যেটা করতে ভালো লাগছে বাচ্চা শুধু সেটাই করে যাচ্ছে, যেমন মোবাইলে কার্টুন দেখা। অথবা যা খেতে ভালো লাগছে সেটা ছাড়া আর কিছুই খেতে চাইছে না, যেমন ধরুন চকোলেট বা হতে পারে বার্গার। মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই যে ভালো নয়, তা বোঝাতেই পারছেন না। কেন ? কারণ শিশুরা খুব সহজেই কোন কিছুর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এই সমস্যা থেকে শিশুকে বের করে আনা আসলেই একটি কঠিন কাজ। কিন্তু তা বলে যদি আপনি হাল ছেড়ে দেন, তাহলে তো চলবে না। কেননা দিনের পর দিন এমন চলতে থাকলে শিশুর মধ্যে তা অভ্যাসে পরিণত হবে। ছোটবেলাতেই এর সুরাহা করা প্রয়োজন। নাহলে পরবর্তীতে তা আরো বেশি জটিল সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে।
কোন না কোন জিনিসের প্রতি আমাদের সকলেরই আসক্তি থাকে। যেমন ধরুন কেউ টিভি দেখার আসক্ত আবার কারোর হয়তো বই পড়ার নেশা প্রবল। আর বর্তমান সময়ের ফোনের আসক্তির কথায় আর নাই বা গেলেন। শিশুদের ক্ষেত্রেও কিন্তু এর অন্যথা হয় না। তাদের ও কম বেশি আসক্তি থাকে। এই আসক্তি হতে পারে চকোলেট বা জাঙ্ক ফুডের অথবা ভিডিও গেম বা কার্টুন দেখাও হতে পারে। এগুলির কোনটিই নির্দিষ্ট সীমা মেনে চললে অসুবিধা নেই। কিন্তু যখনই তা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে ওঠে তখন তা সমস্যা ডেকে আনতে পারে। কোন রকম আসক্তি ই শিশুই ক্ষেত্রে কাম্য নয়। কিন্তু ছাড়াবেন কি করে ? আসুন দেখে নিই এমন কিছু টিপস
যা হোক একটা বুঝিয়ে দিয়ে অভ্যাস ছাড়ানোর চেষ্টায় যাবেন না
অনেক সময় অভিভাবকেরা যা খুশি তাই একটা বুঝিয়ে দিয়ে সন্তানের কোন অভ্যাস ছাড়ানোর চেষ্টা করে থাকেন। তবে এমন পন্থা কিন্তু মোটেই কার্যকর হয় না। আপনার কথা যদি ভিত্তিহীন হয়ে থাকে তাহলে বেশি দিন তা ধোপে টিকবে না, কোন না কোন ভাবে শিশু জেনেই ফেলে যে আপনি তাকে ভুল বোঝাচ্ছেন। এর ফলে প্রথমত আপনার প্রতি তার বিশ্বাস কমে আসে। আর দ্বিতীয়ত শিশুও আপনারই মত মিথ্যে বা অবান্তর কথা বলতে শুরু করে। এরপর থেকে সন্তান আর আপনার কোন কথারই তেমন গুরুত্ব দিতে চাইবে না।
উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন
যদি লক্ষ্য করেন সন্তান সত্যিই আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাহলে সবার আগে নিজে ধৈর্য রাখুন। সরাসরি তাকে বকাঝকা বা মারধর করে যদি অভ্যাস ছাড়ানোর চেষ্টায় যান তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সোজাসুজি সমস্যার কথায় না গিয়ে অন্য কারোর উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন আপনার সন্তান হয়তো মোবাইল ফোনের প্রতি খুব বেশি আসক্ত, কোন দরকারি ফোন পর্যন্ত আপনি শান্তিতে করে উঠতে পারছেন না। এক্ষেত্রে অন্য কারোর অত্যধিক মোবাইল ব্যবহারের ফলে কি কি খারাপ পরিনতি হয়েছিল তা গল্পের ছলে তাকে বলুন। আবার ধরুন খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে চোখের কি ক্ষতি হচ্ছে, মনোযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা, ঘাড়ের ব্যথা বা হাত ব্যথার মত সমস্যাগুলির কথা অন্যভাবে বলার চেষ্টা করুন। এজন্য সবসময় তাকে দোষ দেবেন না, এতে করে ক্রমশই সন্তানের মধ্যে বড়োদের কথা মেনে চলার প্রতি অনীহা তৈরি হতে থাকে।
নিজেকে উদাহরণ হিসেবে তৈরি করুন
যে কোন শিশুরই অনুকরণের প্রবণতা রয়েছে। অর্থাৎ সে আপনার ব্যবহার, চালচলন, আচার- আচরণ ইত্যাদি খুব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খেয়াল করে এবং তা নকল করতে পছন্দ করে। তাই আপনাকে নিজের আচার- আচরণ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। বাচ্চার সুঅভ্যাস হোক বা কুঅভ্যাস, তা কিন্তু সে পরিবারের মধ্যে থেকেই তৈরি করে। যদি শিশু টিভি দেখার প্রতি খুব বেশি আসক্ত হয়ে থাকে, তাহলে বাড়ির কোন না কোন সদস্য এমন আছেন যিনি খুব বেশি টিভি দেখেন এবং তার থেকে বাচ্চাও সেটি আয়ত্ত করে ফেলেছে। আবার এমনও হতে পারে কাজের সুবিধার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ আপনি বাচ্চাকে কার্টুন চালিয়ে দিয়ে কাজ করছেন। এখন সেটাই বাচ্চার কাছে আসক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এসব ব্যাপারে আপনাকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের আচরণধারা এমন ভাবে সংযত উপায়ে পরিচালনা করতে হবে যাতে তা অনুকরণ করলে শিশুর জন্য ভালো ছাড়া খারাপ কিছু বয়ে না আনে।
অভ্যাস ছাড়াতে সন্তানকে আরো বেশি ব্যস্ত রাখুন
আজকাল অভিভাবকেরা বাচ্চাদের যে আসক্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত তা হল অত্যধিক স্মার্টফোন দেখা বা গেম খেলার মত কিছু বিষয়। আসলে বাচ্চাদের এখন মাঠের প্রতি টান কম, ফলে তারা গ্যাজেটে অনেক বেশি আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। মুক্তির একমাত্র উপায় শিশুকে আরো বেশি প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া। বিকেলবেলা তাকে মাঠে নিয়ে যান বা পার্কে বেড়াতে নিয়ে যান, তাও যদি সম্ভব না হয় অন্তত কিছুটা রাস্তা একসঙ্গে হেঁটে আসুন। কোন খেলাধুলায় সন্তানের আগ্রহ থাকলে তাকে সেই স্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত করুন। এতে আসক্তি থেকে যেমন মুক্তি পাবে, তেমনই মন এবং শরীর স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
সব শেষে এটাই বলার ছোট হোক বা বড়- আসক্ত হয়ে পড়া কারোর ক্ষেত্রেই কাম্য নয় এবং তা কোন ভালো ফল দেয় না। বই পড়া বাদ দিয়ে পৃথিবীতে আর কোন রকম আসক্তিকেই গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করা যায় না। তাই গেম খেলা হোক বা জাঙ্ক ফুড, শিশুর মধ্যে কোন প্রকার আসক্তি গজিয়ে ওঠার আগেই তাকে রুখে দিতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন “প্রিভেনশন ইস বেটার দ্যান কিওর”।
আজকের লেখা অ্যাটিক্যালটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করে সকলকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
আরো পড়ুন –
গর্ভবতী মায়েদের জন্য খাদ্য তালিকায় কোন খাবার গুলি রাখতে হবে?
শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো
বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
সন্তানের সঙ্গে আপনার সুন্দর সম্পর্ক থাকা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ
টিভি বা স্মার্টফোন ছাড়া শিশু এক গ্রাসও মুখে তুলতে চায় না। অভ্যাস ছাড়াবেন কিভাবে?
Pingback: লোকের সঙ্গে একেবারেই মিশতে পারে না সন্তান। এই কৌশল কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন - Parenting