ব্রাশ করার প্রতি অনীহা বেশিরভাগ বাচ্চাদের মধ্যেই দেখা যায়। একজন অভিভাবক হিসেবে সন্তানের মধ্যে এই অভ্যাস তৈরি করতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
পরিসংখ্যান বলছে ভারতবর্ষের ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বাচ্চাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে। আপনার শিশুর যাতে ভবিষ্যতে কোন গুরুতর দাঁতের সমস্যায় ভুগতে না হয় তা অভিভাবক হিসেবে আপনাকেই সুনিশ্চিত করতে হবে। তাই খুব ছোট থেকেই বাচ্চাদের মধ্যে ব্রাশ করা, মুখ ধোয়ার সুঅভ্যাস তৈরি করা অপরিহার্য। শৈশব থেকেই শিশুর মেনে চলার জন্য দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি তাকে তৈরি করে দিন। এই নিয়মিত অভ্যাস তার দাঁতের ক্ষয় হতে দেবে না, দাঁত ভালো রাখবে। তবে কোন বয়সে এবং কীভাবে আপনার শিশুর দাঁত ব্রাশের অভ্যাস তৈরি করবেন তা আপনার জেনে নেওয়া দরকার।
কোন সময় থেকে ব্রাশিং এর অভ্যাস তৈরি করবেন
দাঁত ওঠার সময় একেক শিশুর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। সাধারনত তিন – নয় মাস বয়সের মধ্যে বেশির ভাগ শিশুরই দাঁত উঠতে শুরু করে। তবে এই সময় থেকেই ব্রাশিং এর অভ্যাস যে তৈরি করতেই হবে এমন নয়। এই সময় আপনি সন্তানের দাঁত পরিষ্কার করার জন্য কোন ভেজা কাপড় বা গজ আঙ্গুলে মুড়ে বাচ্চার দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন। শিশুর এক থেকে দেড় বছর বয়স হলে ধীরে ধীরে ব্রাশিং এর অভ্যাস তৈরি করুন।
আপনার সন্তান ব্রাশ করতে না চাইলে কি করবেন?
শিশুদের মাড়ি সংবেদনশীল হয়। আবার নতুন দাঁত ওঠার ফলে তাতে অনেক সময় ব্যথাও হয়। সে জন্যই হয়তো আপনার সন্তান দাঁত ব্রাশ করা কে এড়িয়ে চলছে। সন্তান যদি ব্রাশ করতে না চায় সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন
-
সন্তানের প্রতি কঠোর হবেন না
ব্রাশিং এ শিশু অনিচ্ছুক হলে আপনি কখনই তার প্রতি কঠোর হতে যাবেন না। মাড়ি সংবেদনশীল হলে সেক্ষেত্রে টুথব্রাশ পাল্টে ফেলুন। নরম কোন টুথব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন যাতে মাড়ির ব্যথা না হয়।
আরো পড়ুন সন্তানের মূল্যবোধ গঠনে আপনার কর্তব্যঃ
-
অন্য কিছুতে মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করুন
শিশুরা সাধারনত নির্দিষ্ট সময়ে যে কোন একটি বিষয়েই মনোযোগ দিতে পারে। তাই কোন কারন ছাড়াই যদি আপনার সন্তানের ব্রাশিং এ সমস্যা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে সন্তানের মনোযোগ অন্য কোথাও সরানোর চেষ্টা করুন। গান বা গল্প করতে করতে অথবা পাখি দেখাতে দেখাতে ব্রাশ করাতে পারেন।
আপনিও সন্তানের সঙ্গেই কাজ করুন
সন্তানের সঙ্গে একই সময়ে আপনিও ব্রাশ করুন। শিশু সবসময় ই বড়োদের নকল করতে পছন্দ করে। আপনি যেভাবে ব্রাশ করছেন, সেটা দেখে সন্তান কে করতে বলতে পারেন। দেখবেন খেলার ছলেই তার ব্রাশিং হয়ে যাচ্ছে।
আরো পড়ুন আপনার সন্তান কে ঘড়ি দেখে সময় বলা শেখাবেন কীভাবে?
সন্তান কে ব্রাশিং উপভোগ করতে দিন
বাচ্চারা যে কোন জিনিস নিয়েই খেলতে ভালোবাসে। টুথব্রাশ বা টুথপেস্টের গায়ে যদি পছন্দের ছবি বা কার্টুন থাকে তাহলে সে দাঁত ব্রাশ করা কে আরো বেশি উপভোগ করবে। সন্তান কে ব্রাশিং শেখানোর ব্যাপারটি আপনার পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
এই গেল কীভাবে সন্তানকে ব্রাশিং এ অভ্যস্ত করবেন যদি সে একেবারেই দাঁত মাজতে না চায়। কিন্তু ভেবে দেখুন তো শুধু দাঁত মাজা অভ্যাস করালেই কি হয়ে যাবে? নাকি সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করা ও শেখাতে হবে? ভালোভাবে দাঁত না মাজলে দাঁতের ক্ষয়, মাড়ির সমস্যা ইত্যাদি খুব ছোট থেকেই দেখা দিতে পারে। সুতরাং সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ কীভাবে করতে তা আপনার সন্তান কে অবশ্যই শেখানো প্রয়োজন। আসুন দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু টিপস যা আপনার সন্তান কে এমন একটি রুটিনে অভ্যস্ত করবে যা তার দাঁত এবং মাড়ি ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
- প্রত্যেক দিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভালো করে দাঁত ব্রাশ করতে বলুন। দিনে দু-বার ব্রাশ করা অত্যন্ত জরুরী।
- দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার দাঁতের মধ্যে জীবাণু তৈরি করে, দাঁতের ক্ষয় করে। দিনে অন্তত একবার বাচ্চাকে ফ্লস করতে বলুন। এতে দাঁতের মাঝে আটকে থাকা খাবারের কনা বেরিয়ে যাবে।
- একটি ব্রাশ খুব বেশিদিন ব্যবহার করবেন না। এটি কখনই একটি স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি নয়। প্রতি একমাস অন্তর আপনার সন্তানের টুথব্রাশ অবশ্যই বদলে ফেলুন।
- চকলেট, মিষ্টি এসব বাচ্চাদের খাবারের তালিকায় বেশি থাকার ফলে তাদের দাঁতের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। তাই ডেন্টিস্ট এর কাছে নিয়মিত তাদের চেক আপের রুটিন তৈরি করুন।
এসবের পাশাপাশি সন্তানের মাড়ি ও দাঁত ভালো রাখতে আরো কিছু কিছু বিষয়ের দিকে আপনার খেয়াল রাখা জরুরী। যেমন চিনিযুক্ত প্যাকেট জাতীয় পানীয় যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। কারন এই সকল পানীয়তে যে চিনি থাকে তা শিশুর মুখের ভিতর ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে এবং দাঁতের বাইরের অংশে ক্ষয় করতে শুরু করে। এই সব পানীয়ের বদলে আওনি বাড়িতে তৈরি করা ফলের রস দিতে পারেন। এছাড়া আরো কিছু খাবার যেমন- দুধ, সোডা ওয়াটার, শরবত ইত্যাদিও এড়িয়ে চলুন কেননা এগুলি ও দাঁতের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে ক্ষয়ের কারন হতে পারে। অনেক মা-বাবাই মনে বাচ্চার দুধের দাঁত পড়ে যাবে তাই বেশি চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু ছোট থেকেই বাচ্চাদের দাঁত ও মাড়ির যত্ন শেখানো দরকার। কারন এই অভ্যাস ই ভবিষ্যতে তাদের দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে।
Pingback: আপনার সন্তান কে ঘড়ি দেখে সময় বলা শেখাবেন কীভাবে? – Parenting
Pingback: Parenting tipকি করবেন সন্তান যদি ছোটখাটো ব্যাপারেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে? - Parenting
Pingback: Parenting tips: কি করবেন সন্তান যদি ছোটখাটো ব্যাপারেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে? - Parenting