসবে এমন আশা করলে আপনিই ভুল করছেন।
●এ সময় আত্মীয়- স্বজনদের যতখানি সম্ভব এড়িয়ে চলুন
আত্মীয়- স্বজনেরা এ সময় খোঁজ খবর নিতে ফোন করবেই। সেটা আপনি আর আটকাতে পারবেন না। তবে তাদের সামনে আপনি নিজেকে হতাশ দেখবেন না। তাদের অযাচিত কথাবার্তা উপেক্ষা করুন। “না তেমন ভালো করতে পারেনি” এই ধরনের মন্তব্য করবেন না। বরং বলুন একটা পরীক্ষাই জীবনের শেষ কথা নয়, নিজের চেষ্টায় সন্তান যতখানি করতে পেরেছে তাতে আপনি খুশি, আগামীতে আরো ভালো করবে বলে আপনারা আশাবাদী। যতটা সম্ভব কথোপকথন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন। যার ছেলে ডাক্তারি পড়ছে তেমন কোন আত্মীয় ফোন করেছে বলে তাকে কি বলবেন এসব ভেবে নিজে বিব্রত বোধ করবেন না। সমাজে সব পেশারই গুরুত্ব রয়েছে- একথা মাথায় রাখতে হবে।
আরো পড়ুন সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
● অন্যের সঙ্গে তুলনা নয়
বন্ধুদের মধ্যে কে কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে, কে হাইয়েস্ট পেল আর কে কত কম পেল এসব সন্তানকে জিজ্ঞাসা করবেন না। বাড়িতে এই ধরনের আলোচনাও বন্ধ রাখুন। এগুলোর ফলে সন্তান আরো বেশি মুষড়ে পড়ে। বরং আগামীতে তার জন্য কি কি পথ খোলা আছে সেসব আলোচনা আরো বেশি করে করুন। কোন কোন বিষয়ে কি কি সুযোগ সুবিধা আছে, কোন বিষয় নিয়ে পড়লে কি ধরনের কর্মক্ষেত্রে সে যেতে পারে সেসব বলুন। কম নম্বর পেয়েছে বলে যে পছন্দের বিষয় একেবারেই পাবে না তা কিন্তু নয়। হয়তো তাকে এক্ষেত্রে অন্য কলেজ বেছে নিতে হতে পারে। নম্বর কম হয়েছে বলে অমুক কলেজে অমুক বিষয়ে চান্স পাওয়া যাবে না বলে সবাই মিলে গেল গেল রব তুলে দেবেন না যেন। ফলাফল যা হওয়ার হয়ে গেছে, এর পরের ভালোর কথা চিন্তা করে সন্তাকে উৎসাহিত জুগিয়ে যেতে হবে।
একটা পরীক্ষার ফলাফল একটু এদিক ওদিক হয়েছে বলে গোটা পরিবারের সবাই মিলে হাহাকার করতে শুরু করে দেবেন না। যথা সম্ভব স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে চেষ্টা করুন ।
আরো পড়ুনঃ-
বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
এই গরমে দেহে জলের ঘাটতি মেটাতে খাবারে কি দেবেন শিশুকে
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
পেরেন্টিং স্টাইলের 4 টি ধরণ এবং আপনার শিশুর উপর এগুলির প্রভাব