সঠিক উপায়ে শাসন না করা সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। এটি তাদের আত্মসম্মান এবং বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে থাকে। আজকাল অভিভাবকেরা সন্তান প্রতিপালনের নানা দিকগুলি নিয়ে ভীষণ ভাবে সচেতন। একই ভাবে সন্তানের শাসনের ক্ষেত্রেও কিছু সচেতনতা আনা প্রয়োজন। শাসন করতে গিয়ে বাবা মায়েদের করা ভুলগুলি সন্তানের জীবনে প্রভাব ফেলে। এখানে দেওয়া হল এমনই কিছু পরামর্শ যা এই ভুলগুলি এড়াতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
-
সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা বা নিচু দেখানো
অন্য শিশুদের সঙ্গে বা ভাই বোনের সঙ্গে বাচ্চাকে তুলনা করা অভিভাবকদের মধ্যে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমরা খেয়াল করে থাকি। আপনিও মনে করেন এভাবে শিশুকে লজ্জা দিতে পারলে সে হয়তো কোন কাজ সহজেই রপ্ত করে ফেলবে। আপনি ভাবছেন এই ভাবে শাসন করলেই তা সন্তানের জন্য সঠিক হবে। বাস্তবে কিন্তু আপনার এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল। “তোমার বন্ধু এত নম্বর পেলে তুমি কেন পেতে পারবে না” – এই ধরণের কথা শিশুর জন্য আদৌ গঠনমূলক হয় না। বরং তা শিশু মনে আরো বেশি ক্ষোভের সঞ্চার করে। যা কখনই ভালো ফল দেয় না। তুলনা করা বন্ধ করে বরং তাদের ভালো কাজ কে প্রশংসা করুন। তাতে করে বাচ্চারা কাজের প্রতি আরো বেশি উৎসাহী হবে।
-
সন্তানকে শাসন করতে গিয়ে জনসমক্ষে বকাঝকা করবেন না
জনসমক্ষে সন্তানকে বকাঝকা করা মোটেও ভালো শাসন নয়। শিশু হয়তো রাস্তায় দৌড়োদৌড়ি করছে বা পার্কে খেলতে গিয়ে অজান্তেই কিছু দুষ্টুমি করে ফেলেছে। তাই বলে রাস্তায় সকলের সামনে তাকে শাসন করতে যাবেন না। এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে তৈরি হতে থাকা আত্মসম্মান বোধে আঘাত লাগে। আপনি তাকে আসলে কি শেখানোর চেষ্টা করছেন তার চাইতে আপনাদের কথোপকথন আশেপাশের কে কে শুনছে তার প্রতি বাচ্চাদের মনোযোগ থাকে। সেই মুহূর্তে তার আচরণ সম্পর্কে তাকে ছোট করে বুঝিয়ে দিন। বাড়ি ফিরে সে নিয়ে কথা বলুন। রাস্তাঘাটে শাসন একেবারেই নয়।
আরো পড়ুন- জেনেনিন কিভাবে শিশুদের আর্থিকভাবে স্বাক্ষর করবেন ।
-
নিয়মনীতিকে হালকা ভাবে নেবেন না
যে নিয়মগুলি শিশুর মেনে চলার জন্য বানিয়েছেন সেগুলো সব সময়তেই যেন সঠিক ভাবে মানা হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এক- আধ বার নিয়মাবলি শিথিল করা যেতে পারে এরকম যেন সন্তানের কখনই মনে না হয়। ধরুন, আপনার পরিবারে খারাপ ভাষা প্রয়োগ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। প্রথমত, আপনাদেরও সেই নিয়ম মেনে চলতে হবে। দ্বিতীয়ত, কখনও সন্তান নিয়ম লঙ্ঘন করলে তা হালকা ভাবে নেবেন না। এতে করে শিশুর মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি হতে থাকে যে নিয়ম ভাঙ্গা আদৌ কোন বড়ো সমস্যা নয়।
-
স্নেহশীল হতে ভুলে গেলে চলবে না
বাচ্চাদের জন্য আপনার ভালোবাসাকে সবার আগের সারিতে রাখুন। শুধুই ভুল ধরিয়ে দেওয়া নয়, ভুল সংশোধন করে দেওয়া ও ভালোবেসে কোন কিছুর শিক্ষা দেওয়া সবথেকে ভালো ফল দেয়। এটি বাচ্চাদের আত্মসম্মানকে এবং তাদের বিকাশ কে প্রভাবিত করে। বাচ্চারা ভুল করলে তাদের শাসন করার জন্য শান্ত ভাবে ধৈর্যের সঙ্গে বোঝানোর পথ বেঁছে নিন। সন্তানের সঙ্গে আপনি যে সম্পর্ক তৈরি করেন তা একটি সুন্দর ভিত্তি রচনা করে। বাবা মায়ের সঙ্গে সন্তানের ভালোবাসার সম্পর্কে এমন কিছু রয়েছে যা অনেক জটিল সমস্যার সমাধানও করতে পারে।
-
মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন
বাচ্চাদের কাছে মিথ্যা বলার বিষয়টি বেশির ভাগ অভিভাবকই হালকা ভাবে নিয়ে থাকেন। অনেক বাবা মায়েরাই মনে করে থাকেন যে সন্তানকে দু একটা মিথ্যা কথা বলা যেতেই পারে, তাতে খুব বেশি কিছু হবে না। এর সব থেকে খারাপ দিকটি হল যখন আপনি সন্তানদের সামনে ধরা পড়ে যান। সন্তানদের সঙ্গে সৎ এবং খোলামেলা কথোপকথনের যে প্রয়োজন রয়েছে, তা অনুভব করুন এবং যতখানি সম্ভব মিথ্যা কথা বলা এড়িয়ে যান।
-
পুরষ্কারের বদলে তাকে দিয়ে কোন কিছু করিয়ে নিচ্ছেন?
বাচ্চাদের কোন কিছুর প্রতিস্রুতি দিয়ে কোন কাজ করিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটি হয়তো আপনার কাছে সাময়িকভাবে সহজ মনে হয়। তাৎক্ষণিক একটা ভালো ফল এতে পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও সত্য যে এর ফলে বাচ্চাদের মধ্যে লোভ বাড়তে থাকে। তাই প্রত্যেকবার চকলেটের লোভ দেখানোর পরিবর্তে তাদের ভালো আচরণের জন্য প্রশংসা করুন।
-
নিজেরাই নিয়ম ভেঙ্গে ফেলবেন না যেন
নিজেরাই নিজেদের তৈরি নিয়ম যদি ভঙ্গ করেন তবে কখনই তা বাচ্চাদের মেনে চলতে বাধ্য করতে পারবেন না। ধরুন আপনি বাচ্চাদের শেখান কীভাবে অন্যদের সঙ্গে মার্জিত আচরণ করতে হয়। অথচ যদি বাজার বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে আপনি নিজেই দুরব্যবহার করছেন, তাহলে সন্তানও ধীরে ধীরে সেই ব্যবহারই রপ্ত করবে। মনে রাখবেন তারা কিন্তু আপনাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ খেয়াল করে এবং আপনি যা করেন তারাও তা অনুসরণ করে।
-
জীবনমুখী শিক্ষাগুলিকে গুরুত্ব দিন
দিন শেষে সন্তানকে কাছে টেনে নিন। কেন আপনি তাকে সবসময় ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন, ভুলগুলি থেকে আসলে কি কি শিক্ষা তাকে আপনি দেওয়ার চেষ্টা করছেন, সেগুলি বুঝিয়ে বলুন। শেখার এই জায়গাগুলি জীবনে কীভাবে কাজে আসে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তা সন্তানের কাছে ব্যখ্যা করুন। তাদের বুঝতে সাহায্য করুন যে আপনি তাদের ভালোবাসেন এবং আপনি চান যে তারা জীবনে সফল হোক।
আজকের অ্যাটিক্যালটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে অ্যাটিক্যালটি শেয়ার করে নিন।
আরো পড়ুন-
সবে মাত্র শিশুকে স্কুলে দিয়েছেন।বাড়িতে এগুলো শেখাতে ভুলবেন না।
শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো
খাবার সময়তেই যত ঝামেলা। শিশুর সঠিক পুষ্টি নিয়ে চিন্তিত। দেখে নিন কিছু সহজ টোটকা
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
পেরেন্টিং স্টাইলের 4 টি ধরণ এবং আপনার শিশুর উপর এগুলির প্রভাব