সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা মোটেই সহজ কাজ নয়। সন্তানকে সুশিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলতে একজন অভিভাবকের অনেক বেশি নিষ্ঠা এবং ধৈর্য্যের প্রয়োজন। একদিন বা একমাসে করে ফেলার মত কোন কাজ এটি নয়। জন্মের পর থেকেই শিশুকে সুন্দর ভাবে বড় করে তোলাই বাবা মায়েদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। সব বাবা মায়েরাই চান তাদের সন্তানকে সবচেয়ে ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করতে, এবং বাস্তবে তা করার চেষ্টাও করেন। কিন্তু তারপরেও সন্তান প্রতিপালনে কিছু না কিছু ঘাঁটটি থেকেই যায়, যার ফলাফল শিশুর আচরণে প্রকাশ পায়। অথচ সন্তানের লালন পালনের সময় কিছু সাধারণ নিয়ম মানতে পারলেই সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু একটু সচেতন হয়ে এই নিয়মগুলো মেনে চলতে পারলেই কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। আসুন জেনে নেই অভিভাবক হিসাবে আপনাদের করনীয় কী কী ?
শিশুকে ভালো মানুষ তৈরি করতে সুন্দর পরিবেশ দিন
বেড়ে ওঠার জন্য শিশুর সুন্দর পরিবেশ দরকার। ভালো মানুষ হিসেবে সন্তানকে গড়ে তুলতে চাইলে ছোট থেকেই তার আচরণগত দিকের প্রতি যত্নবান হতে হবে। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার সময় তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ খুব বেশি প্রভাব ফেলে। লক্ষ্য করে দেখবেন শিশুর উচ্চারণ ভঙ্গি, কথার টান বাড়ির কোন না কোন সদস্যের অনুরূপ হয়ে থাকে। শিশুকে যেমন মানুষ আপনি তৈরি করতে চাইছেন, সবার আগে নিজেদের আচরণে তার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করুন। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা চিৎকার করে কথা বললে শিশুও সেই মত আচরণ আয়ত্ত করতে থাকবে। যদি আপনি চান শিশু চিৎকার করে কথা না বলুক, তাহলে সবার আগে তা আপনাদের আচরণ থেকে বাদ দিতে হবে। এই রকম ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে শিশুকে বেড়ে ওঠার জন্য সুন্দর পরিবেশ দিন।
টিভি, ভিডিও গেম, কার্টুন থেকে যতখানি সম্ভব দূরে রাখুন
কার্টুন চালিয়ে না দিলে বাচ্চাকে কোন ভাবেই খাবার খাওয়ানো যাচ্ছে না। তাই টিভি দেখতে দেখতেই সে খাবার খাচ্ছে। এতে করে আসলে শিশুর অনেক বেশি ক্ষতি করে ফেলছেন। টিভি দেখতে দেখতে বাচ্চা যখন খাবার খাচ্ছে তখন তার মনোযোগ খাবারের দিকে নয়, থাকছে কার্টুনের দিকে। ফলে খাবার ভালো করে চিবিয়ে না খাওয়ার জন্য হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশু কার্টুন বা ভিডিও গেমসে আসক্ত তারা অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারছে না, বাবা মায়ের কথার অবাধ্য এবং খিটখিটে মেজাজের। গেম ছাড়া আর কোন বিষয়েই তারা আগ্রহ খুঁজে পায় না। এই ধরনের অভ্যেস শিশুর মানসিক গঠনে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। সন্তানের বিকাশের এই পর্যায়ে তাকে যতোটা সম্ভব টিভি, ভিডিও গেম ইত্যাদি থেকে দূরে রাখুন।
আরো পড়ুন- গর্ভবতী মায়েদের কী কী করা উচিত নয়?
আত্মকেন্দ্রিকতা একেবারেই নয়
আজকাল প্রায় সব বাবা মায়েরাই সন্তানকে আরো বেশি আত্মকেন্দ্রিক করে তুলতে আগ্রহী। বন্ধুদের সঙ্গে কম্পিটিশনের মনোভাব এই আত্মকেন্দ্রিকতা কে যেন আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে টিফিন শেয়ার করে খেতে হয়- এ কথা আজকাল আর কজন বাবা মা সন্তানকে শিখিয়ে দেন তা বলা কঠিন। সবকিছুই দিনে দিনে যেন আরো বেশি করে “আমি” কেন্দ্রীক হয়ে উঠছে। কিন্তু যদি চান সন্তান ভালো হোক, মানুষের মত মানুষ হোক তাহলে এই প্রবণতা একেবারে ঝেড়ে ফেলতে হবে। ভালো থাকা বলতে যে সকলকে নিয়ে ভালো থাকা বোঝায়- এই শিক্ষা ছোট থেকেই দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি নিজেই শিশুর কাছে উদাহরণ হয়ে উঠুন। শিশুকে বড় মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিঃস্বার্থ ভাবে পাড়া- প্রতিবেশী বা বন্ধু- বান্ধবের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। আপনাকে দেখেই তা শিখবে।
গান শোনা ভালো বই পড়ায় উৎসাহিত করুন
অবসরে শিশুকে সুরের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করার সুযোগ করে দিন। একে কখনই সময় নষ্ট বলে তকমা দেবেন না। সুরের মূর্ছনা শিশুর মনোসংযোগ বাড়াতে উপকারী। শুধু শিশু কেন, বড়দের ক্ষেত্রেও তা সমান ভাবে কাজ করে থাকে। স্মৃতিশক্তিকে অনেক বেশি তরতাজা রাখতে গান শোনার ভূমিকা রয়েছে। সন্তান আগ্রহী হলে তাকে গানের তালিম ও দিতে পারেন।
শিশু মনের কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটাতে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। সন্তানকে বই পড়তে উৎসাহিত করুন। শিশু মনকে সৃজনশীল করে তোলার ক্ষেত্রেও বই পড়া অপরিহার্য। পঞ্চতন্ত্র, হিতপদেশের মত ভালো ভালো বই তাকে উপহার দিন। প্রথম দিকে আপনি নিজে বই পড়ে তা গল্পের মত করে তাকে শোনাতে পারেন। দেখবেন ধীরে ধীরে সন্তানও বই পড়ার জন্য আগ্রহী বোধ করছে। আপনার বাড়ির খুদে সদস্যটির উপর বই পড়ার সুফল আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন। শিশুর শব্দ ভান্ডার যেমন সমৃদ্ধ হবে, তেমনই বুদ্ধিমত্তা ও মনোসংযোগ ও বৃদ্ধি পাবে।
সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে পরিচর্যা করুন। ভালো মানুষ হিসেবে সন্তানকে দেখতে চাইলে এটি অবশ্য প্রয়োজনীয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে যে ব্যক্তির সম্পর্কগুলো যত বেশি দৃঢ়, সেই ব্যক্তি নিজেকে তত বেশি নিরাপদ বোধ করে এবং জীবনের অন্যান্য দিকগুলো ভালো ভাবে ব্যালেন্স করতে পারে। মাথায় রাখুন আপনাদের সঙ্গ সন্তানের জন্য খুবই জরুরী। আদর্শ মানুষ তৈরিতে নিয়মানুবর্তিতা কে বাদ দিলে একেবারেই চলবে না। শিশুকে নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে সবচেয়ে ভালো উপায় হল তাকে কোন স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত করা। শিশুর আগ্রহ অনুযায়ী তাকে স্পোর্টসে ভর্তি করুন। যে কোন স্পোর্টস ই শিশুদের মধ্যে মোরাল ডেভেলপমেন্ট করতে সহায়ক হয়।
সন্তানকে ভালো মানুষ তৈরি করতে অবশ্যই উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে চলুন। তার পাশাপাশি সবচেয়ে যেটি প্রয়োজন সন্তানকে সময় দেওয়া অর্থাৎ দিনের একটি নির্দিষ্ট কিছুটা সময় শুধু সন্তানের সঙ্গে গল্প করে কাটান।
আরো পড়ুন –
বয়সের সঙ্গে শিশুর উচ্চতা তেমন বাড়ছে না । ভরসা রাখতে পারেন এই উপায়গুলোতে
শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
লোকের সঙ্গে একেবারেই মিশতে পারে না সন্তান। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন
বাচ্চা কথায় কথায় রেগে যায়, সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। রইল কিছু কার্যকরী টোটকা
Pingback: সন্তানকে নবোদয় বিদ্যালয়ে দিতে চাইছেন ? আবেদনের শেষ তারিখ কিন্তু ৩১শে জানুয়ারি। জেনে নিন বিস্ত