প্যানডেমিক পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য দিকের মত যে বিষয়ের উপর প্রভাব সবচেয়ে বেশি তা হল আপনার সন্তানের স্কুলিং স্টাইল। হোমস্কুলিং এ আপনার সন্তান সত্যিই শিখতে পারছে কিনা, অভিভাবক হিসেবে তা আপনি বুঝবেন কীভাবে ? সাধারণত স্কুলের যে চিরাচরিত পরিবেশ আমরা দেখে থাকি, হোমস্কুলিং কিন্তু তার থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু তার মানে এই নয় যে হোমস্কুলিং এ আপনার সন্তানের শেখার বিষয়টি আপনি মূল্যায়ন করতে পারবেন না। তেমন কতকগুলি উপায় আপনি এখানে দেখে নিতে পারেন, যেগুলি অনুসরণ করলে আপনার সন্তান কতটা শিখছে তা খুব সহজেই মূল্যায়ন করতে পারবেন।
-
ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখতে পারেন
স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকারা যে ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন, আপনি সেগুলির পরিবর্তে ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে দেখতে পারেন। যেমন ধরুন, এই সপ্তাহে আপনার সন্তান ইতিহাসের যে চ্যাপ্টার শেষ করেছে তার উপর একটি ক্যুইজ খেলতে পারেন। আবার চ্যাপ্টারের সারাংশের উপর একটি উপস্থাপনা দিতে বলতে পারেন। এই ধরণের উপায় কিন্তু স্কুলের চিরাচরিত পদ্ধতি থেকে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়ে থাকে।
-
কতটা বেশি শেখা হচ্ছে তা না দেখে সন্তান কতটা ভালো শিখতে পারছে তার উপর জোর দিন
সাধারনত বেশিরভাগ বাবা-মায়েরাই এই নিয়ে চিন্তিত যে তাদের সন্তান কত তাড়াতাড়ি কতটা বেশি শিখতে পারছে। কতটা ভালো শেখা হচ্ছে সে ব্যাপারে অধিকাংশ মা-বাবা ই উদাসীন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কত বেশি চ্যাপ্টার শেষ হচ্ছে তা না দেখে আপনার সন্তান কোন চ্যাপ্টার কত ভালো ভাবে বুঝতে পারছে। সেই বিষয় সম্পর্কে তার কতখানি স্পষ্ট ধারণা তৈরি হচ্ছে সেদিকে বেশি গুরুত্ব দিন। পরিমাণ নয়, এক্ষেত্রে গুনমান বিবেচনা করুন।
যেমন এই সপ্তাহে সে কতগুলি কবিতা মুখস্ত করেছে, কতগুলো অঙ্কের চ্যাপ্টার শেষ হয়েছে, এভাবে মূল্যায়ন করতে যাবেন না। এই সপ্তাহে সে যদি একটি কবিতাও পড়ে থাকে তাহলে সন্তান তা যথাযথ ভাবে বুঝতে পারছে কিনা, শব্দের অর্থ বুঝতে পারছে কিনা, সারাংশ বলতে পারছে কিনা সেসব দিকে জোর দিন।
আরো পড়ুন ১১ টি এমন লাইফ স্কিল যা আপনার সন্তান কে না শেখালেই নয়
-
খানিকটা ডিজিটাল উপায়ে আপনাকে ভাবতে হবে
যদিও বাচ্চাদের স্ক্রীন টাইম বেড়ে যাওয়ার কারণে অধিকাংশ বাবা- মায়েরাই এখন চিন্তিত। তবে একটু মাথা খাটিয়ে ব্যবহার করলে এই টেকনোলজিকেই আপনার সন্তানের হোমস্কুলিং মুল্যায়নের কাজে পারে। এমন বহু সাইট রয়েছে যেখানে যে কোন ভাষায় পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে। যে কোন ক্লাসের যে কোন বিষয়ের উপর পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। এই সাইট গুলিকে কাজে লাগিয়ে আপনি যে কোন বিষয়ে আপনার সন্তানের দক্ষতা দেখে নিতে পারেন। চ্যাপ্টার ভাগ করেও এখানে পরিক্ষা দেওয়া যায়। ভালো হয় যদি প্রতিটি চ্যাপ্টার শেষ করার পর সংশ্লিষ্ট চ্যাপ্টারের উপর একটি পরীক্ষা দিতে বলুন। এবার প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আপনি সন্তানের মূল্যায়ন করুন। কোন জায়গা গুলি ভালো তৈরি হয়েছে, কোথায় আরো বেশি পড়ার প্রয়োজন আছে তা সহজেই বুঝতে পারবেন। এছাড়া এমন বহু ভিডিও টিউটোরিয়াল পাবেন যেগুলি থেকে খুব সহজেই আপনার সন্তান কে কোন জটিল বিষয়ের স্পষ্ট ধারণা পেতে পারে। ডিজিটাল এই সুযোগ সুবিধাগুলি ব্যবহার করুন এবং আপনার সন্তানের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলুন।
আরো পড়ুন শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
-
পারসেনটেজ নয়, প্রোগ্রেস কে গুরুত্ব দিন
সন্তান কত বেশি নম্বর পেয়েছে ? বন্ধুদের তুলনায় বেশি পেয়েছে নাকি কম পেয়েছে ? যে বন্ধু আগেরবার কম পেয়েছিল, সে কিকরে এবার বেশি পেয়ে গেল ? সাধারনত এই মানসিকতা নিয়েই বেশিরভাগ অভিভাবক সন্তানের মূল্যায়ন করে থাকেন যা আসলেই অনুচিত। প্রকৃতির নিয়মে প্রত্যেক ব্যাক্তিই একেকটি অনন্য সত্ত্বা। প্রত্যেকের আগ্রহ, দক্ষতা, সামর্থ্য অপরের থেকে আলাদা। ফলে বন্ধুর থেকে তুমি কেন পরীক্ষায় কম নম্বর পেয়েছ- এই উপায়ে কখনই সন্তানের মূল্যায়ন করতে যাবেন না। নিজেকেই নিজের প্রতিযোগী হয়ে উঠতে শেখান।
অন্যদিকে শুধু নম্বর পাওয়াই শেষ কথা নয়। এমন কোন রিপোর্ট কার্ডই আজ অবধি তৈরি হয়নি যা আপনার সন্তানের যোগ্যতা পরিমাপ করার জন্য উপযোগী। কাজেই আপনার সন্তান কত নম্বর পেয়েছে তা বিচার না করে কতখানি উন্নতি করতে পেরেছে সেদিকে নজর দিন। গতবারের পরীক্ষায় ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে থাকলে এবারের পরীক্ষায় ৫৫ অথবা ৬০ শতাংশ পাচ্ছে কি না তা দেখুন। যদি প্রত্যেক পরীক্ষাতেই ৫০ বা ৫২ শতাংশ নম্বর আসতে থাকে তাহলে সমস্যার জায়গাটি খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী তাকে তৈরি করুন। নিজেকে সে আগের থেকে কতখানি উন্নতি (improve) করতে পারছে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
মুল্যায়নের যত ভালো উপায়ই আপনি নির্বাচন করুন না কেন, হোমস্কুলিং এর সময়ে আপনার সন্তান যদি সক্রিয় না থাকে তাহলে যে কোন পন্থাই বিফলে চলে যাবে। অভিভাবক হিসেবে এটি আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া শুধু মূল্যায়ন না করে তাদের হোমস্কুলিং এর সঙ্গে নিজেকেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত করুন। তারা কীভাবে সমস্যার সমাধান করছে, কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করছে তা লক্ষ্য করুন। কোন কিছু জানার আগ্রহ কাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে কিনা, প্রশ্ন করছে কিনা, গনিতের সমস্যা গুলি সমাধান করার জন্য কীভাবে সচেষ্ট হচ্ছে- এই সমস্ত দিকগুলির প্রতি নজর দিন- হোমস্কুলিং এও আপনার সন্তান অবশ্যই ভালোভাবে শিখতে পারবে।