সন্তানের অত্যধিক রাগ, জেদ বাবা মায়ের জন্যও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে ছোট শিশুদের রাগ নিয়ন্ত্রনে আনা খুবই সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়, কেননা তাদের বোঝানো খুব মুশকিলের একটি কাজ। জেদের বসে সন্তান এমন অনেক কাজ করে বসে যা আসলেই ক্ষতিকর, তার নিজের জন্যও এবং আপনাদের জন্যেও। এছাড়া ছোট থেকেই যদি শিশুর রাগ বা জেদের মত আবেগগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে তা তার ভবিষ্যৎ জীবনেও ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শৈশব থেকেই বাচ্চাকে আবেগ অনুভূতি নিয়ন্ত্রনের পাঠ শেখানো একান্ত প্রয়োজন। চলুন দেখে নিই এমনই কিছু সহজ টোটকা ।
প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন
কেন সন্তান রেগে যাচ্ছে তা সবার আগে খুঁজে বের করতে হবে। সমস্যার মূল খুঁজে বের করতে না পারলে কখনই তার সমাধান সম্ভব নয়। ঠিক কোন কোন পরিস্থিতিতে বাচ্চা রেগে যাচ্ছে, হাত পা ছুড়ছে তা খেয়াল করুন এবং সেই পরিস্থিতি থেকে বাচ্চাকে যথা সম্ভব দূরে রাখুন।
আপনাকে আরো বেশি ধৈর্যশীল হতে হবে
ধৈর্য কোন বিকল্প নেই- এ কথা আমরা সকলেই জানি ঠিকই কিন্তু কাজে লাগাতে পারি কতটুকু? সন্তান জেদ করলে আপনিও মাথা গরম করে রাগারাগি করে ফেলছেন অথবা দু ঘা বসিয়েও দিচ্ছেন। এতে কি আদৌ সমস্যার সমাধান সম্ভব? সন্তানের রাগ থামাতে গিয়ে আপনিও যদি রেগে যান তাহলে সমস্যার সমাধান তো হবেই না বরং হিতে বিপরীতও হতে পারে। তাই সন্তানের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমে আপনাকেই আরো বেশি ধৈর্য ধরতে হবে। আপনিও বাচ্চার সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে গেলে সমস্যা বাড়বে বইকি, কমবে না। আপনি নিজে মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। শান্ত হওয়ার পর সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন।
আরো পড়ুন – গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাদ্য তালিকায় কোন খাবার গুলি রাখতে হবে?
মনোযোগ দিয়ে শিশুর কথা শুনুন
আপনার খুদে হয়তো সবসময় অনেক কিছু একসঙ্গে গুছিয়ে বলতে পারছে না। তাই তাকে বলার সুযোগ দিন। শিশুরা আসলেই সব কথা, সমস্ত অনুভূতি স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলতে পারে না। তাকে বেশি বেশি কথা বলার সুযোগ করে দিন। বাচ্চাদের ও কিন্তু অনেক অভিমান- অভিযোগ থাকে, সেগুলি মন দিয়ে শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। সেগুলিকে কখনই হাসি ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেবেন না। তাদের আবেগ- অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন।
রাগ যেন কখনই শিশুর চাহিদা পূরণের চাবিকাঠি হয়ে না ওঠে
বাচ্চা খুব রেগে গেলে আপনি তাকে সামাল দিতে তার চাহিদা মত জিনিসের যোগান দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তা কি আদৌ কোন ভালো ফলাফল দিতে পারছে? যা হোক কিছু একটা নিয়ে জেদ করলেই সন্তান যদি তা পেতে আরম্ভ করে তাহলে ধীরে ধীরে রাগ- জেদ এগুলিই তার কাছে একখানা মস্ত হাতিয়ার হয়ে উঠবে। যে কোন কিছু পাওয়ার জন্য সে এই হাতিয়ার ব্যবহার করতে থাকবে। তাই শিশুকে বুঝতে দিন সে রাগারাগি করলেই আপনি তার পছন্দের জিনিস তার সামনে উপস্থিত করবেন না। সাময়িক ভাবে হয়তো এটি কোন কোন বাবা মায়ের কাছে কার্যকর মনে হয়, কিন্তু আসলে এটি আচরণের সমস্যা তৈরি করে এবং শিশুর মধ্যে আগ্রাসন কে বাড়িয়ে তোলে। এতে করে তাদের রাগ কমানো যায় না, উপরন্তু চাহিদার মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
রাগারাগি গ্রহণযোগ্য নয়, তা শেখাতে হবে
রাগারাগি, অত্যধিক জেদ, মেজাজ দেখিয়ে কথা বলা- এগুলো আসলেই যে কোন গ্রহণযোগ্য আচরণ নয় তা বাচ্চাকে শেখাতে হবে। এমন অনেক সময় হয়ে থাকে যে আপনি বাচ্চার রাগের কথা কাউকে এমন ভাবে বলছেন, যাতে করে সন্তান ভাবছে যে তার রাগের বিষয়টি একটি বিশেষত্ব পাচ্ছে। “ আমার ছেলের তো খুব জেদ, কিছুতেই তাকে বোঝনো যায় না”– এই ধরণের উক্তি বাচ্চাকে কিন্তু আরো বেশি উৎসাহ যোগায়। আবার ধরুন বাড়ির অন্য কোন সদস্যের খুব রাগারাগির অভ্যাস আছে। সেক্ষেত্রে কখনই তার সঙ্গে তুলনা করে শিশুর রাগ- জেদের কথা বলবেন না। এতে করে বাচ্চারা ধীরে ধীরে সেই ব্যক্তিকে রোল মডেল হিসেবে দেখতে শুরু করে, এবং ক্রমাগতই তার মত আচরণ আয়ত্ত করতে থাকে।
সব সময় নেগেটিভ দিকই বিচার্য নয়
রাগ কখনই উপভোগ করার মত কোন বিষয় নয়। কখনও কখনও তা ভেতরের অনুভূতি প্রকাশ না করতে পারার ফলাফল হয়ে থাকে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয় না। বাচ্চারা তাদের ভেতরের হতাশা, তাদের অনুভূতি গুলিকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করে উঠতে পারে না। আর এই পরিচালনা করতে না পারার অক্ষমতা রাগ হিসেবে প্রকাশ পায়। তাই তাদের আবেগ, অনুভূতি যথাযথভাবে প্রকাশ করা শেখাতে হবে। আপনি যদি এই কাজে অসমর্থ হয়ে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে কোন বিশেষজ্ঞ বা স্কুলের কাউন্সিলরের সাহায্য নিন।
এছাড়া বাড়ির মধ্যে শান্ত, সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করুন। বাড়ির অন্য কোন সদস্যের মধ্যে রাগারাগি করার প্রবণতা থাকলে সবার আগে তাকে সংশোধন করার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া টিভি তে হিংসাত্মক কিছু দেখাও কিন্তু সন্তানের মধ্যে বেস প্রভাব ফেলতে পারে। আর যে বিষয়কে বর্তমানে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করতে হবে তা হল ভিডিও গেম। যে সমস্ত গেমে হিংসাত্মক কিছু রয়েছে সেগুলি থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
আমাদের লেখাটি আপনাদের পছন্দ হলে অবশ্যই শেয়ার করে সকলের কাছে পৌঁছে দিন।
আমাদের অ্যাটিক্যাল প্রতি বৃহস্পতিবার এবং রবিবার প্রকাশিত হয় ।
আরো পড়ুন –
শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো
বয়সের সঙ্গে শিশুর উচ্চতা তেমন বাড়ছে না । ভরসা রাখতে পারেন এই উপায়গুলোতে
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
সন্তান ভুল করলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন । জেনে নিন অভিভাবক হিসেবে আপনার কর্তব্য