এমন বহু ব্যক্তিত্ব আছে যারা অন্যদের অনুপ্রানিত করার জন্যই জন্মগ্রহন করেছেন। সুধা মূর্তি তাদেরই একজন। বই লেখা হোক বা সমাজের জন্য কাজ- তার জীবনের গল্প আমাদের জে কারোর জন্যই একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে।
কিন্তু কে এই সুধা মূর্তি?
তিনি বর্তমানে ভারতের অন্যতম আইটি কোম্পানি ইনফোসিসের চেয়ারপার্সন। অন্যদিকে তিনি একজন লেখক ও সমাজসেবী যার কাজ সারা দেশে স্বীকৃত।
সুধা মূর্তির পরামর্শ আমাদের অনেক বেশি প্রভাবিত করে ।
বর্তমান প্রজন্মের কাছে সুধা মূর্তি অন্যতম একজন ইন্সপিরেশন। তাঁর গল্পে আমরা সকলেই নিজেদের জীবনেরও কিছু প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই, যার ফলে আমরা নিজেদের সঙ্গে অনেক বেশি কানেক্ট করতে পারি।
সুধা মূর্তির দেওয়া পেরেন্টিং কৌশল নতুন প্রজন্মের বাবা মায়েদের কাছে খুবই গ্রহণযোগ্য এবং পছন্দের। আধুনিক বাবা মায়েরা তাদের সন্তান প্রতিপালনে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার মেলবন্ধনকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আর সুধা মূর্তির পেরেন্টিং কৌশলে এই উভয় ই রয়েছে।
-
সন্তান কেও নিজস্ব স্পেস দেওয়া জরুরী
যে কোন সম্পর্কের মতই পিতামাতার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কেও স্পেস থাকা জরুরী। একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধার জায়গা বজায় রাখার জন্য এই স্পেস খুবই প্রয়োজন। এই ব্যাপারে সুধা মূর্তি বলেছেন, যেহেতু পিতামাতা এবং সন্তান দুটি ভিন্ন প্রজন্ম তাই তাদের মতামত ভিন্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক, কিন্তু কখনই দুই প্রজন্মের মতামতের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়া উচিৎ নয়। পিতামাতার কর্তব্য সন্তানের সিদ্ধান্ত, পছন্দ, অপছন্দ কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে দেখা। প্রায়শই দেখা যায় সন্তানের ভালো ভাবতে গিয়ে পিতামাতা তাদের উপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। এমন তা না হওয়াই সমীচীন। এ প্রসঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি আপনার সন্তান কোন একটি জিনিস খেতে না চায়, তাহলে তাকে জোর করবেন না, কিছুক্ষণের জন্য তাকে একা ছেড়ে দিন, তাঁর যখন খুশি তাকে খেতে দিন। সবসময় সন্তান কে বাধ্য করবেন না, তাকেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিন।
আরো পড়ুন সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
-
উদাহরণ স্থাপন করুন
আপনাদের অভ্যাস সবসময় শিশুর মধ্যে ঠেলে দেবেন না, বাচ্চাকে সবসময় অনুসরণ করতে বাধ্য করবেন না, তাকে অনুকরণ করার সুযোগ দিন। এই ব্যাপারে সুধা মূর্তি বাবা মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, বাচ্চারা স্পঞ্জের ন্যায়। বাবা- মা অথবা বাড়ির অন্য সদস্যদের আচরণ দেখে এবং তা অনুকরণ করার মাধ্যমে বাচ্চাদের অভ্যাস গঠন হয়ে থাকে। তাই এমন কোন আচরণ করা থেকে আপনি বিরত থাকুন যা আপনি আপনার শিশুর মধ্যে দেখতে চাইছেন না। বাবা- মা যা করতে বলে শিশুরা তা করে না, বরং বাবা মাকে যা করতে দেখে শিশুরা তাই অনুকরণ করে। তিনি আরো বলেন, আপনি যদি চান আপনার সন্তান সন্ধেবেলা পড়তে বসুক, তাহলে সেই সময় আপনাকেও একটি বই খুলে বসতে হবে।
-
নিজেরা সরল জীবনযাপন করুন এবং তাতে শিশুকেও অভ্যস্ত করুন
জীবনযাপনে সরলতা এবং উচ্চ চিন্তাভাবনার জন্য সুধা মূর্তি সর্বদাই অনুকরণীয়। এই প্রজন্মের পিতামাতাদের ও তিনি অভিভাবকত্বের ব্যাপারে সরল জীবনযাপন অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
একটা সময় ছিল যখন বাড়িতে দামী গাড়ী থাকলেও বাচ্চাকে স্কুলে যেতে হত অন্যান্য সাধারণ বাচ্চাদের মতই, যাতে অন্যদের কাছে নিজেকে বড়ো করার প্রবণতা বাচ্চার মধ্যে না আসে। এখনকার চিত্র এর সম্পূর্ণ উল্টো। সেকাল আর একালের পিতামাতার মূল্যবোধের মধ্যে ফারাক অনেক।
তাই পিতামাতাদের প্রতি সুধা মূর্তি সরলতা কে অনুসরণ করার উপদেশই দিয়েছেন।
-
বাচ্চাকে শেয়ার করতে শেখান
বাচ্চাদের শেয়ারিং শেখানো খুবই প্রয়োজন। সুধা মূর্তির দেওয়া বিখ্যাত উপদেশ গুলির মধ্যে অন্যতম একটিতে তিনি তার ছেলের জন্মদিনের ঘটনা আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি তার ছেলেকে জন্মদিনে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে বড় অনুষ্ঠান করার পরিবর্তে ছোট জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে বেঁচে যাওয়া অর্থ তাদের ড্রাইভারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দান করার পরামর্শ দেন। প্রথম দিকে সমস্যা হলেও পরে তার ছেলে এই প্রস্তাবে রাজি হন। এই ঘ্নটনার বহু বছর কেটে যাওয়ার পর তার ছেলে নিজের স্কলারশিপের টাকা সেসব সৈনিকদের সন্তানের লেখাপড়ার জন্য খরচ করতে দিয়েছিলেন যারা ২০০১ সালে ভারতের সংসদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন আপনার সন্তান কে ঘড়ি দেখে সময় বলা শেখাবেন কীভাবে?
-
অভিভাবক কে শুধুমাত্র যে সন্তানের উপরেই ফোকাস করতে হবে এমন নয়
পেরেন্টিং এ সন্তানের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন অবশ্যই আছে, তবে তাঁর মানে কখনই এই নয় যে সমস্ত ফোকাস কেবল সন্তানের উপরেই দিতে হবে। আপনার অতিরিক্ত মনোযোগ শিশুর নিজের মত বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। তাঁর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি সমস্ত বাবা মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেছেন তারা যেন সন্তানের প্রতি প্রয়োজনের অধিক মনোযোগ না দেন। তিনি আরো বলে, আপনার সন্তানকে সাঁতার, পিয়ানো, বক্তৃতা, ক্রিকেট, আর্ট ইত্যাদি সবেতেই যে ওস্তাদ হতে হবে এমন নয়। তাদের চিন্তা করতে দিন, ভাবতে দিন, অবসর যাপন করতে দিন, নিজস্ব গতিতে তাদের বেড়ে ওঠার সুযোগ দিন।
-
ছোটখাটো সিদ্ধান্ত সন্তানকেও নিতে দিন
কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার সন্তানদের ও সেই আলোচনায় যুক্ত করুন। এমনই সুধা মূর্তি বাবা মায়েদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন। প্রথম দিকে শিশুকে বিভিন্ন বিকল্প সিদ্ধান্তগুলি সম্পর্কে বলুন, সেগুলির সুবিধা অসুবিধা কি কি হতে পারে তাঁর ধারণা দিন, এবং সবশেষে এগুলির মধ্যে থেকে তাদের একটি বেছে নিতে বলুন। এটি আপনার সন্তানের মধ্যে যে কোন পরিস্থিতিকে আরো ভালো ভাবে বোঝার ক্ষমতা তৈরি করবে।
Pingback: কীভাবে আপনার সন্তানের মধ্যে সমস্যা সমাধানের স্কিল গড়ে তুলবেন? – Parenting
Pingback: সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ – Parenting