বই পড়া এমন ই একটি সু অভ্যাস যা শুধু বাচ্চাদের মেধা বাড়িয়ে তোলে না, তাদের ব্যাক্তিত্ব গঠন করতেও অনেক খানি ভূমিকা নেয়। এটি বাচ্চাদের চিন্তাশক্তি কে যেমন উন্নত করে তেমন ই তাদের সৃজনশীলতা কেও বাড়াতে সাহায্য করে। এই কারনেই বিশেষজ্ঞরা শিশুদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাসের উপর জোর দিয়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমানের বাস্তব চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। সমীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় ২০ থেকে ৪০ শতাংশ শিশু দ্রুত অ সঠিকভাবে পড়তে সক্ষম নয় যা খুবই হতাশাজনক।
কল্পনাশক্তি বৃদ্ধির অন্যতম সেরা উপায় হল বই পড়া। আমরা যত বেশি পড়ি, ততই আমাদের ধারনার দিগন্ত উন্মুক্ত হতে থাকে।
আপনি যদি চান আপনার সন্তানের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাহলে সবার আগে তাদের মধ্যে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করুন। পাশাপাশি তাকে বই পরায় পারদর্শী হয়ে উঠতে সাহায্য করুন। এই আর্টিকেলে রইল এমন কতকগুলি টিপস যা অনুসরণ করে আপনি বাচ্চার মধ্যে সুন্দর পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে পারবেন।
-
আপনিও শিশুর সঙ্গে বই পড়ায় যোগ দিন
ভালো অভ্যাস হোক বা মন্দ, মনে রাখবেন একেবারে শুরুতে বাচ্চার যা কিছুই শিখুক না কেন তা কিন্তু পরিবারের সদস্যদের থেকেই শেখে। যদি বই পড়ার অভ্যাসের কথা আসে সেক্ষেত্রেও নীতির পরিবর্তন হয় না। আপনি যদি সন্তানের মধ্যে এই অভ্যাস গড়ে তুলতে চান, তাহলে অভিভাবক হিসাবে আপনার প্রথম কাজ আপনার নিজের মধ্যে সেই একই অভ্যাস গড়ে তোলা। প্রাথমিক ধাপে আপনিও বাচ্চাদের সঙ্গে বই নিয়ে বসুন। কোন গল্প বা কবিতা আপনি আগে তাকে পড়ে শোনান এবং তারপর সন্তানকেও পড়তে বলুন। এই ধরণের অনুশীলন আপনার সন্তানের মধ্যে শব্দের ভাণ্ডার তৈরিতে এবং ভাষার দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
-
বাচ্চাদের পড়ার জন্য পর্যাপ্ত বই রাখুন
বই পড়ার সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে হলে ভালো ভালো বই তাঁর হাতে আপনি তুলে দিন। বইয়ের সেলফ এ ভালো বই রাখুন। যখন ই পর্যাপ্ত বই তাদের হাতের কাছে থাকবে, নিজে থেকেই তারা আরো বেশি বই পড়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে। তবে এমন বই বেঁছে নেবেন না যা আপনার সন্তানের বোঝার জন্য কঠিন। এমন বই রাখুন যা তাঁর বয়সের উপযোগী এবং মনোযোগের জন্য প্রাসঙ্গিক।
-
একটি প্ল্যানিং তৈরি করুন
বই পড়তে বেশিরভাগ শিশুই পছন্দ করে না্ কেননা পড়া তাদের কাছে বিরক্তিকর বলে মনে হয়। তাই বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হলে তা যতটা সম্ভব মজাদার উপায়ে করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনি শিশুর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য কোন ইন্টার্যাক্টিভ রিডিং ক্লাসের সাহায্য নিতে পারেন। এভাবে ধীরে ধীরে পড়ার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলুন।
আরো পড়ুন আপনার বাচ্চাদের বনিবনা হচ্ছে না, দেখে নিন ম্যানেজ করার ৯ টি কার্যকরী উপায়
-
ছোটখাটো দিকগুলি খেয়াল রাখুন
সন্তান একদিনেই মনোযোগী পাঠক হয়ে উঠবে না। ছোট ছোট জিনিস দিয়ে শুরু করুন। যেমন- আপনি সন্তানের সঙ্গে বসে টিভি দেখছেন, স্ক্রিনে কোন লেখা আসলে তাকে সাধ্য মত পড়তে বলুন। বা ধরুন বাড়িতে খবরের কাগজের হেডলাইন গুলি তাকে জোরে জোরে পড়ে ফেলতে বলতে পারেন।
-
আপনি যখন বই কিনতে যাচ্ছেন, বাচ্চাকেও সঙ্গে নিন
বই কিনতে যাওয়ার সময় আপনার সন্তান কে সঙ্গে নিন। খেলনার দোকানে সাজানো জিনিস যেমন বাচ্চাদের আকৃষ্ট করে, ঠিক তেমন ই বইয়ের দোকানের বইগুলিও কিন্তু বাচ্চাদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। বইয়ের দোকানে যাতায়াত করতে করতে রঙ- বেরঙ্গের মলাট, বইয়ের প্রচ্ছদ, ভিন্ন ভিন্ন নাম এগুলির দ্বারা ও বাচ্চারা আকৃষ্ট হতে শুরু করবে। ফলে তাদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ ও তৈরি হবে।
-
বাচ্চাকে লাইব্রেরি তে নিয়ে যান
ই বুক, অডিও বুকের প্রতিপত্তির যুগে লাইব্রেরির কথা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। বাচ্চাদের পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে লাইব্রেরি একটি খুব ভালো জায়গা। বেশিরভাগ লাইব্রেরী বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে মেম্বারশিপ দিয়ে থাকে। বাচ্চাকে বাড়ির কাছাকাছি কোন লাইব্রেরী তে মেম্বারশিপ করে দিতে পারেন।
আরো পড়ুন আপনার বাচ্চাদের বনিবনা হচ্ছে না, দেখে নিন ম্যানেজ করার ৯ টি কার্যকরী উপায়
-
বাহবা দিতে ভুলবেন না যেন
কতগুলো বই সে এই মাসের মধ্যে পড়ে ফেলেছে তার ভিত্তিতে তাকে কোন পুরষ্কার দিন। আর আপনার সন্তান যদি ইতিমধ্যেই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তাকে আরো ভালো কোন বই উপহার দিন। এটি তাকে আরো বেশি করে পড়তে আগ্রহী করবে।
-
টেকনোলজির সাহায্য নিন
এক সময় ছিল যখন বাবা মায়েরা ভেবে অস্থির হয়ে যেতেন কীভাবে সন্তানের মধ্যে পড়ার ঝোঁক তৈরি করবেন। এখন সেই সময় অতীত হয়েছে। টেকনোলজি আমাদের সামনে তথ্যের সুবিশাল ভাণ্ডার প্রস্তুত রেখেছে যাতে বিভিন্ন ভিসুয়াল টুলের পাশাপাশি ই-বুক, অডিও বুক ইত্যাদির সম্ভার আপনি পাবেন। বাচ্চার মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এগুলো কে কাজে লাগান।
বই না পড়লে কল্পনাশক্তির বিকাশ হবে না। আর কল্পনাশক্তি সঙ্গে নিয়ে আসে নতুন নতুন ধারনা, যা সৃজনশীলতার উৎস। তাই বই পড়ার মত অভ্যাস সন্তানের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। তবে খেয়াল রাখবেন সুঅভ্যাস তৈরি করতে গিয়ে আপনি যেন তার উপর জুলুম না করে ফেলেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। যতটুকু সে ভালোবেসে করছে, তাকে ততটাই করতে দিন, অযথা চাপ তৈরি করতে যাবেন না।
Pingback: আপনার সন্তান কি কোন বিশেষ প্রতিভার অধিকারী? বুঝবেন কীভাবে? – Parenting
Pingback: Parenting Tips।বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে? সরিয়ে রাখতে হবে এই জিনিসগুলি - Parenting
Pingback: কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা? - Pare
Pingback: খাবার সময়তেই যত ঝামেলা। শিশুর সঠিক পুষ্টি নিয়ে চিন্তিত। দেখে নিন কিছু সহজ টোটকা - Parenting
Pingback: গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম । জানেন কি গর্ভবতী মায়েদের জন্য কতখানি উপকারী হতে পারে এই সহজ ব্যায়াম গুলি