আপনার শিশুর জন্য যা কিছু পুষ্টিকর যেগুলো তার বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অপরিহার্য তাই সুষম খাবার। এই সুষম খাবারের অভ্যাস ছোট থেকেই তৈরি করা গেলে একদিকে যেমন তাদের বেড়ে ওঠার পক্ষে ভালো তেমনই অন্য দিকে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক হয়।
কিভাবে তৈরি করবেন শিশুর সুষম খাবারের অভ্যাস?
অনেক বাচ্চারাই সারা বছর কোন না কোন রোগে ব্যাধিতে ভোগে। যেমন ধরুন পেটের সমস্যা, জ্বর, সর্দি, কাশি, স্কিনের সমস্যা ইত্যাদি। এগুলো মূলত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। শিশুর ইমিউনিটি সিস্টেমকে জবরদস্ত করে তুলতে প্রয়োজন সুষম খাবারের। কিভাবে দিবেন শিশুকে সুষম খাবার? খেয়াল রাখতে হবে শিশুদের আহারের তালিকায় যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন এ সহ প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি থাকে। আর এগুলির জন্য সুষম খাবার হিসেবে রাখতে হবে মরশুমি ফল ও শাক- সবজি।
সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে হলে প্রথমেই দেখতে হবে শিশুর ওভার ইটিং বা আন্ডার ইটিং এর প্রবণতা রয়েছে কি না।
● ওভার ইটিং এর সমস্যা থাকলে কি করবেন?
গবেষণায় দেখা গেছে আমাদের পেট ভরে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে মস্তিষ্কে বার্তা পৌঁছয়। তাই অল্প খাবার বেশিক্ষণ ধরে খাওয়ার পরামর্শ ডায়েটিসিয়ানরা দিয়ে থাকেন। যদি দেখেন আপনার শিশুর মধ্যে বারবার খাবার খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে তাহলে প্রথমেই আপনাকে পরিমানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একসঙ্গে অনেকটা খাবার না দিয়ে অল্প অল্প করে খাবার বারবার শিশুকে খেতে দিন। ছোট প্লেটে খাবার পরিবেশন করুন।
কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা?
●আর যদি শিশুর কম খাওয়ার প্রবণতা থাকে, তাহলে?
যদি দেখেন শিশু খেতে চায় না, পরিমানের তুলনায় কম খাচ্ছে, তাহলে কি করবেন? এখানে বুঝতে হবে শিশুর খিদে পায় না। এরকম পরিস্থিতি দেখলে তার খিদে বাড়ানোর চেষ্টা করুন। প্রতিদিন একই সময়ে শিশুকে খাবার পরিবেশন করুন। এরকম কিছু দিন চলতে থাকলে দিনের সেই সময়ে শিশুর খিদে পাবে। কখন কোন স্ন্যাকস দিচ্ছেন সেদিকে একটু খেয়াল রাখুন। বাচ্চা যদি এক্টিভ না হয় তাহলে সেই স্ন্যাকসও তার ছোট টামিতে অনেকটাই জায়গা দখল করে রাখে। সুতরাং লাঞ্চ বা ডিনারের আগে যতোটা সম্ভব শিশুকে স্ন্যাকস দেওয়া এড়িয়ে চলুন।
● রঙিন ফল ও শাক সবজি দিন
সুষম খাবার অভ্যাস রঙ্গিন ফল ও শাক সবজি ছাড়া তো সম্ভবই নয়। শিশুর খাদ্য তালিকায় অন্তত চার থেকে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের শাক সবজি ও ফল রাখুন। আলাদা আলাদা রঙের বাহারি খাবার শিশুর মন কেড়ে নেবেই। সুন্দর করে পরিবেশন করা খাবার বাচ্চারা খুব আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করে।
ফল বা শাক সবজির প্রতি খুদেটির আগ্রহ বাড়াতে বাড়ির টবেই লাগিয়ে ফেলতে পারেন সবজি। যেমন ধরুন লাল বা হলুদ ক্যাপসিকাম বা চেরি টমেটো। শিশুকে রোজ টবে জল দেওয়ার কাজে নিযুক্ত করুন। টবের সবজি প্লেটে দেখলে কোন বায়না ছাড়াই সে খেয়ে নেবে।
● খাবার সুষম হোক, কিন্তু স্বাদে কম্প্রোমাইজ নয়
সুষম খাবার দিতে গিয়ে একেবারেই সাদা মাটা মেনু করে ফেলবেন না। মাঝে মাঝে স্বাদ বদল করুন। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মেনু ঠিক করুন। তাতে সবরকম পুষ্টিও পাবে আবার মেনুও একঘেয়ে হবে না। যেমন ধরুন, সবসময় মাছের ঝোল না বানিয়ে যদি মাছের কাটলেট বানিয়ে দেন তাহলে বাচ্চারা তা আনন্দের সঙ্গে খাবে। আবার ধরুন, বাচ্চা যদি ফল খেতে না চায় সেক্ষেত্রে ছোট ছোট করে ফল কেটে তাতে ফ্রেশ ক্রীম মিক্স করে ফ্রুট স্যালাড বানিয়ে দিতে পারেন। জলখাবারে রোজই রুটি তরকারি না বানিয়ে কখনও কখনও বিভিন্ন সবজি দিয়ে নুডলস বানিয়ে দিন অথবা বানিয়ে দিতে পারেন স্প্রিং রোলের মত কোন প্রিপারেশন।
সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি বলতে শুধুই খাদ্য নয়, বরং পানীয়ও বোঝায়। দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খাওয়ার অভ্যাস ও তৈরি করতে ভুলে গেলে চলবে না। শুধুই জল নয়, স্যুপ, ডাবের জল, লস্যি, শরবত, ফলের রস এগুলোও ডায়েটে রাখতে হবে।
অনেক মায়েরাই অভিযোগ করে থাকেন বাচ্চারা সবজি মুখেই তুলতে চায় না, সুষম খাবারের অভ্যাস হবে কি করে? এ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদেরা শাক সবজি খাওয়াতে একটু ক্রিয়েটিভ হওয়ার পরামর্শ মায়েদের দিয়েছেন। যেমন ধরুন গাজর, বিনস এই সব সবজি খাওয়াতে পারছেন না। পাস্তা বা নুডলসের সঙ্গে রান্না এই সবজি গুলো অনায়াসেই খাওয়াতে পারেন। শাক সবজি বাজার করতে যাওয়ার সময় শিশুকে নিয়ে যান। খাবার তৈরির সময় সন্তানকেও সঙ্গে নিন। পুষ্টিকর খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে। সুষম খাবারের অভ্যাস গঠন আপনার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
১) শিশু জল খেতে চায় না। দেহের আর্দ্রতা বজায় রাখতে কি করণীয়?
উওর : স্যুপ জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় আরো বেশি করে রাখুন।
২) জাঙ্ক ফুড ই বেশি প্রিয়। বিকল্প কি?
উওর : বাইরের পছন্দের খাবার বাড়িতেই বানিয়ে দিন।
৩) দুধ খেতে না চাইলে কি করা যেতে পারে?
উওর : পনির, ছানা ইত্যাদি ডায়েটে রাখুন।
৪) সুষম খাবার খাওয়া সত্বেও শিশু বারংবার জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভোগে। কী করনীয় ?
উওর : ইমিউনিটি আরো বাড়িয়ে তুলতে হবে। দুধ হলুদ, চ্যবনপ্রাস এগুলো দিন।
৫) বাচ্চার কোষ্টকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে। কী করবেন ?
উওর : সকালবেলা কাঁচা হলুদ খাওয়াতে পারেন।
আরো পড়ুন –
জেনে নিন সন্তানকে ঘড়ি দেখানো শেখাবেন কিভাবে
আপনার সন্তান প্রায়শই বন্ধুদের সাথে লড়াই করছে? জেনে নিন সমস্যা সমাধানের কিছু অসাধারণ টিপস
টিভি বা স্মার্টফোন ছাড়া শিশু এক গ্রাসও মুখে তুলতে চায় না। অভ্যাস ছাড়াবেন কিভাবে?
রাগারাগি হয়েছে বলে সন্তানের সঙ্গে কথা বন্ধ রেখেছেন। বড় ক্ষতি করে ফেলছেন না তো ?
Pingback: সন্তান ভুল করলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবেন । জেনে নিন অভিভাবক হিসেবে আপনার কর্তব্য - Parenting
Pingback: সবে মাত্র শিশুকে স্কুলে দিয়েছেন।বাড়িতে এগুলো শেখাতে ভুলবেন না। - Parenting
Pingback: লোকের সঙ্গে একেবারেই মিশতে পারে না সন্তান। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন - Parenting