আপনি যদি একের বেশি সন্তানের অভিভাবক হয়ে থাকেন তাহলে ঝগড়া মারামারি অথবা বনিবনা না হওয়া হয়তো আপনার বাড়ির একটি চেনা চিত্র ।
অথচ আপনাদের একটু সচেতনতা থেকেই এই সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসতে পারেন।
ছোটবেলা থেকেই যদি ভাই বোনের মধ্যে ভালো বন্ডিং তৈরি হয় তাহলে সমস্যাগুলো অনেকটাই এড়ানো যেতে পারে। সবার আগে আপনাকে বুঝতে হবে কেন সন্তানদের মধ্যে যে কোন ছোট ব্যাপারেই ফাইট শুরু হয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র পছন্দের টিভি চ্যানেলের জন্যই কি তারা সব সময় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছে? নাকি এর পেছনে আরো বড়ো কোন কারন রয়েছে? সবার আগে তা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। হতে পারে আপনার সন্তান মনে করে মা আমার চেয়ে ভাই কে বেশি ভালবাসে। তবে কারন যা কিছুই হোক না কেন, অভিভাবক হিসেবে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে তাদের মধ্যে যাতে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আসুন দেখে নেওয়া যাক আপনি কিভাবে এই পরিস্থিতি ম্যানেজ করবেন-
⋅ আপনি নিজে শান্ত থাকুন
যদি দেখেন বাচ্চারা খুব বেশি ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েছে, ধরুন তারা টিভির রিমোর্ট নিয়ে মারামারি করছে, তাহলে সেই পরিস্থিতিতে রেগে না গিয়ে নিজেকে শান্ত রাখুন। আপনি মাথা গরম করলে বাচ্চারাও একইভাবে প্রতিক্রিয়া করবে।
-
বাড়িতে সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করুন
কোন একজন সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া বা বাচ্চাদের মধ্যে তুলনা করা এড়িয়ে চলুন। নিজেরা একে অপরকে কাজে সহয়তা করুন যাতে বাচ্চারা তা দেখে শিখতে পারে। তাদের নিজেদের এমন কাজ দিন যাতে তারা একে অপরকে সাহায্য করতে পারে। যেমন ধরুন আপনি বাচ্চাদের বইএর সেলফ তাদের একসঙ্গে গুছিয়ে ফেলতে বলতে পারেন।
-
সন্তানের নিজস্বতা কে সমর্থন করুন
যদি আপনি বাচ্চাদের সমান গুরুত্ব দেন তাহলে তাদের মধ্যে লড়াই করার প্রবণতা কিছুটা হলেও কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সন্তানের ব্যাক্তিত্বে নিজস্বতা থাকবে – এটাই স্বাভাবিক। সন্তানদের পছন্দ অপছন্দ আলাদা হতেই পারে। একজন খেলাধুলা হয়তো পছন্দ করছে, অন্যজন বই পড়তে ভালোবাসে। “তুমি কেন দিদির মত বই পড় না” এমন কখনই বলতে যাবেন না। তাদের নিজস্বতা কে সমর্থন করুন।
আরো পড়ুন – সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
-
বাচ্চাদের প্রতি নিরপেক্ষ থাকুন
অভিভাবক হিসেবে সন্তানদের প্রতি নিরপেক্ষ থাকা অত্যন্ত জরুরী। নিরপেক্ষতা মানে এমন নয় যে সব সময় তাদের সব কিছু সমান সমান দিতে হবে। যেমন ধরুন আপনি বাচ্চাদের খেলনা কিনে দেবেন। সেক্ষেত্রে দুজন কে একই খেলনা দিতে হবে এমনটা নয়। তাদের পছন্দ অপছন্দ, বয়স এগুলো বিচার করে দিন।
-
শাস্তি যদি দিতেই হয়, সবার সামনে দেবেন না
কখনও কখনও বাচ্চারা এমন কিছু করে ফেলে যেখানে শাস্তি দেওয়া ছাড়া আপনার কাছে কোন উপায় অবশিষ্ট থাকে না। সেক্ষেত্রে কখনই সবার সামনে শাস্তি দিতে যাবেন না। এতে অপর সন্তানের উপর ক্ষোভ বাড়তে পারে। ফলে দ্বন্দ্ব কম হওয়ার পরিবর্তে তা আরো বেশি বাড়তে পারে।
আরো পড়ুন সন্তানের মূল্যবোধ গঠনে আপনার কর্তব্যঃ
-
উভয়ের কথাই মন দিয়ে শুনুন
ভাইবোনের মধ্যে লড়াই হলে তাদের দু পক্ষের কথাই কিন্তু আপনাকে শুনতে হবে। প্রত্যেক বার কেউ একজন দোষ করছে বলে আপনি তার কথা অগ্রাহ্য করবেন না। অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয় বাবা মায়ের কাছে শুধু নালিশ জানাতে পারলেই বাচ্চারা শান্ত হয় এবং সমস্যা মিটে যায়। বাচ্চাদের মধ্যে কোন একজনের যদি প্রত্যেকবার ই এমন মনে হয় আপনি তার দিক থেকে বিচার করছেন না বা পক্ষপাতিত্ব করছেন তাহলে ক্ষোভ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে এবং দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে।
-
বাচ্চাদের থেকেই সমাধান তুলে আনার চেষ্টা করুন
বাচ্চাদের থেকেই জানতে চান কিভাবে লড়াইয়ের সমাধান তারা খুশি হবে। তাদের কথা অনুযায়ী আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে বলছি না। তবে এভাবে আপনি একটা ধারণা পাবেন তারা কিভাবে সমাধান চাইছে এবং সেই মত মীমাংসা করার চেষ্টা করুন।
-
বাড়িতে রুটিন তৈরি করুন
আপনার বাড়িতে যদি পারিবারিক রুটিন থাকে তাহলে বাচ্চাদের মধ্যে মতবিরোধ ম্যানেজ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। কে কি কাজ করবে, কখন কার পছন্দের কার্টুন চলবে, তার একতা রুটিন আপনি তৈরি করে দিন। একজন ৬টা থেকে টিভি দেখলে অন্যজন ৭টা থেকে দেখবে। এভাবে যে কোন কিছুই পালা করে করতে দিন।
আরো পড়ুন ১১ টি এমন লাইফ স্কিল যা আপনার সন্তান কে না শেখালেই নয়
-
বাচ্চাদের ভালো আচরণের জন্য তাদের প্রশংসা করুন
আপনার সন্তানেরা কখন ভালো আচরণ করছে সেদিকে নজর রাখুন এবং তাদের এই ভালো আচরণের জন্য প্রশংসা করুন। তাদের ভালো আচরণগুলি আবার করার সম্ভাবনা বাড়বে যদি আপনি স্পষ্টভাবে তাদের বলেন কোন কোন আচরণ তারা ভালো করছে। যেমন- তোমরা আজকে দুজনে মিলে ভালো বাগান পরিচর্যা করেছ, তাই রাতে তোমাদের একটি ভালো সিনেমা দেখাবো।
এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ থাকার ফলে বাচ্চাদের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ও অনেক কম। ফলে এই দ্বন্দ্ব আরো ঘন ঘন হতে পারে।
ইন্টারনেট, ইলেকট্রনিক গ্যাজেট যেহেতু বর্তমান সংস্কৃতির একটি বড় অংশ, তাই এসব উপায়ে সন্তানদের বিরোধ কম করতে পারেন। যেমন বিভিন্ন ইন্টেরাক্টিভ গেম তাদের খেলতে দিতে পারেন, একসঙ্গে কোন পাজল সমাধান করতে দিন।
তবে যে কোন অজুহাতে ই হোক না কেন ভাইবোনেরা কিন্তু লড়াই করবেই। এক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন থেকে সমস্যা সমাধানের জন্য সচেষ্ট হতে হবে এবং তাদের ও এই কৌশল শেখানোর চেষ্টা করতে হবে।
Pingback: শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে – Parenting