বাড়িতে দেড় থেকে দু- বছর বয়সের ছোট বাচ্চা থেকে থাকলে বাবা মায়েদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার দরকার রয়েছে। কেননা শিশুরা ছোট কিছু দেখলেই তা মুখে পুরে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যায়। হাতের সামনে যা হোক কিছু পেলেই শিশু যদি গিলে ফেলে তাহলে তা শিশুর শ্বাসনালীতে আটকে গিয়ে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
কি করবেন যদি ছোট বাচ্চারা কিছু গিলে ফেলে?
বাড়িতে ছোট বাচ্চা রয়েছে। তাদের নানান দুস্টুমির জন্য বড়রা বেশ চিন্তিত থাকেন। না জানি কখন কোন বিপদ ঘটিয়ে বসে। আরো চিন্তার বিষয় হল শিশু কিছু মুখে পুরে দিয়ে তা গিলে ফেললে। যাদের বাড়িতে টডলার আছে তারা প্রায় সব সময়েই এই সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। দেড় থেকে দু- বছরের বাচ্চাদের মধ্যে এই প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায়। ছোট কিছু হাতের সামনে দেখতে পেলেই তৎক্ষণাৎ তা মুখে পুরে নেয় এবং গিলে ফেলে। ছোট খেলনার টুকরো হোক বা পয়সা, শিশু যদি এরকম কিছু গিলে ফেলে তাহলে তা যে ভয়াবহ বিপদ ঘটাতে পারে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। একবার যদি শিশু এই রকম কিছু গিলে ফেলে এবং তা শ্বাসনালীতে পৌঁছে গিয়ে আটকে যায় তাহলে তা পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেয়। এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে একেবারেই সময় নষ্ট করবেন না। তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিন।
কেবল শিশুদের ক্ষেত্রে নয়, গলায় কিছু আটকে যাওয়া বড়দের ক্ষেত্রেও সাংঘাতিক সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় তাড়াতাড়ি খাওয়ার কম্পিটিশন অনেকেই করে থাকেন। এমন অবস্থায় খাবার গলায় আটকে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। আবার শুকনো খাবার খাওয়ার সময়েও কিন্তু একই বিপদ ঘটতে পারে। এই কারণে শুকনো খাবার খাওয়ার সময় হাতের কাছে জল রাখা প্রয়োজন।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন শিশুর শ্বাসনালীতে কিছু আটকে গেলে কিভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে তা নির্ভর করে শিশুর বয়স কেমন তার উপর, পাশাপাশি কি ধরনের জিনিস তার গলায় আটকে গেছে তার উপরেও
● ছোট বাচ্চার গলায় তরল খাবার আটকে গেলে
শিশু খুব ছোট হলে সাধারণত তরল খাবারই তাদের খাওয়ানো হয়। সেক্ষেত্রে খাবার খাওয়ানোর সময় যদি কোন ভাবে শিশুর শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গিয়ে থাকে তাহলে মাথা কিছুটা নীচের দিকে করে শুইয়ে দিন। এবার পিঠে চাপড় মারতে থাকুন। সমস্যার সমাধান নিজেই করতে পারবেন।
● ছোট বাচ্চার শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গিয়ে দমবন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি হলে
খাবার খেতে গিয়ে শ্বাসনালীতে খাবার আটকে এমন পরিস্থিতি হতে পারে যে দমবন্ধ হয়ে আসছে, শিশু কথা পর্যন্ত বলতে পারছে না। এমন অবস্থায় শিশুকে জোরে জোরে কাশতে বলুন। জোরে জোরে কাশলে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাবার বেরিয়ে আসবে।
আরো একটি বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। পাঁজরের নীচে ধাক্কা দিয়ে শ্বাসনালীর খাবার বের করা সম্ভব হয়। এর পোশাকি নাম হেইমলিচ ম্যানিউভার। তবে এই পদ্ধতি সঠিক ভাবে কাজে লাগাতে জানতে হবে। যদি তা জানা না থাকে, তাহলে অযথা সময় নষ্ট করতে যাবেন না। যত দ্রুত সম্ভব শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটুন। মনে রাখবেন এক্ষেত্রে সময় নষ্ট করা মানে জীবনের ঝুঁকি আরো বেড়ে যাওয়া। এরকম বিপদের সময় উপস্থিত হলে তার প্রতিটি মুহূর্ত কিন্তু অত্যন্ত দামী। তাই সময় নষ্ট একদমই নয়।
● ছোট বাচ্চার খেলনার ভাঙা টুকরো বা পয়সার মত শক্ত কোন জিনিস গিলে শ্বাসনালীতে আটকে গেলে
কোন কারণ বশত যদি ভাঙা খেলনার টুকরো, পয়সা বা এই জাতীয় শক্ত কোন জিনিস শিশু গিলে নেয় এবং তা শ্বাসনালীতে আটকে যায় সেক্ষেত্রে ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে সময় নষ্ট একেবারেই নয়। শ্বাসনালীতে কোন কিছু আটকে গেলে তা ফুসফুসে অক্সিজেনের সাপ্লাইয়ে বাধা দেয়। ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অক্সিজেন না পৌঁছলে ব্রেন ও হার্ট কাজ করতে পারে না। এই অবস্থায় বাইরে থেকে অক্সিজেন দেওয়া না গেলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে পড়ে। এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে অবিলম্বে হাসপাতালে যান। এক্ষেত্রে একটাই উপায়- ব্রঙ্কোস্কপি করে শ্বাসনালী থেকে জিনিস বের করে আনা। সুতরাং সময় নষ্ট একটুও নয়।
গলায় খাবার আটকে যাওয়া বা বিষম খাওয়া ছোটখাটো ঘটনা মনে হলেও কখনও কখনও কিন্তু তা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরিস্থিতি আসলে কি করতে হবে সেসব জেনে রাখা ভালো। তবে এমন পরিস্থিতিতে যাতে পড়তে না হয় সেজন্য যথাযথ সাবধানতা মেনে চলতে পারলেই উত্তম। খাবার সময় তাড়াহুড়ো নয়। “খাবার খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই” বাচ্চাদের তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিয়ে কাজ শেষ করার মানসিকতা থাকলে এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সংশোধনের প্রয়োজন আছে। আর বাড়িতে টডলার থাকলে তাকে নিরাপদ রাখতে ছোট জিনিস তার নাগালের বাইরে রাখুন।
১।বাচ্চা সিলিকা জেল খেয়ে ফেলে কি করণীয়?
এটি বিষ নয়। অতিরিক্ত আর্দ্রতা শুষে নেয় মাত্র। বাচ্চাকে বেশি করে জল খাওয়ান, তবে পরিস্থিতি জটিল হয়ে দাঁড়ালে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
২।বাচ্চা যদি চুইংগাম গিলে ফেলে তাহলে কি করতে হবে?
টেনশনের কিছু নেই। কারণ এটিও খাবারের মতোই হজম হয়ে যাবে। তবে অন্য খাবারের তুলনায় এটি হজম হতে একটু বেশি সময় নেয়।
৩।বাচ্চার গলায় লজেন্স আটকে গেলে কি করবো?
খুব ছোট বাচ্চাদের এই জাতীয় জিনিস না দেওয়াই ভালো। বদলে ললিপপ দিতে পারেন।
আরো পড়ুন –
সন্তানের মূল্যবোধ গঠনে আপনার কর্তব্য
সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
এই গরমে দেহে জলের ঘাটতি মেটাতে খাবারে কি দেবেন শিশুকে
“শুধু সন্তানের দিকেই ফোকাস করবেন না”: অভিভাবকদের জন্য এমনই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সুধা মূর্তি
Disclaimer- আজকের অ্যাটিক্যালটি লেখা হয়েছে শুধুমাত্র পাঠকের তথ্যের জন্য, আপনার শিশুর উপরিউক্ত কোন সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
Pingback: কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে? কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা? - Paren