সন্তানের প্রতিটি সমস্যায় সবসময় তাদের সঙ্গে থাকা পিতামাতা বা শিক্ষক শিক্ষিকা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়। আসলে এমনটাও হওয়া উচিৎ নয়। অভিভাবকের কর্তব্য বাচ্চাকে এমন স্কিল তৈরি করা যাতে সন্তান নিজেই ধীরে ধীরে সমস্যা সমাধান করতে পারে। খেলা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া হোক অথবা কঠিন কোন অঙ্ক কষাই হোক না কেন- এরকম বহু ব্যাপারে শিশু কম বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে এবং তাদের সমাধানের প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে সন্তানের সমস্যা আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হলেও বাচ্চাদের কাছে কিন্তু কখনই তা ছোটখাটো নয়। তাই এই সমস্যাগুলির সমাধান হওয়া জরুরী।
সন্তান কে নিজে থেকে সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত করুন
প্রথমে আপনি ছোট ছোট সমস্যা দিয়ে শুরু করতে পারেন। সন্তান যখন আপনার কাছে কোন ছোট সমস্যা নিয়ে হাজির হচ্ছে তখন আপনি আগেই তা সমাধান করতে যাবেন না, তাকে নিজে থেকে সমাধান খুঁজে বের করতে বলুন। সমাধান উঠে আসুক বা না আসুক তাকে চেষ্টা করতে দিন। মনে করুন বাচ্চার স্কুলের হোমওয়ার্ক আছে যা তাকে শেষ করতেই হবে। এই অবস্থায় তাকে আপনি কখনই হোমওয়ার্ক করে দিয়ে সমাধান করতে যাবেন না, কীভাবে, কোনটি আগে বা কোনটি পরে করলে দ্রুত হোমওয়ার্ক শেষ করা যাবে সে সম্পর্কে তাকে বলুন এবং শিশুকে নিজেকে করতে দিন। প্রয়োজনে সব রকম সাহায্য আপনি তাকে করুন, কিন্তু মূল কাজটি তাকে দিয়েই সমাধান করান।
কোন নির্দিষ্ট সমস্যার উদাহরন দিয়ে সন্তানের কাছে সম্ভাব্য সমাধান জানতে চান
আপনার চারপাশের পরিবেশ থেকে যে কোন সমস্যার কথা সন্তানের সামনে তুলে ধরুন। যেমন পরিবেশ দূষণ হতে পারে। প্রথমে তাকে এই সম্পর্কে কিছু কথা আপনি নিজে থেকে বলুন। যেমন কোন কোন কারনে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে, আমাদের স্বাস্থ্যের উপর এর কি প্রভাব পড়ছে, অন্যান্য প্রাণীদের উপর কি কি প্রভাব রয়েছে, ইত্যাদি। সমস্যা সম্পর্কে তাকে সচেতন করুন। তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করুন এমন পরিস্থিতিতে তোমার কি মনে হয় , কীভাবে আমরা সকলে মিলে এমন সমস্যার সমাধান করতে পারি? মনোবিজ্ঞান অনুযায়ী সারাদিনে একজন শিশুও প্রাপ্তবয়স্কদের সমান সংখ্যক চিন্তা উৎপন্ন করে থাকে। হতে পারে সত্যি ই কোন সমস্যার অনন্য সমাধান কোন শিশুর মধ্যে থেকেই উঠে এলো। এটি একটি খুব সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়।
আরো পড়ুন “শুধু সন্তানের দিকেই ফোকাস করবেন না”: অভিভাবকদের জন্য এমনই কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সুধা মূর্তি
সন্তান কে শেখান যে ব্যর্থতা আসা খুবই স্বাভাবিক
শিশু যে রোজকার জীবনে যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হয়, তার সমাধান সে করতে পারবে এমন নয়, বরং না করতে পারাটাই স্বাভাবিক। এই সময় সে যাতে হাল ছেড়ে না দেয় সেদিকে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। একটি উদাহরণের সাহায্য নিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে। ধরুন আপনার সন্তান কোন আঁকা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল। তার ছবিটি ভালো হওয়া সত্ত্বেও সে পুরষ্কার পায়নি। এক্ষেত্রে সন্তানের সঙ্গে ব্যর্থতার কারন খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। পরবর্তী সময়ে কোন কোন ব্যাপারে তাকে যত্ন নিতে হবে তা বুঝিয়ে বলুন। অভিভাবক হিসাবে আপনি তাকে ব্যর্থতা মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে শেখান।
সন্তানের প্রশ্ন করা কে বাহবা দিন
শিশুরা অনেক প্রশ্ন করে। তাদের মনে অসীম জিজ্ঞাসা। অজানাকে জানতে তারা বড়দের অগনিত প্রশ্ন করতেই থাকে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই আমরা তাদের একের পর এক প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে উঠি। যা কখনই সঠিক নয়। প্রশ্ন না করে কোন কিছুই ভালোভাবে শেখা যায় না, আর আপনি যখন সন্তানের মধ্যে সমস্যা সমাধানের স্কিল তৈরি করছেন সেখানে প্রশ্নবাণ আসাতো খুবই স্বাভাবিক। সন্তান প্রশ্ন করলে বিরক্ত হবেন না, বরং তাকে বাহবা দিন, প্রশ্ন করতে আরো বেশি উৎসাহিত করুন। যখন আপনি সন্তানের সামনে কোন সমস্যা উপস্থাপন করছেন বা তার কোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছেন সেই সময় যতখানি সম্ভব তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিন। তার মনে প্রশ্ন জেগে উঠলে তবেই সে সমাধানের দিকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। খুব সহজেই সন্তানের মধ্যে সমস্যা সমাধান স্কিল গড়ে উঠতে শুরু করবে।
শুধু শেখালে হবে না, অনুশীলন করান
সন্তান যখন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তখন আপনি তাকে সাহায্য করতে পারেন। কিন্তু কখনই সমাধানের জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। তাকে সমাধানের সময় ও সুযোগ দিন। দেখা যাচ্ছে আপনার সন্তান স্কুলে যাওয়ার সময় প্রায়শই হোমওয়ার্কের খাতা নিয়ে যেতে ভুলে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিভাবক হিসেবে আপনি কি করবেন? আপনি তাকে আগের দিন রাতে তার স্কুলের ব্যাগ গুছিয়ে রাখার কথা বলতে পারেন। পাশাপাশি তার ঘরের দেওয়ালে একটি নোট লিখে সেঁটে দিতে পারেন যাতে সে নোট দেখে স্কুলের ব্যাগ গুছিয়ে নিতে পারে।
আরো পড়ুন হোমস্কুলিং এ আপনার সন্তান সত্যি ই কতটা শিখতে পারছে, তা বুঝবেন কিকরে?
শুধুমাত্র একটি সমাধান নয়, অন্যান্য সমাধান ও তাদের ফলাফল নিয়েও আলোচনা করুন
সমস্যা সমাধানের একটি মাত্র পন্থা না ভেবে সম্ভাব্য অন্য সমাধান নিয়ে ও আলোচনা করুন। অন্য সমাধানের উপায় গ্রহণ করলে তাকে কি কি করতে হবে, সেই সমাধানের ফলাফল কি হতে পারে সে ব্যাপারে আলোচনা করুন। এটি আপনার সন্তানের মধ্যে সমস্যা সমাধান স্কিল গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
ঈশ্বর প্রত্যেকের মধ্যেই কম বেশি সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা দিয়েছেন। কখনও কখনও সন্তান কে তার স্বাছন্দ্য অনুযায়ী স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিন। কাজের স্বাভাবিক পরিনতির মধ্য দিয়ে সে নিজে থেকেই অনেক কিছু শিখবে।
Pingback: গুড পেরেন্টিং এর 10 টি নীতি – Parenting
Pingback: সন্তানের মূল্যবোধ গঠনে আপনার কর্তব্য – Parenting
Pingback: যে কোন ভারতীয় বাবা-মা মেয়েকে বড় করতে গিয়ে যে ভুল করে থাকেন, আপনিও তেমনটা করে ফেলছেন না তো? তাহলে এক