গর্ভবতী মায়েদের শোওয়ার সঠিক ধরন কেমন হওয়া উচিৎ। কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

গর্ভবতী মায়েদের শোওয়ার সঠিক ধরন কেমন হওয়া উচিৎ। কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

রিমিতার উপুর হয়ে পেটে ভর দিয়ে শোওয়া বরাবরের অভ্যেস।নাহলে তার ঘুমই আসবে না।কিন্তু গর্ভবতী সময়ে এই পেটে ভর দিয়ে শোওয়া নিয়ে এবার সে বেশ চিন্তিত। কেননা রিমিতা মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চলেছে আর কিছু দিনের মধ্যেই। কিন্তু গর্ভকালীন সময়ে তো আর যেমন তেমন ভাবে শোওয়া চলবে না। প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। তাই রিমিতা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ীই এই কটা দিন চলার চেষ্টা করছে। আর চেষ্টা করছে অন্য উপায়ে শোওয়ার অভ্যেস তৈরি করতে। সন্তান ধারনের এই কয়েকমাস সময় যে কোন নারীর জন্যই এক বিশেষ অনুভুতির সময়। রোজকার জীবনযাত্রা, খাওয়া- দাওয়ার পাশাপাশি গর্ভবতী মায়েদের শোওয়ার ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। রিমিতার মত আরো মায়েরা আছেন যাদের শোওয়ার ধরন ভালো নয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় তো এই অভ্যেসগুলো একটু পাল্টাতে হবে। আপনিও যদি একজন গর্ভবতী মা হয়ে থাকেন অথবা যদি পরিবার পরিকল্পনার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে আপনারও জেনে রাখা উচিৎ এই সময়ে সঠিক শোওয়ার ধরন কোনটি। চলুন দেখে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে কি বলছেন- প্রথমেই খুব বেশি জটিলতায় না গিয়ে একটু সাধারণভাবে বোঝার চেষ্টা করা যাক। গর্ভকালীন নয় মাস সময়কালকে তিন মাস করে ভাগ করে মোটামুটি তিনটি ত্রৈমাসিকের কথা বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। এর মধ্যে শুরুর দিকের তিন মাস অর্থাৎ প্রথম ত্রৈমাসিক সময়ে আপনি যে কোন ভাবেই ঘুমোতে পারেন। এই সময়ে আপনি পাশ ফিরে শুতে পারেন বা চিত হয়ে শুতে পারেন। তাতে কোন সমস্যাই হবে না। এই সময় ভ্রুন মায়ের জরায়ুতে কোন চাপ সৃষ্টি করে না। কেননা ভ্রুন পিউবিক মোডে থাকে। তাই এই তিন মাস সময় যে কোন ভাবে ঘুমনো সম্পূর্ণ নিরাপদ। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময় অর্থাৎ চতুর্থ থেকে ষষ্ঠতম মাসে কখনই পেটের উপর চাপ দিয়ে উপুর হয়ে ঘুমনো উচিৎ নয়। শিশুর আয়তন প্রথম ত্রৈমাসিকের তুলনায় এসময় বড় থাকে। ফলে মা উপুর হয়ে শুলে শিশুর উপর যেমন চাপ পড়ে, একইরকম ভাবে মায়ের জরায়ুর উপরেও চাপ সৃষ্টি হয়। এছাড়া চিৎ হয়ে শোওয়াও যতটা সম্ভব বর্জন করুন। অনেক সময় দেখা যায় চিৎ হয়ে শোওয়ার ফলে মায়ের শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। যে রক্তনালী হৃদপিণ্ডে রক্ত বহন করে, চিৎ হয়ে শোওয়ার ফলে সেই রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি হয়। তাই শ্বাসকষ্টের সমস্যা হতে পারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় গর্ভবতী মায়ের খুব বেশি অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। এটিও অনেক সময় চিৎ হয়ে শোওয়ার কারনেই হয়ে থাকে। এই ধরণের জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই সত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর আপনি যদি গর্ভাবস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে থেকে থাকেন, তাহলে কিভাবে শোবেন? বিশেষজ্ঞরা এই সময়ে পাস ফিরে শোওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একে সাধারণত sleep on side বা SOS বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থায় একজন নারী চিৎ হয়ে শুলে তার মেরুদণ্ড ও কোমরের হাড়ে চাপ বৃদ্ধি হয়। এটি শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। এই SOS বা sleep on side পদ্ধতিতে শোওয়ার অভ্যেস করলে মেরুদণ্ড, কোমরের হাড় বা পিঠের হাড়ে কোন রকম চাপ পড়ে না। আর এর ফলে গর্ভবতী মায়েদের নিশ্বাস- প্রশ্বাসেরও কোন সমস্যা হয় না। এছাড়াও গায়নোকোলজিস্টরা ডান দিকে ফিরে শোওয়ার চাইতে বাঁ দিকে ফিরে শোওয়ার কথা বলে থাকেন। শুধু গর্ভবতী মহিলারাই নন, বরং যে কোন মানুষের ক্ষেত্রেই বাম দিকে ফিরে শোওয়া ভালো। এতে ভালো ঘুম হয়। আর এর বিজ্ঞানসম্মত কারণটি হল আমাদের লিভার যেহেতু দেহের বাম দিকে থাকে, তাই ডান দিকে পাশ ফিরে শুলে লিভারে কোন রকম চাপ পড়ে না। ঘুম ভালো হয়। গর্ভাবস্থায় একজন নারীর দেহে নানা রকমের পরিবর্তন ঘটতে থাকে। দ্রুত ওজন বৃদ্ধি, হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা এই সময়ে যে কোন নারীর ক্ষেত্রেই নিত্যসঙ্গী। ঘুমের সময় যে কোন গর্ভবতী মহিলাই তার আরামদায়ক শোওয়ার ভঙ্গি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু সাবধানতা কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। কেননা বারংবার ঘুমের মধ্যে পাশ ফিরতে গিয়ে অযথাই হাড়ের জয়েন্টে চাপ পড়তে পারে। এছাড়া এই কারণে অনেক সময়েই রক্তসঞ্চালনের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। ফলে গর্ভবতী মায়ের নিশ্বাস নিতে অসুবিধা হয় এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আবার কোমর বা মেরুদণ্ডে ব্যথাও বেড়ে যেতে পারে। তাই এই সময় মায়েদের আরামদায়ক ঘুমের জন্য পাশ ফিরে দু পায়ের মাঝে একটি বালিশ রেখে শোওয়ার জন্য চিকিৎসকেরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অনেক গর্ভবতী নারীরাই বলছেন এভাবে দু পায়ের মাঝে বালিশ রেখে শুলে ভালো ঘুম হয়। এছাড়া পেটের নীচে একটি বালিশ রাখা যেতে পারে। আরো ভালো হয় যদি পিঠের দিকেও একটি বালিশ রেখে ঘুমোতে পারেন। পরিশেষে বলবো গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের গভীর ও পর্যাপ্ত ঘুম হওয়া সব চাইতে বেশি প্রয়োজন। আপনার সুবিধা মত দিক পরিবর্তন করে শোওয়ার অভ্যেস করুন। এসব নিয়ে প্রয়োজনের বেশি দুশ্চিন্তা একেবারেই নয়। তেমন কোন সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে যেতে বিলম্ব করবেন না।

বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ অ্যাটিক্যালটি লেখা হয়েছে পাঠকের তথ্যের জন্য, কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আরো পড়ুন –

অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কোন কাজগুলো করবেন আর কোনগুলো করবেন না। জেনে নিন 10টি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

সবে মাত্র শিশুকে স্কুলে দিয়েছেন।বাড়িতে এগুলো শেখাতে ভুলবেন না।

শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো

বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি

গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাদ্য তালিকায় কোন খাবার গুলি রাখতে হবে?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *