টিভি বা স্মার্টফোন ছাড়া বাচ্চাকে খাওয়ানো খুব বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বহু মায়েদের কাছেই। চোখের সামনে স্ক্রিন থাকলে তবেই ভাত মুখে তুলবে, নয়তো না।
কি করবেন বাচ্চাদের এমন স্মার্টফোন বা কার্টুনের নেশায়?
বাচ্চাদের খাওয়ানো যেন মায়েদের কাছে যুদ্ধ জয়ের মতই কিছু একটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু মায়েরাই অভিযোগ করেন টিভিতে পছন্দের কার্টুন চালিয়ে না দিলে কোন ভাবেই বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানো যায় না। আর তা যদি না হয় তাহলে স্মার্টফোন তো লাগবেই। তবে তাতেও যে খুব ভালো ভাবে খাবার খাওয়ানো যাচ্ছে তা কিন্তু মোটেই নয়। বরং একদৃষ্টে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মুখ নাড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে না খাবারের স্বাদ বুঝতে পারছে, না খাবার ঠিক মত চিবানো হচ্ছে। পুষ্টিবিদেরা ও বলেছেন টিভি বা স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে খাবার খাওয়ার ফলে অধিকাংশ শিশুই সঠিক পরিমাণে খাবার খায় না। কেউ হয়তো বেশি খেয়ে ফেলছে, যার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে ওবেসিটি দেখা যাচ্ছে, আবার কেউ হয়তো পরিমানের তুলনায় কম খাচ্ছে বলে সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে না।
কি করে পরিস্থিতির বদল ঘটাবেন?
কয়েকটি দিকের প্রতি একটু নজর দিলেই ধীরে ধীরে শিশুর এই অভ্যাস ছাড়তে শুরু করবে। তবে এমন ভাবে ভুল করবেন না যে আজকে থেকে কিছু জিনিস মেনে চলা শুরু করলে কালকেই আপনার সন্তানের সমস্ত কুঅভ্যাস ছেড়ে যাবে। ভালো অভ্যাস হোক বা খারাপ- তা তৈরি হতে যেমন সময় লাগে, ঠিক তেমনই অভ্যাস ছাড়াতে গেলেও ধৈর্য ও সময়ের প্রয়োজন।
● আগে নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে
যদি চান শিশুর মধ্যে সুঅভ্যাস তৈরি হোক, তাহলে সবার আগে তা নিজে রপ্ত করুন। আপনার আচরণের সেই অভ্যাস যেন প্রকাশ পায় যা আপনি শিশুর মধ্যে দেখতে চান। অনেক বাড়ির বড়োরাই খাবার খাওয়ার সময় টিভি দেখতে দেখতে খাবার খায় অথবা স্মার্টফোন ব্যবহার করে। বাবা মায়েদের আচরণে এরকম কিছু দেখেই সন্তানও একই রকম আচরণ করতে শেখে। প্রথমেই নিজেদের অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন, দেখবেন সন্তানেরও পরিবর্তন হচ্ছে। খাবার খাওয়ার সময় টিভি বা স্মার্টফোন দূরে সরিয়ে রাখুন। শিশুদের যেমন তৈরি করবেন তারা তেমন ভাবেই গড়ে উঠবে।
আরো পড়ুন – সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
● খাবার খাওয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা করুন
ঘুমোনোর জন্য বা পড়াশোনার জন্য যেমন নির্দিষ্ট জায়গা থাকে ঠিক তেমনই খাবার খাওয়ার জন্যও সুনির্দিষ্ট জায়গা করুন। ড্রয়িংরুমে বা বেডরুমে বসে টিভি দেখতে দেখতে খাবার খাওয়া যায় এমন ধারণা শিশুদের মধ্যে তৈরি হতে দেবেন কেন? সব কিছু নিয়ম মফিক চললে শিশুও সেভাবেই অভ্যস্ত হবে। আর ইতিমধ্যেই যদি অভ্যাস তৈরি হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে ধীরে ধীরে তাতে বদল আনার চেষ্টা করুন।
● টিভি দেখার জন্য সময় বেঁধে দিন
নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে শিশুকে টিভি দেখতে দিন। স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেও তাই। কাজের সুবিধার জন্য অনেক অভিভাবকই শিশুদের হাতে ফোন ধরিয়ে দেন অথবা টিভিতে কার্টুন চালিয়ে দেন নিশ্চিন্তে কাজ সারবে বলে। এতে আপনার কাজ।সময়মতো হয় মানছি। কিন্তু শিশুদের কত বড় ক্ষতি যে হয়ে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল করেছেন কি? এখানেই তার টিভি বা স্মাইটফোনের প্রতি আসক্তি তৈরি হয়ে যাচ্ছে যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। নির্দিষ্ট সময় মেনেই টিভি বা স্মার্টফোন দেখার নিয়ম তৈরি করুন। খাওয়ার সময় টিভি বা স্মার্টফোন একেবারেই নয়।
● সকলে একসঙ্গে বসে খাবার খান
কাজের ব্যস্ততার জন্য সকলে একসঙ্গে বসে খাবার খাওয়া একটু সমস্যার এ কথা ঠিক। তবুও দিনের অন্তত একটা সময়ে সকলে একসঙ্গে বসে খাবার খান। শিশুদেরও সেখানে সামিল করুন। সকালের জলখাবার হোক কিংবা রাতের খাবার, সারাদিনে অন্তত একবার সকলে একসাথে খাবার খান, গল্প গুজব করুন। এমন বিষয়ে কথা বলুন যা শিশুরও ভালো লাগবে। অনেক বাড়িতেই মায়েরা শিশুকে আগেই খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন। রাতের খাবারের সময় শিশুকে সঙ্গে রাখা হয়তো সমস্যার। প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে খাবারের সময় এগিয়ে নিয়ে আসুন। শিশুর সুঅভ্যাস তৈরি করতে চাইলে কিছু পদক্ষেপ তো আপনাকে নিতেই হবে।
বাচ্চাদের খাওয়া নিয়ে বায়না কিন্তু নতুন কিছু নয়। আগের বাচ্চারাও খাবার নিয়ে বায়না করতো। কিন্তু সে সময় আর টিভি- স্মার্টফোন কোথায়? না ছিল কার্টুন, না ভিডিও গেম। কিন্তু সে সময়ের মায়েরাও তো এই একই বায়না সামলে উঠে বাচ্চাদের খাওয়াতে পেরেছেন। কিভাবে? ঠাকুমার ঝুলি, পঞ্চতন্ত্র, হিতপদেশ আরো কতই না গল্পের সম্ভার থাকতো এই সময়ের মা ঠাকুমার কাছে। আর গল্প শুনতে শুনতে খুদেরাও দিব্যি খেয়ে উঠে যেত। এখনও কিন্তু সেই পন্থা আবারও ফিরিয়ে আনা যায়। বাচ্চাদের গল্প শুনিয়ে খাবার খাওয়ান। গল্প ছড়া শুনতে শুনতে এখনকার বাচ্চারাও লক্ষ্মী সোনা হয়ে খাবার খেয়ে নেবে। কিন্তু সেজন্য আপনাকে তৎপর হতে হবে।
পাশাপাশি যে কোন রকম গ্যাজেটস থেকে যতখানি সম্ভব বাচ্চাদের দূরে রাখতে চেষ্টা করুন। বাচ্চার শোবার ঘরে টিভি না রাখতে পারলেই ভালো হয়।
বাচ্চাদের খেলার সঙ্গী হয়ে উঠুন। সন্তানকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যান, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করার সুযোগ করে দিন। টিভি স্মার্টফোন থেকেও শিশু একাই সরে আসবে।
১) শিশুর কার্টুনের নেশা খুব বেশি। কি করবো?
উওর: টিভি দেখার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন।
২) ভিডিও গেম ছাড়া বাচ্চা কিছুই বোঝে না। অভ্যাস ছাড়ানোর উপায় কি ?
উওর: খেলাধুলা, গল্পের বই এসব বিকল্পের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) শিশুর স্মার্টফোনের নেশা ছাড়াতে কি করা উচিৎ?
উওর: অন্যদিকে মনোযোগ ঘোরাতে হবে। যেমন কোন সৃজনশীল কাজ বা ব্রেইন গেমস
আরো পড়ুন
১) বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
২) Good Handwriting:শিশুর হাতের লেখা সুন্দর করতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
৩) কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা?
৪) সন্তানের সফল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে এখন থেকেই কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন । দেখে নিন 6টি কার্যকর উপায়
Pingback: কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের এন্ট্রান্স পরীক্ষার জন্য? রইল কিছু কার্যকরী টি