সবে মাত্র শিশুকে স্কুলে দিয়েছেন।বাড়িতে এগুলো শেখাতে ভুলবেন না।

সবে মাত্র শিশুকে স্কুলে দিয়েছেন।বাড়িতে এগুলো শেখাতে ভুলবেন না।

প্রত্যেক বাবা মায়েরাই চান তাদের সন্তান সবচেয়ে ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক। কিন্তু বাড়িতেও তো অনেক কিছুই শেখাতে হয়। এমন অনেক কিছু শেখানোর মত আছে যা শিশুকে বাড়ির চৌহদ্দিতেই শেখাতে হয়। এগুলিই তার পরবর্তী জীবনের ভীত রচনা করে।

স্কুলে ভর্তি করেছেন সন্তানকে। কিন্তু বাড়িতে কোন শিক্ষাগুলো আপনাকে দিতে হবে?

সকল অভিভাবকেরাই চান তারা যেন শিশুকে ভালো মানের এডুকেশন দিতে পারেন। এ জন্য তারা সর্বদাই তৎপর থাকেন। শিক্ষার শুরুতে বেস্ট প্লে স্কুল থেকে আরম্ভ করে প্রাইভেট টিউটর, কোন দিক থেকেই খামতি রাখেন না। কিন্তু এমন কতকগুলি বিষয় আছে যা আপনাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়িতেই শিশুকে শেখাতে হবে। সন্তান মানুষ হিসেবে কেমন তৈরি হবে তা কিন্তু আপনার দেওয়া শিক্ষার দ্বারা নির্ধারিত হবে, স্কুলের সিলেবাস শুধুই আপনার সন্তানের বিষয়ভিত্তিক দিকের বিকাশ ঘটাবে।

বাইরের জগতের প্রভাব সম্পর্কে শিশুকে সচেতন করুন

এতদিন পর্যন্ত শিশু চেনা গন্ডির মধ্যে ছিল। সবে মাত্র স্কুলে ভর্তি হয়ে তার বন্ধু তৈরি হচ্ছে। বাইরের মানুষের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ হচ্ছে। শিশুর সামাজিক জীবনের সূত্রপাত এখান থেকেই।

এতদিন কেবলমাত্র আপনাদের আচার আচরণ অভ্যাসের প্রভাব সন্তানের উপর ছিল। কিন্তু এখন অন্যদের প্রভাবও ক্রমশ পড়তে শুরু করছে। এই বিশেষ সময়ে শিশুকে শেখাতে হবে কোনগুলি সে গ্রহণ করবে আর কোনগুলি তার আচরণ থেকে বাদ দিতে হবে।

এই সময় শিশুরা বিকাশের এমন এক স্তরে থাকে যে তারা খুব সহজেই কোন কিছুর আত্তীকরণ করে নেয়। যেমন ধরুন কখনও হয়তো আপনি খেয়াল করলেন শিশু এমন কোন আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করছে যা আপনার পরিবারের কোন সদস্য কখনও ব্যবহার করে না। সন্তান স্কুলে কোন বন্ধুর কাছে হয়তো শুনেছে এবং তার কথা বলার সময় ব্যবহার করছে। এরকম পরিস্থিতিতে শিশুকে শেখাতে হবে যে কোনটি তাকে বর্জন করতে হবে। শুধু তাই নয়, কেন বর্জন করতে হবে তাও বুঝিয়ে বলুন। বাইরের জগতের প্রভাব তো পড়বেই, কিন্তু কতটা গ্রহণ করা যাবে আর কোনগুলি বর্জনীয় সেই শিক্ষা বাড়িতে আপনাকে দিতে হবে।

রোজকার কিছু কাজের দায়িত্ব সপে দিন

স্কুল যাওয়া, পড়াশোনা রয়েছে বলে আর কিছুই সে করতে পারবে না এমন ধারণা শিশুদের মধ্যে তৈরি হতে দেবেন না। নিজের কাজ নিজে করতে পারার প্রয়োজন আছে। এগুলো লাইফ স্কিলের মধ্যে পড়ে। ভারতীয় উপমহাদেশের বাবা মায়েদের এমন প্রবণতা রয়েছে। পড়াশোনা করছে বলে তার বাকি সমস্ত কাজই অন্য কাউকে করে দিতে হবে। এমন ধারণা ছোট থেকে তৈরি হয় বলেই শ্রমের প্রতি অশ্রদ্ধার মনোভাব গজিয়ে ওঠে। নিজের কাজ নিজে করতে পারার যে প্রয়োজন আছে যে কথা শিশুকে উপলব্ধি করতে দিতে হবে। রোজকার কাজ থেকে শিশুর করার মত কিছু কাজের দায়িত্ব তাকে সপে দিন। যেমন নিজের জামা গুছিয়ে জায়গা মত রাখা, নিজের পড়ার টেবিল গোছানো, বোতলে জল ভরে রাখা, রান্নার সময় ফ্রিজ থেকে এটা ওটা নিয়ে এসে সাহায্য করে দেওয়া, সকাল বিকেল ফুল গাছে জল দেওয়া ইত্যাদি। বাড়িতে এমন ছোটখাটো অনেক কাজই তো থাকে। শুরুর দিকে ভুল হবেই, আপনাকে শুধরে দিতে হবে। তবে বিরক্ত এমন কোন মন্তব্য করে ফেলবেন না যাতে করে নিরুৎসাহিত বোধ করে।

আত্মকেন্দ্রিকতা নয়

শৈশবে প্রায় সব বাচ্চাদেরই আমি কেন্দ্রিক একটা মনোভাব থাকে এবং তা অস্বাভাবিক ও নয়। মনোবিজ্ঞানী একে “ইগো সেন্ট্রিজম” বলা হয়েছে। কিন্তু একে প্রশ্রয় দেওয়া কখনোই কাম্য নয়। শিশু মিলেমিশে সকলের সঙ্গে ভাব করে চলতে পারবে এমনটাই হওয়া উচিৎ। এই শিক্ষার দায়িত্ব ভার ও কিন্তু আপনার উপরেই বর্তায়। শিশু স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হচ্ছে। কিন্তু ছোটখাটো ব্যাপারেই মনোমালিন্য হয়ে যাচ্ছে। সব কিছুই যেন শুধুই আমি কেন্দ্রীক হয়ে পড়ছে। এখানে আপনার হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন আছে। বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা, তাদের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে না পড়া এগুলো সম্পর্কে শিশুকে বলুন। বন্ধুর কোন কথা ভালো নাই লাগতে পারে, তাই বলে ঝগড়া মারামারি করতে হবে এমন নয়। এগুলো বুঝিয়ে বলুন।শিশু আত্মকেন্দ্রিকতা ধীরে ধীরে থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।

আরেকটি দিকের কথা না বললেই নয়। টিফিন শেয়ারিং। বাচ্চাকে অবশ্যই টিফিন ভাগ করে খেতে শেখান। এমন ভাবে টিফিন দিন যাতে সে অন্যের সঙ্গে তা ভাগ করে খেতে পারে। ওই বয়স থেকেই শেয়ারিং শেখাতে না পারলে তার আত্মকেন্দ্রিকতা বাড়বে বইকি কমবে না।

লাগাম ছাড়া চাহিদা পূরণ করতে গেলে বিপদ

শিশুর চাহিদার দিকটি যেন লাগাম ছাড়া হয়ে না ওঠে। আমাদের সকলেরই কিছু চাহিদার জায়গা থাকে। শিশুদেরও তেমন চাহিদা থাকবেই। তবে তা লাগাম ছাড়া হয়ে গেলে কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে আপনাকেই। কোন বন্ধুর কাছে একটা খেলনা দেখে বাড়িতে এসে বায়না জুড়ে দিয়েছে, তার ও তেমনই একখানা খেলনা চাই। একদিন দিলেন, দুদিন দিতে পারলেন। কিন্তু সব সময়েই কি এই রকম চাহিদার যোগান আপনি দিতে পারবেন? সামর্থ্য থাকলেও সব চাহিদার জোগান দেওয়া উচিৎ নয়। এতে করে শিশু জিনিসের মূল্যই বুঝে উঠতে পারে না। শিশুর চাহিদা যাতে আকাশ ছোঁয়া হয়ে না দাঁড়ায় সেজন্য শুরু থেকেই লাগাম দিন।

সামাজিকতা, নম্রতা, শিষ্টাচার, বড়োদের শ্রদ্ধা করার মত আচরণ শিশু পরিবার থেকেই শেখে। চারিত্রিক এই দিকগুলির বিকাশ ছোট বয়স থেকেই শুরু করা প্রয়োজন। শিশুর মধ্যে এই গুণগুলি বিকাশ করার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই।

আরো পড়ুন –

শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো

বয়সের সঙ্গে শিশুর উচ্চতা তেমন বাড়ছে না । ভরসা রাখতে পারেন এই উপায়গুলোতে

শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে

সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন। এই কাজগুলো করার চেষ্টা করুন

লোকের সঙ্গে একেবারেই মিশতে পারে না সন্তান। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন

1 thought on “সবে মাত্র শিশুকে স্কুলে দিয়েছেন।বাড়িতে এগুলো শেখাতে ভুলবেন না।”

  1. Pingback: এমন কয়েকটি ভুল যা সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে অভিভাবকেরাই করে ফেলছেন।Parenting tips - Parenting

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *