বাড়ির লোক বা চেনা পরিচিতির মহলে সন্তান সকলের সঙ্গে কথা বলছে, গল্প করছে। কিন্তু বাইরের কেউ বাড়িতে আসলেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। কথা বলা তো নয়ই, অনেক বাচ্চা নাম জিজ্ঞাসা করলেও বলতে চায় না। অথচ বাড়িতে সে বেশ সাবলীল ভাবেই কথা বলছে। নতুন বন্ধু তৈরি হতেও যেন যথেষ্ট কুণ্ঠা। আবার যাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, তাদের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে বেশ খোলামেলা ভাবেই কথোপকথন হচ্ছে। এমন সমস্যা শুধু আপনার নয়। আরো অনেক বাবা মা রয়েছেন যারা কিনা এই একই সমস্যায় ভুগছেন। আজকাল বাইরের জগতের সঙ্গে শিশুদের মেলামেশা করার সুযোগ ক্রমশই কমে যাচ্ছে। এমনকি প্রতিবেশীর বাচ্চাদের সঙ্গেও মেলামেশা বা খেলাধুলার সুযোগ শহুরে জীবনযাপনে এখন আর তেমন ভাবে হয় না। ফলে শিশুদের মধ্যে মিশতে না পারার সমস্যা দিন দিন যেন আরো বেশি প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে। সমাধান করা না গেলে এটি ভবিষ্যতে আরো বড় আকার নেবে। সুতরাং নিরাময়ের চেষ্টা শুরু করুন এখন থেকেই।
●সন্তানকে আগলে রাখুন, তবে আটকে রাখবেন না (মিশতে পারে না সন্তান)
আধুনিক সমাজে পরিবারের কাঠামো আগের থেকে অনেকটাই পাল্টে গেছে। সব বাবা মায়েরই এখন একটি বা দুটি সন্তান। ফলে তাদের প্রতি মনোযোগ যেমন অনেক বেশি, তেমনই আগলে রাখার মাত্রাও বেশি। অধিকাংশ বাবা মায়েরাই এখন সন্তানকে চোখে চোখে রাখতে অভ্যস্ত। কোন মতেই তারা সন্তানকে কাছছাড়া করতে চান না। বাড়িতে তো বটেই, এমনকি কোথাও গেলেও অভিভাবকেরা চান সন্তান সব সময় তার চোখের সামনে থাকুক। সন্তান কারোর সঙ্গে কথা বললেও প্রতি মুহূর্তে তার উপরে নজর রাখেন। আর এখানেই সন্তানকে মিশতে দেওয়া থেকে আটকে দেন অভিভাবকেরাই। আপনি যদি এভাবে সন্তানের প্রতি খুব বেশি পোজেসিভ হয়ে যান তাহলে সন্তান মিশতে পারার সুযোগ পাবেই বা কোত্থেকে? যখন বাইরে কোথাও যাচ্ছেন সন্তানকে স্বাচ্ছন্দ্যে অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ দিন। না মিশতে পাড়ার সমস্যা নিজে থেকেই কাটতে শুরু করবে।
অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে দিন (মিশতে পারে না সন্তান)
এখন বাবা মায়েরা শিশুকে বাইরে খেলতে যেতে দিতে খুব একটা সম্মতি প্রকাশ করেন না। বাড়িতেই ভিডিও গেম, মোবাইল অথবা টিভি চালিয়ে দিয়ে বসিয়ে রাখেন। ফলে শিশু আরো বেশি ঘরকুনো হয়ে পড়ছে। বাড়ির খুদে সদস্যটি মেলামেশা করতে কুণ্ঠা বোধ করছে। সন্তানের জড়তা কাটানোর জন্য ধাপে ধাপে এগোতে হবে। প্রথমেই তাকে অনেক লোকের মধ্যে ছেড়ে দেবেন না। আশেপাশের বাড়ির বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে পাঠান। বাড়ির কাছাকাছি পার্ক থাকলে সেখানে বিকেল বেলায় তাকে নিয়ে যেতে পারেন। যদি বাড়ির পাশে মাঠ থেকে থাকে তাহলে সেখানকার বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে নিয়ে যান। প্রথম দিকে খেলতে সংকোচ বোধ করবে ঠিকই। কিন্তু একটা সময়ের পর নিজে থেকেই খোলামেলা হতে শুরু করবে।
ছোটখাটো দায়িত্ব পালনে সন্তানকে এগিয়ে দিন (মিশতে পারে না সন্তান)
লোকের সঙ্গে কথা বলা বা মেলামেশায় শিশুর আড়ষ্টতা রয়েছে বুঝতে পারলে একটু স্মার্ট উপায়ে কাজ করার ব্যবস্থা করতে হবে আপনাকে। যদি বাড়িতে লোক এসে সেক্ষেত্রে জোর করে তাকে লোকের সঙ্গে কথা বলতে পাঠাবেন না। “কেন তুমি লোকের সঙ্গে কথা বলছো না” এই ধরনের মন্তব্য আদৌ কাজে দেবে না। এতে সমস্যার সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং একটু ট্রিক্স কাজে লাগিয়ে দেখুন। বাচ্চাদের ছোটখাটো দায়িত্ব পালনে এগিয়ে দিন। যেমন ধরুন বিকেলে যদি আপনার বাড়িতে লোকজন আসার কথা থাকে তাহলে আগে থেকেই সন্তানের সঙ্গে কথা বলে তাকে বলে রাখুন অতিথিরা এলে সে যেন জলের গ্লাসটুকু এগিয়ে তাদের সামনে দিয়ে আসে, কিছু জিজ্ঞাসা করলে সে যেন উত্তর দেয়। আবার ধরুন আপনি সুপার মার্কেটে যাচ্ছেন। খুদেটিকে সঙ্গে নিয়ে নিন। জিনিস কেনাকাটার সময় দাম জিজ্ঞাসা করতে ছোট সদস্যকেই এগিয়ে দিন। এভাবে ধীরে ধীরে তার ব্যক্তিত্ব খোলার সুযোগ করে দিন।
আপনি কোন ভাবে ওভার পোজেসিভ হয়ে যাচ্ছেন না তো ?
অভিভাবক হিসেবে আপনার একবার নিজেকে বিচার করার প্রয়োজন আছে। আপনি শিশুর প্রতি ওভার পোজেসিভ হয়ে যাচ্ছেন না তো ? নিজের অজান্তেই অনেক বাবা মা এই ভুল করে ফেলেন। অথবা বলা যেতে পারে এখন পেরেন্টিং এর সংজ্ঞাটাই হয়তো বদলে গেছে। কিন্তু এর কুপ্রভাব কিন্তু পড়ছে আপনার সন্তানের উপর। আপনি অতিমাত্রায় পোজেসিভ হয়ে পড়ছেন কি না তা নিজে যাচাই করে নিন কয়েকটি লক্ষণ দেখে। বেশির ভাগ বাবা মায়েরাই আজকাল শিশুকে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে যেতে দিতে চান না। কারণ জানতে তারা হয়তো বলবেন অন্য শিশুদের অভিভাবকেরা বিরক্ত বোধ করেন বলে সন্তানকে ছাড়তে চান না। কিন্তু আপনি নিজেও কি খুব একটা চাইছেন সন্তান অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলুক ? যদি খেলার ছলে আপনার সন্তানের লেগে যায় ? সে যদি পড়ে গিয়ে ব্যথা পায় ? এই ভাবনা আপনার মধ্যেও কাজ করে। এটিই ওভার পোজেসিভনেস। আবার কেউ আপনার সন্তানকে কিছু জিজ্ঞাসা করলে হয়তো আপনি নিজেই তার উত্তর দিয়ে দেন। এটিও সন্তানের প্রতি আপনার পোজেসিভ হয়ে পড়ার লক্ষণ। এভাবে শিশু ভাবতে শুরু করে যে তার উত্তর না দিলেও চলে অথবা তার দেওয়া উত্তর আদৌ গৃহীত হবে না। পোজেসিভনেস থেকে বেরিয়ে আসুন। সন্তানকে খোলামেলা হওয়ার সুযোগ দিন।
এছাড়া বাইরের লোকের সামনে যদি শিশুর কোন খামতি নিয়ে মশকরা করা হয় তাহলে সে ক্রমশ গুটিয়ে যেতে থাকে। তার কোন প্রতিভা লোকের সামনে দেখানোর জন্য তাকে জোর করা- এগুলিও অনেক সময় সন্তানের অন্তর্মুখীতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অভিভাবক হিসেবে এগুলো আপনাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নোত্তর
১) আশেপাশে পার্ক না থাকলে শিশুকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়?
উওর: কোন স্পোর্টসে ভর্তি করতে পারেন।
২) গান, আবৃত্তি ভালোবাসে, তবে স্টেজে পারফর্ম করতে চায় না।কী করা উচিত ?
উওর: জোর করবেন না, তাকে তার মত করে গান, আবৃত্তি উপভোগ করতে দিন।
আরো পড়ুন –
চকোলেট হোক বা মোবাইল, বাচ্চারা আসক্ত হয়ে পড়ে সহজেই। জেনে নিন ছাড়ানোর কিছু সহজ টিপস
শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো
বয়সের সঙ্গে শিশুর উচ্চতা তেমন বাড়ছে না । ভরসা রাখতে পারেন এই উপায়গুলোতে
পেরেন্টিং স্টাইলের 4 টি ধরণ এবং আপনার শিশুর উপর এগুলির প্রভাব
Pingback: কম্পিউটারের ফুল ফর্ম কি আপনার জানা । সঙ্গে রইল 11 টি এমন তথ্য যা কম্পিউটারের ব্যাপারে জানা প্রয়ো