আপনার সন্তান কি বারংবার ই বন্ধুদের সঙ্গে লড়াই করে ফেলছে? অভিভাবক হিসাবে কিভাবে আপনি তাকে সহায়তা করতে পারেন?

আপনার সন্তান কি বারংবার ই বন্ধুদের সঙ্গে লড়াই করে ফেলছে? অভিভাবক হিসাবে কিভাবে আপনি তাকে সহায়তা করতে পারেন?

বন্ধুদের মধ্যে লড়াই হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এটি বন্ধুত্বের একটি সাধারণ ব্যাপার। তবে শুধু লড়াকু হলেই চলবে না, তা মিটমাট করার কৌশল ও তাদের শিখতে হবে। কোন কোন বাচ্চারা নিজে থেকেই এসব ম্যানেজ করতে সক্ষম হলেও বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায় বাচ্চাদের মধ্যে এই সব লড়াইয়ের তীব্রতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

কৈশোর বয়স পর্যন্ত বেশিরভাগ বাচ্চাদের মধ্যেই বন্ধুদের সঙ্গে লড়াইয়ের এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। সাধারনত কোন নির্দিষ্ট ব্যাপারে মতবিরোধের ফলে তারা আক্রমনাত্মক হয়ে থাকে। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবক হিসেবে আপনার দিক থেকে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী হয়ে পড়ে। কীভাবে বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, কীভাবে লড়াই থেকে দূরে থাকতে হবে, আপনার কি কি পদক্ষেপ নিতে হবে, সে সম্পর্কে কিছু বিষয় এখানে জেনে নেওয়া যেতে পারে।

1. কেন বারবার লড়াই হচ্ছে

 

যে কোন ছোটখাটো কারনেই বাচ্চাদের মধ্যে ঝগড়া হতে পারে। ভুল বোঝাবুঝি থেকে শুরু করে খেলা নিয়ে বিতর্ক কোন কিছুই এতে বাদ পড়ে না। কেন আপনার সন্তান বারবার লড়াই করে ফেলছে তা সবার আগে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। হতে পারে এমন কোন কারন রয়েছে যা সম্পর্কে আপনি একেবারেই অবগত নন।

গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল পিতামাতার বৈবাহিক সম্পর্ক ভালো নয়, সেসব শিশুদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা বেশি দেখা যায়। বেশি মাত্রায় আবেগ প্রবণ, খুব অল্পেতেই বেশি প্রতিক্রিয়া করে ফেলছে এই ধরণের সমস্যা এই সকল বাচ্চাদের মধ্যে তৈরি হতে থাকে। শিশুর মধ্যে এই ধরণের আবেগ অনুভুতি যত বেশি মাত্রায় জমতে থাকবে, তাদের সুস্থ্য সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষমতাও ততই কমে আসবে।

প্রত্যেকটি শিশু আলাদা পরিবার থেকে আসার ফলে তাদের নীতিবোধের কাঠামোও আলাদা। ফলত দ্বন্দে জড়িয়ে পড়া কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু তা ম্যানেজ করার জন্য সহায়তা দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে আপনাকে। তাই সবার আগে কারন খুঁজে বের করুন কেন বাচ্চাদের মধ্যে বারবার ই মতবিরোধ বেধে যাচ্ছে। সেই অনুযায়ী আপনি পদক্ষেপ নিন।

আরো পড়ুন পেরেন্টিং স্টাইলের চারটি ধরণ এবং আপনার শিশুর উপর এগুলির প্রভাবঃ 

2. খুব সাধারণ ভাবে বিষয় টি সমাধানের চেষ্টা করুন

 

বাচ্চাদের অবশ্যই সাহায্য করুন, তবে তাদের নিজেদের মত করে সমাধান করার ও অবকাশ দিন। এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরী। সন্তানের সামাজিক সম্পর্কের দিকের প্রতি বিশেষ নজর দিন। অপরের অনুভুতি কে বুঝতে পারা, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করা, একসঙ্গে কাজ করে কোন সমস্যার সমাধান খোঁজা – সন্তান কে এগুলো শেখান। তবে প্রায়শই অভিভাবকেরা বুঝে উঠতে পারেন না কখন তাদের সাহায্য করতে হবে এবং কখন সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হবে। তাদের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে দিন। আপনি যদি প্রতিটি বিরোধের সমাধান করতেই ঝাপিয়ে পরেন তাহলে আপনার সন্তান নিজে থেকে সমাধান করা শিখবে না।

কিন্তু পরিস্থিতি গুরুতর হলে কখনই সময় অপচয় করবেন না। যেমন ধরুন শারীরিক আঘাত করার মত নিষ্ঠুর আচরণ হলে আপনাকে তৎক্ষণাৎ মধ্যস্থতা করতেই হবে। কেননা যে কোন শিশুর ই শারীরিক নিরাপত্তার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্কের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

3. সন্তানের বয়স অনুযায়ী আপনি পদক্ষেপ নিন

 

বন্ধুদের সঙ্গে সন্তানের দ্বন্দ্বের ব্যাপারটি বয়সের সাপেক্ষে আলাদা আলাদা  হয়ে থাকে। দ্বিমত হলে কারোর ক্ষেত্রে শুধুই ঝগড়া, ভুল বোঝাবুঝি তো কোন বন্ধুত্বে আবার কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া। তবে এমন বন্ধুত্ব ও কিন্তু আছে যেখানে মতবিরোধ খুব ই কম।

                সাধারনত শিশু যত ছোট হবে মারামারি বা লড়াইয়ের প্রবণতা থাকার সম্ভাবনা ততই বেশি থাকে। কেননা এই সময় সবে মাত্র তাদের সামাজিকীকরিন শুরু হয় এবং তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা বেশি থাকে। ধরুন আপনার সন্তান বন্ধুর সঙ্গে মারামারি করেছে, এক্ষেত্রে যার দশ ই থাকুক না কেন আপনাকে খুব সন্তর্পণে হস্তক্ষেপ করতে হবে যাতে কোন কোন বাচ্চা ই আঘাত না পায়। সমস্যা তীব্রতর হলে উভয় শিশুর অভিভাবকের মধ্যস্থতার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে।

                বাচ্চারা স্কুলে যেতে শুরু করলে তাদের মধ্যে ধীরে ধীরে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গতে উঠতে থাকে, তবে এই সময়েও বিরোধের  প্রবণতা কিন্তু থেকেই যায়। এই পর্যায়ে হয়তো খেলনা নিয়ে ঝগড়া করার জায়গায় ভুল বোঝাবুঝি বাড়তে থাকে। এই সময়ে পরিবারের বাইরেও বাচ্চাদের  পরিছিতি বাড়তে শুরু করে, সম্পর্ক তৈরি হয়, ফলে আবেগের জায়গা থেকে সংঘর্ষ হওয়ার সম্ভাবনা ও তৈরি হতে থাকে। কিন্তু এই বয়সের বাচ্চারা অনেক সমস্যা ই নিজেরা সমাধান করতে পারে। টাই যে কোন ব্যাপারেই আপনি হস্তক্ষেপ করতে যাবেন না। সন্তান কে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে দিন।

                সন্তান যদি টিনেজার হয়ে থাকে তাহলে তাদের সমবয়সীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঝুঁকি আরো বেশি এবং তা ম্যানেজ করাও বেশ জটিল। বয়সন্ধির সময়কে মনোবিজ্ঞানে স্ট্রেস এন্ড স্টর্ম পিরিয়ড বলা হয়েছে। তাদের মানসিক চাপ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ এই সময় অত্যন্ত জরুরী। সন্তান কে বন্ধুদের দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যা উপলব্ধি করতে শেখান। যদি দেখে মনে হয় সে কোন মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে তাকে ভরসা দিন “ যে কোন সমস্যায় আমরা তোমার পাশে আছি, তুমি তোমার সমস্যা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারো।“

বন্ধুদের সঙ্গে বাচ্চাদের বিরোধ হতেই পারে। এমন টাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সমস্যাগুলিকে সুন্দরভাবে দক্ষতার সঙ্গে ম্যানেজ করা ও একটি অন্যতম লাইফ স্কিল। খুব বড়ো সমস্যা না হলে সবসময় আপনার হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন না ও হতে পারে। সরাসরি সন্তানের সব সমস্যা সমাধান না করে সমস্যা সমাধানে তাকে সাহায্য করুন। এতে  তার মধ্যে মকাবেলা করার ক্ষমতা তৈরি হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *