কর্তৃত্বপূর্ণ বা Authoritative পেরেন্টিং স্টাইলকেই বিশেষজ্ঞরা অধিক গুরত্ব দিয়ে বিচার করেছেন। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এখনও অভিভাবকদের মধ্যে পেরেন্টিং স্টাইলের ব্যাপারে তেমন ভাবে সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যদিও উন্নত দেশের ক্ষেত্রে চিত্র টি একেবারেই আলাদা। সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের ক্ষেত্রে আপনার পেরেন্টিং ই একমাত্র চাবিকাঠি। শিশু কিভাবে বড়ো হচ্ছে, তার সবটাই নির্ধারিত হয় আপনার অভিভাবকত্ব শৈলীর দ্বারা। কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকত্ব এমন একটি পেরেন্টিং স্টাইল যা সন্তানের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী হিসেবে প্রমানিত হয়েছে। আর সবচেয়ে ভালো ব্যাপারটি হল কিছু উপায় অনুসরণ করে যে কোন মা-বাবা ই কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক হয়ে উঠতে পারেন। চলুন দেখে নিই এমন বারোটি উপায় যা আপনাকেও করে তুলতে পারে কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক।
আপনার সন্তানের আবেগ – অনুভুতি কে গুরুত্ব দিন
কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক হিসেবে সন্তানের আবেগের দিকগুলির প্রতি আপনাকে ওয়াকিবহাল হতে হবে। শিশুর মনখারাপ দেখলে তার কাছে মনখারাপের কারন জানতে চান। মনখারাপের কারন কে কখনই তুচ্ছ ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেবেন না, উপহাস করবেন না। কারনটি আপনার কাছে তুচ্ছ মনে হলেও সন্তানের কাছে তা নাও হতে পারে। সন্তানের মত করেই তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন।
মনোযোগ সহকারে সন্তানের কথা শুনুন
কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক হতে গেলে আপনাকে অবশ্যই সন্তানের কথা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে। ধৈর্য হারালে একেবারেই চলবে না। কর্তৃত্বপূর্ণ পিতামাতা সন্তানের চিন্তাশক্তি কে উন্মুক্ত করার সুযোগ দেন। আগামীতে আপনার সন্তান যদি একই কথা বারংবার ও বলে তবুও আপনি তার কথা মন দিয়ে শুনুন, তাকে শুধরে দিন, তার আইডিয়া গুলো আপনার সঙ্গে শেয়ার করার সুযোগ করে দিন।
শেখানোর জন্য শিশুর ভুল-ভ্রান্তিগুলি কে কাজে লাগান
কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকেরা কখনই সন্তানের ভুল-ভ্রান্তির জন্য তাদের বিব্রত করেন না। বরং তার কোথায় কোথায় নিজেকে ঠিক করার প্রয়োজন আছে তা হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেন। আপনি যদি নিজেকে আরো বেশি কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক করে তুলতে চান তাহলে আপনিও সন্তানের ভুল গুলি কে শেখানোর সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন।
আরো পড়ুন পেরেণ্টিং বা অভিভাবকত্ব বলতে কি বোঝায়? পেরেণ্টিং বা অভিভাবকত্ব প্রকৃতপক্ষে কিরূপ অর্থবহন করে থাকে?
ভালো কাজের জন্য তাকে পুরস্কৃত করুন
কোন ভালো কাজের জন্য সন্তানকে পুরষ্কার দিয়ে তাকে উৎসাহিত করতে পারেন। যেমন ধরুন আপনার সন্তান রোজ স্কুল যাওয়ার জন্য তৈরি হতে দেরি করে ফেলছে, তাহলে সময়ের মধ্যে তৈরি হওয়ার জন্য তাকে কিছু গিফট দিতে পারেন।
ছোটখাটো ভুলের ক্ষেত্রে ওয়ার্নিং দিন
ছোটখাটো ভুলের জন্য কখনই সন্তানের প্রতি মারমুখী হয়ে উঠবেন না। লঘু পাপে গুরু শাস্তি কখনই ভালো ফল দেয় না। ভুলের পরিনাম সম্পর্কে তাকে সচেতন করুন।
নিয়মনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্পষ্টতা বজায় রাখুন
কোন কোন নিয়মানুবর্তিতা বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা মেনে চলে এবং তাকেও মেনে চলতে হবে তা সন্তানের কাছে স্পষ্টভাবে বলুন। শুধু তাই নয়, কেন এগুলো মেনে চলা উচিৎ তাও বলুন। যেমন, যদি আপনার বাড়িতে সকাল সাতটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়া নিয়ম হয়, তাহলে শিশুকেও বলুন যে সুস্বাস্থ্যের জন্যই সকলে পালন করছে এবং তাকে এই কারনেই এই নিয়ম পালন করতে হবে।
শিশুর স্বাধীনতা এবং দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখুন
শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাকে স্বাধীনতা দিন। তবে কখনই যেন তা লাগামহীন না হয়ে পরে। কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক হিসেবে আপনি সচেতন থাকুন। যেমন- যদি দেখেন আপনার সন্তান স্কুল যাওয়ার সময় কিছু না কিছু নিতে ভুলে যাচ্ছে তাহলে তাকে প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি লিস্ট বানিয়ে দিয়ে তা ফলো করতে বলুন। পাশাপাশি আপনি খেয়াল রাখুন, সে সব প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে পারছে কিনা।
আরো পড়ুন কীভাবে আপনার সন্তানের মধ্যে সমস্যা সমাধানের স্কিল গড়ে তুলবেন?
সন্তান কে স্বনিয়ন্ত্রনে অভ্যস্ত করে তুলুন
স্বৈরাচারী পিতামাতার মত কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকেরা কখনই তাদের সন্তান কে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চান না, বরং তারা চান সন্তানদের মধ্যে স্বনিয়ন্ত্রন হয়ে উঠুক। আপনি যদি কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবক হয়ে থাকেন তাহলে সবসময় প্যাম্পার না করে রাগ নিয়ন্ত্রণ, অত্যধিক আবেগ নিয়ন্ত্রণ এগুলি শেখান।
ছোট ছোট বিষয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন
কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকেরা সবসময়ই সন্তানের পছন্দ – অপছন্দের দিকটি খেয়াল রাখেন। ছোট ছোট বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকেন। ফলে পরবর্তীতে কোন বড়ো পরিস্থিতিতেও সন্তান সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন সক্ষমতা তার মধ্যে তৈরি হয়।
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখুন
মনে রাখবেন কর্তৃত্বপূর্ণ অভিভাবকত্ব মানে কখনই সন্তানের উপর কর্তৃত্ব ফলানো নয়, বরং সন্তানের সঙ্গে সুন্দর বোঝাপড়া তৈরি করা, তার রোল মডেল হয়ে ওঠা। আপনার ব্যাস্ত দিনপঞ্জি থেকে কিছুটা সময় সন্তানের জন্য আলাদা করে রাখুন, তার সঙ্গে বন্ধুত্বতাপূর্ণ আচরণ করুন, কোয়ালিটি টাইম স্পেনড করুন।
আরো পড়ুন সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সন্তানকে জীবনের পাঠ শেখান
যে সমস্যা আপনাকে অতিক্রম করতে হয়েছে তা আপনার সন্তানের জীবনেও বাধা হয়ে আসুক এমনটা আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না। আপনার জীবনের ভালো খারাপ অভিজ্ঞতা সন্তানের সঙ্গে শেয়ার করুন। তাকে বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত করান। কোন স্কুলের সিলেবাসই জীবনের পাঠ শেখার জন্য যথেষ্ট নয়, এক্ষেত্রে আপনার দেওয়া শিক্ষাই আকর।
সন্তানের প্রাইভেসি কে গুরুত্ব দিন
সন্তানের কিছু প্রাইভেসি থাকতে পারে, যা সে আর কার সঙ্গে শেয়ার করতে চায় না। যেমন তার কোন অভ্যাস বা আচরণ যা বাইরের কারোর সামনে আসুক তা সে চাইছে না। কর্তৃত্বতাপূর্ণ অভিভাবক হিসেবে তার গোপনীয়তার দিকের খেয়াল রাখাও আপনার কর্তব্য। কখনই এসব নিয়ে তাকে উপহাস করবেন না।
কোন নির্দিষ্ট ফর্মুলা দিয়ে পেরেন্টিং কে বিশ্লেষণ করা যায় না। পেরেন্টিং একটি আর্ট। কোন একটি পেরেন্টিং স্টাইল সবার ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে এমন নয়। একটু সচেতন হলে আপনি নিজেই সন্তানের যথাযথ পেরেন্টিং করতে পারবেন। কেননা আপনার সন্তানের জন্য কোনটি সঠিক তা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারবেন একমাত্র আপনি।
Pingback: পেরেন্টিং স্টাইলের 4 টি ধরণ এবং আপনার শিশুর উপর এগুলির প্রভাব – Parenting