আজকাল বহু মায়েরাই কাজের সঙ্গে যুক্ত। ফলে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তারা কিভাবে সবটা সামলে উঠবেন তা নিয়ে ভাবনায় থাকেন। যদিও এই সময়ে বাড়তি খেয়াল ও সতর্কতা সব মহিলারই প্রয়োজন রয়েছে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যদি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মায়েদের স্বাস্থ্যের তেমন কোন জটিলতা না থাকে তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই জীবন যাপন করা যেতে পারে। তবে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেজন্য বিশেষ কিছু দিকের কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
- সবজি কাটার মত হালকা কাজ অনায়াসেই করা যেতে পারে। অনেক মহিলাই দাঁড়িয়ে সবজি কাটায় অভ্যস্ত। সেক্ষেত্রে ডাক্তারেরা এই সময় চেয়ারে বসে সবজি কাটার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক বাড়িতেই আবার মহিলারা বঁটি ছাড়া সবজি কাটতে অভ্যস্ত নন। ফলে নীচে বসেই কাজটি করতে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এটি এড়িয়ে চলতে হবে। যেহেতু গর্ভকালীন সময়ে মিসকারেজের একটা ভয় থাকে, বিশেষত প্রথম তিন মাস সময়। তাই এই সময়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে চলুন।
- ঘর পরিষ্কার করা তো রোজকার কাজ। সেটি বাদ দিলে সমস্যায় পড়তে হয় সেকথা ঠিক। ঘর পরিষ্কারের মত কাজ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আপনি অবশ্যই করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে কিছু কথা মাথায় রাখুন। প্রথমত, এই সময়ে আপনার দেহের বিশেষ অংশের ওজন বাড়ছে। ফলে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বা যে কাজ করার জন্য আপনাকে বাঁকতে হয় সেই ধরণের কাজ যতখানি সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। তাই ঘর ঝাঁট দেওয়ার জন্য বড় হাতল লাগিয়ে ঝাড়ু ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার মোছার জন্যেও বাজারে এখন মপের মত খুব ভালো জিনিস পাওয়া যায়। যদি এই ধরণের কাজ করতেই হয় তাহলে এই দিকগুলি খেয়াল রেখে তবেই করুন।
- যদি বাথরুম পরিষ্কারের কথা ভাবেন তাহলেও কিন্তু বাড়তি সাবধানতা নিয়ে তবেই করতে হবে। প্রথমত বাথরুমে যাতে পা পিছলে পড়ে না যান সেজন্য ভালো জুতো ব্যবহার করতে ভুলবেন না। এটি আপনার প্রত্যেকবার বাথরুম ব্যবহারের সময় প্রয়োজন। এছাড়া যদি বাথরুম পরিষ্কার করতে যান সেক্ষেত্রে কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ একেবারেই ব্যবহার করবেন না। আজকাল সব বাড়িতেই বাথরুম পরিষ্কারের জন্য কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়। গর্ভবতী মহিলারা এই কাজ করতে গেলে এই ধরণের প্রোডাক্ট একেবারেই ব্যবহার করা যাবে না। এসব জিনিসের গন্ধ নাকে গেলে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হতে পারে। পরিবর্তে ভিনিগার, লেবুর রস বা বেকিং সোডার মত জিনিস ব্যবহার করুন।
- ছোটখাটো রান্নার বাসনপত্র বা প্লেট ধোয়ার মত কাজ করতে পারেন। কিন্তু যে সব বাসনপত্র গুলি মাজা খুব বেশি পরিশ্রমের সেগুলি এড়িয়ে চলতে হবে। দেহের উপর খুব বেশি চাপ এই সময়ে না দেওয়াই ভালো।
- ভারী কোন জিনিস টানাটানি করার মত কাজ অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহিলাদের করা একেবারেই অনুচিত। তাই আসবাব সরানোর মত কাজ বাদের খাতায় রাখতে হবে।
- ফ্যান পরিষ্কার বা পর্দা পাল্টানো ইত্যাদির মত কাজ যেগুলি উঁচু জায়গায় উঠে করতে হয়, তেমন কাজ করবেন না। কেননা সামান্য অসাবধানতায় উপর থেকে পড়ে গেলে তা বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় মহিলাদের দেহে জলের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি সময় একটানা দাঁড়িয়ে থাকবেন না।
- অনেকের বাড়িতেই কুকুর বেড়াল বাড়িতে পোষেন। কুকুর বেড়ালের বর্জ্যের মধ্যে কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি করতে পারে। সেক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলারা পোষা প্রাণীর বর্জ্য পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকুন।
- আরশোলা, শুঁয়োপোকা, পিঁপড়ে ইত্যাদির উপদ্রব প্রায়শই হয়ে থকে। বর্ষাকালে এই উৎপাত আরো বেড়ে যায়। আর পোকামাকড়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে হাতের কাছে সহজ সমাধান হিসেবে আমরা বেঁছে নিই রাসায়নিক কীটনাশক স্প্রে। এগুলি পোকামাকড় তাড়াতে কার্যকর ঠিকই। কিন্তু এই কীটনাশক স্প্রে থেকে বের হওয়া বিষাক্ত রাসায়নিক নিশ্বাসের সঙ্গে আমাদের দেহে গিয়ে মারাত্মত ক্ষতি করে। আর বাড়িতে যদি একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা থাকেন তাহলে তো এগুলো ব্যবহার থেকে আরো দূরে থাকতে হবে। মায়ের সঙ্গে গর্ভস্থ শিশুর জন্যেও এটি খুবই ক্ষতিকারক।
- যদি বাড়িতে ঘর রঙ করানোর মত প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তাহলে কিছুদিন অপেক্ষা করুন। রঙের স্প্রে থেকে এক ধরণের ধোয়া জাতীয় পদার্থ বের হয় গর্ভকালীন সময়ে মা এবং সন্তান উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক।
শারীরিক কোন জটিলতা না থাকলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যেতে পারে একথা ঠিক। কিন্তু তাই বলে আপনার জন্য খুব বেশি ক্লান্তির হয়ে যাচ্ছে এমন কাজ কখনই করতে যাবেন না। পাশের বাড়ির মহিলা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সব কাজ যেভাবে সামলেছে আপনাকেও ঠিক ততটাই নিপুনভাবে বাড়ির সব কাজ করতে হবে এমন নয়। এই ধরণের ধারণা নিজের মধ্যে রাখবেন না। সকল গর্ভবতী মায়ের শারীরিক পরিস্থিতি এক রকম হয় না। এমনিতেই ওজন বৃদ্ধির জন্য সমস্যা হতে শুরু করে। পাশাপাশি যে কাজগুলি করলে আপনার খুব বেশি ক্লান্তি হচ্ছে সেগুলো নিজে বুঝে নিয়ে এড়িয়ে চলুন। নিজের খেয়াল রাখুন। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা থেকে যতখানি সম্ভব দূরে থাকুন। ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন, সিনেমা দেখুন। আনন্দের সঙ্গে দিন যাপন করুন।
আরো পড়ুন-
গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাদ্য তালিকায় কোন খাবার গুলি রাখতে হবে?
সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
লোকের সঙ্গে একেবারেই মিশতে পারে না সন্তান। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন
সন্তান ভুল করলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন । জেনে নিন অভিভাবক হিসেবে আপনার কর্তব্য
কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা?
Pingback: সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন। এই কাজগুলো করার চেষ্টা করুন - Parenting
Pingback: গর্ভবতী মায়েদের শোওয়ার সঠিক ধরন কেমন হওয়া উচিৎ। কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা? - Parenting