গর্ভবতী বলেই যে মহিলাদের সারাদিন শুয়ে বসে কাটাতে হবে এমন ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। ব্যায়াম যে কোন মানুষের শরীরের জন্যই উপকারী। গর্ভবতী মায়েরাও এর বাইরে নন। মনে রাখবেন সুস্থ্য শরীরেই সুস্থ্য মন বাস করে। তাই শারীরিক ও মানসিক এই দুইয়ের সুস্থ্যতার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা অপরিহার্য। ভুলে গেলে চলবে না যে আপনার সুস্থ্যতা আপনার সন্তানের সুস্থতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
কেন গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করবেন?
গর্ভকালীন সময়ে যদি তেমন কোন শারীরিক জটিলতা না থাকে তাহলে অবশ্যই ব্যায়াম করুন। তবে গর্ভাবস্থায় ব্যায়াম করা কেন জরুরী সেটিই জেনে রাখা দরকার। গর্ভকালীন সময়ে ব্যায়াম করলে মা এবং শিশু উভয়ের রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। গর্ভাবস্থায় মায়েদের ওজন দ্রুত হারে বাড়তে থাকে। ফলে প্রায়শই দেখা যায় মায়েদের পিঠের ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা বা ক্র্যাম্প ইত্যাদি হতে থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে এই সমস্যাগুলি থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন। নিয়মিত ব্যায়াম গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের প্রসব ব্যথার উপর উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।মায়েদের হৃদস্পন্দন উন্নত করে আরো বেশি স্ট্যামিনা বাড়িয়ে তুলতে নিয়মিত ব্যায়াম ভালো ফল দেয়। ডায়বেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনতে রোজকার ব্যায়াম অনবদ্য ভূমিকা রাখে।মর্নিং ওয়াক বা ইভিনিং ওয়াক কোন রকম অতিরিক্ত আয়োজন ছাড়াই যে করা যায় । দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাচলা করা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বেশ উপকারী হতে পারে। নিজেদের সময় ও সুবিধা মত সকাল অথবা বিকেলের যে কোন একটি সময়কে আপনার হাঁটার জন্য বেঁছে নিন। তবে একটি ভালো ওয়াকিং সু এবং আরামদায়ক পোশাক পড়তে ভুলবেন না যেন। অনেক মায়েরাই গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপের স্বীকার হন। নিয়মিত হাঁটাচলা এই ঝুঁকি অনেক কমিয়ে আনে। মর্নিং ওয়াক বা ইভিনিং ওয়াক দেহে এনার্জি বাড়ায়, ফলে গর্ভাবস্থার ক্লান্তিভাব অনেকাংশে দূর হয়। যোগব্যায়াম উপকারে আসতে পারে সমীক্ষায় দেখা গেছে অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা যোগ ব্যায়াম পছন্দ করেন। কেননা এটি জয়েন্টে খুব বেশি চাপের সৃষ্টি না করেই পেশিগুলিকে তন করতে এবং নমনীয় করতে সাহায্য করে। তবে যেহেতু অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের শরীর খুব বেশি তাপ ছাড়তে পারে না তাই খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় এমন ধরণের যোগাসন এই সময় এড়িয়ে চলতে হবে। হার্টের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সপ্তাহে একবার বা দুবার হালকা জগিং অথবা সাঁতার আপনার ওয়ার্ক আউটের রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করতেই পারেন। যা কিছুই করুন না কেন, চিকিৎসকের পরামর্শ কিন্তু সব ক্ষেত্রেই আবশ্যক।আরেকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে তা হল যোগ ব্যায়ামের এমন ভঙ্গিগুলো আপনাকে এড়িয়ে যেতে হবে যেগুলির জন্য আপনাকে পিঠে ভর দিয়ে শুয়ে থাকতে হবে। যোগাসনের কোন ভঙ্গিমা যেন আপনার ভেনা কাভার উপর চাপ সৃষ্টি না করে। এর কারণে শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোড়া, বমি ভাব বোধ হতে পারে।অ্যারোবিক এক্সারসাইজ ইদানিং অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ এক্সারসাইজ নির্বাচন করা হয় এবং ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। প্রসবকালীন সময়ে আপনার সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করতে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের জন্য আয়োজন করা বিশেষ এই ক্লাসে আপনিও যোগদান করতেই পারেন। এখানে আপনারই মত আরো অনেক গর্ভবতী মায়েদের সঙ্গ আপনি লাভ করার সুযোগ পাবেন। ফলে শারীরিক সুস্থ্যতার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তিও লাভ করতে পারবেন।ব্রিদিং এক্সারসাইজ গর্ভবতী মায়েদের প্রায়শই ব্রিদিং এক্সারসাইজের পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্রিদিং এক্সারসাইজ বলতে আমরা সাধারণত ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ কেই বুঝে থাকি। কিন্তু গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের জন্য ডিপ ব্রিদিং অপেক্ষা অধিক কার্যকরী হয় শ্যালো ব্রিদিং এক্সারসাইজ। মেরুদণ্ড সোজা করে আপনার সুবিধা অনুযায়ী বসুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। এই সময়ে চেষ্টা করুন অন্য চিন্তাগুলোকে একেবারে মাথা থেকে সরিয়ে ফেলার। রোজ মোটামুটি পাঁচ থেকে দশ মিনিট এই ব্রিদিং প্র্যাকটিস করুন। উপকার পাবেন। ব্রিজ পোজসেতু ভঙ্গি বা ব্রিজ পোজ একজন গর্ভবতী মায়ের প্রসবকালিন সময়ের জন্য বেশ উপকারী। মায়ের বাড়ন্ত পেটের জন্য এটি একটি অত্যন্ত সহায়ক ব্যায়াম। চিত হয়ে শুয়ে আপনার হাত দুটি সোজাসুজি গোড়ালির কাছে দুপাশে রাখুন। এখন ধীরে ধীরে নিতম্ব উপরের দিকে তুলুন যাতে করে আপনার দেহ কাঁধ ও ধরের সঙ্গে এক লাইনে আসতে পারে। আপনার সুবিধা মত কয়েক সেকেন্ড এই ভঙ্গি ধরে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন। স্কোয়াটশ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে বাঁকা হয়ে বসার ভঙ্গিতে আসুন, ঠিক যেন আপনি শূন্যে বসে আছেন। দু এক সেকেন্ড এই পজিশনে থাকুন এবং আবার ধীরে ধীরে প্রাথমিক অবস্থায় ফিরে আসুন। মনে রাখবেন এক্ষেত্রে হাঁটুতে প্রেসার দেওয়া চলবে না বরং আপনার পায়ে প্রেসার দিন এবং নিতম্বকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়ে খুলতে সাহায্য করুন। এটি পেশির জন্য ভালো এবং প্রসবকালীন সময়ে ব্যথা কমাতে উপকারী।
বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ যে কোন রকম এক্সারসাইজ করার আগে নিজের গায়নোকলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। দেহের কোন অংশে ব্যথা অনুভব হলে বা কোন প্রকার সমস্যা দেখা দিলে গায়নোকলজিস্টের কাছে যেতে বিলম্ব করবেন না।
আরো পড়ুন 👇
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
গর্ভবতী মায়েদের শোওয়ার সঠিক ধরন কেমন হওয়া উচিৎ। কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
শেগর্ভবতী মায়েদের জন্য খাদ্য তালিকায় কোন খাবার গুলি রাখতে হবে?