একই সঙ্গে একজন ভালো অভিভাবক এবং কাজের জগতেও তুখোড় একজন হয়ে ওঠা স্বভাবতই কঠিন। ফলস্বরূপ অনেক অভিভাবকই তাদের কাজ এবং অভিভাবকত্বের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেন। অনেক অভিভাবক আছেন যারা পারদর্শিতার সঙ্গে দুটো দিকই সামলে চলেছেন। আবার কেউ কেউ হয়তো দুটোর মধ্যে থেকে শুধু অভিভাবকত্বকেই বেছে নেন। এর কোনটিকেই আপনি ঠিক বা ভুল আখ্যা দিতে পারবেন না। কেননা সবটাই ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভরশীল। কেউ কেউ মনে করেন ভালো অভিভাবক হওয়ার জন্য শিশুকে অনেকটা সময় দেওয়া প্রয়োজন। আবার কেউ বিশ্বাস করেন ডে কেয়ার সেন্টারগুলোতে শিশুর দেখভাল সঠিক হয়না, তাই বাড়িতে অভিভাবকের সান্নিধ্যই ভালো।
কাজ আগে নাকি অভিভাবকত্ব?
পৃথা একজন ওয়ার্কিং মাদার। প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মকর্তা। কাজ এবং অভিভাবকত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন সন্তান ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে এক অদ্ভুত টানাপোড়েন অনুভব করেন তিনি। সারাদিন অফিস করে বাড়ি ফেরার পর প্রচণ্ড এক অপরাধবোধে ভোগেন তিনি। শুধু পৃথাই নন, পৃথার মত এমন হাজারো মায়েদের সন্ধান পাবেন যারা কিনা কর্মজীবী হয়েও সুখী নন। কেননা তারা ক্যারিয়ার এবং পরিবারের মধ্যেকার টানাটানির অস্বস্তিতে জর্জরিত।
এই একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যাংকে কর্মরত জয়তি জানিয়েছেন “মেয়ে যে কখন বড় হয়ে গেল, টেরই পেলাম না, ওর বেড়ে ওঠা টাই দেখা হয়ে উঠলো না” ।
এমন টানাপোড়েন যে শুধু মায়েদের তাই কিন্তু নয়। একটু কান পাতলেই সন্তানের বাবাদেরও কম বেশি এই ধরনের বিলাপ করতে শোনা যায়।
অপরাধবোধ কাটিয়ে উঠতে হবে
সবার আগে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে না পারার অপরাধবোধকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। অপরাধবোধকে সঙ্গে নিয়ে আপনি অভিভাবকত্ব হোক বা কর্মক্ষেত্র, কোনোটিকেই ভালো ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের উপার্জনের প্রয়োজন আছে, কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার ও প্রয়োজন আছে। বেঁচে থাকার রসদ জোগাতে কাজের জায়গায় তো যেতেই হবে। মনে রাখবেন আপনার কাজ আপনার আইডেন্টিটি। সন্তানকে সময় দিতে না পারার জন্য অপরাধবোধে না ভুগে বরং সময় বের করার চেষ্টা করুন। সন্তানকে অনেক বেশি সময় দেওয়া মানেই যে তা সব সময় ভালো পেরেন্টিং, এমন ধারণা কিন্তু সঠিক নয়। এমন অনেক পিতামাতাই আছেন যারা কিনা আপনার থেকে অনেক বেশি সময় সন্তানকে দিয়ে থাকেন। কিন্তু তা বলেই যে তাদের সন্তান খুব ভালো মানুষ হয়েছে, জীবনে শুধুই উন্নতি করেছে, এমন কথা কি জোর দিয়ে বলা যাবে? কতটা সময় দিচ্ছেন সেটাই শেষ কথা নয়, কোয়ালিটি টাইম দিতে পারছেন কি না সেটাই আসল।
কর্মজীবন থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে আরেকবার ভেবে দেখুন
সন্তান বা পরিবারকে সময় দিতে না পারার কারণে আপনি যদি কর্মজীবন থেকে ছুটি নেওয়ার কথা ভেবে থাকেন তাহলে সময় নিয়ে আবারও পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। প্রথম আপনি যদি উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকেন তাহলে কোন যুক্তিতেই তা ভুল নয়। মাতৃত্ব মানেই আপনাকে নিজের সবটুকু উজাড় করে সন্তানকে বড় করে তুলতে হবে, সন্তান প্রতিপালনই আপনার জীবনের ধ্যান জ্ঞান, এমন ধারণা কিন্তু এখন অতীত হয়েছে। আপনি যদি কর্মঠ হন, নিজের যোগ্যতায় উচ্চ আয়ের উপার্জন করতে পারেন তাতে ভুল কিছু নেই। প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে যে কোন ব্যক্তিকেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। আপনার ক্ষেত্রেই বা তার অন্যথা হবে কেন?
সন্তানের বড় হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ কথা ঠিক। আপনার অভিভাবকত্বে আপনি কোন খামতি রাখবেনই বা কেন? সন্তানকে খুব ভালো ভাবে মানুষ করবেন এমন মানসিকতা নিয়ে চলুন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না শুধুমাত্র অভিভাবকত্বই আপনার একমাত্র ভূমিকা নয়। আপনি যেমন অভিভাবক, তেমনি আপনাদেরও তো অভিভাবক আছে, তাদের প্রতি ও তো আপনাদের কিছু কর্তব্য রয়েছে। কর্মক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলে কর্তব্য পালনই বা করবেন কি করে?
সর্বোপরি আপনার নিজের ভালো থাকার জন্য আপনি কাজ করুন। নিজে ভালো না থাকলে অপরকে ভালো রাখা সম্ভব নয়। আপনার কাজই আপনার পরিচয়।
পরিবারকে কি তাহলে গুরুত্ব দেবেন না?
অবশ্যই দেবেন। দিনশেষে আপনার সব চাইতে নিরাপদ আশ্রয়স্থল যেমন আপনার পরিবার, ঠিক তেমনই আপনিও আপনার সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। অভিভাবক হিসেবে আপনি সন্তানের যত বেশি কাছের, ততখানি আর কেউই নয়। আপনার বড় হয়ে ওঠার জন্য যেমন আপনার বাবা মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি, তেমনই আপনিও সন্তানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় কান্ডারী কিন্তু আপনি। কাজ হোক বা অভিভাবকত্ব সব কিছুই জীবনের অঙ্গ বিশেষ। কোনটিই ফেলনা নয়।
তাহলে কি ভাবছেন সফল কর্মজীবন ও সুন্দর পরিবার এই দুটি একসঙ্গে পাওয়া কঠিন? নাকি অসম্ভব?
আচ্ছা একবার ভেবে দেখুন তো দুটোর মধ্যে একটা কেন আমাদের বেছে নিতে হবে? কেনই বা একটির জন্য আরেকটিকে ত্যাগ করতে হবে? দুইয়ের সহাবস্থান কি সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব। এমন অনেক অভিভাবক আছেন যারা সফল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি দক্ষতার সঙ্গে অভিভাবকত্ব পালন করে থাকেন। একটির জন্য আরেকটিকে বাদ দেওয়ার কথা না ভেবে বরং উভয়ের মধ্যে ব্যালেন্স করে চলার কথা ভাবুন। কর্মজীবন যেমন আপনার আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় তেমনই অভিভাবকত্ব আপনার সন্তানকে সামাজিক স্থিতিশীলতা দেয়। ঠিক যেন একই মুদ্রার দুই পিঠ।
১।কর্মব্যস্ততার কারণে সন্তানের পড়াশোনার দিকে নজর দেওয়া হয়ে ওঠে না, কী করা উচিত ?
উত্তরঃ অনলাইন ইন্টারেক্টিভ ক্লাসের সাহায্য নিতে পারেন ।
২।অফিস সামলেও কি ভালো অভিভাবক হওয়া সম্ভব?
উত্তরঃ অবশ্যই সম্ভব।
৩।অন্য বন্ধুদের মা বাড়িতে থাকে। তার মা নয় কেন? সন্তানের থেকে এমন প্রশ্ন আসলে?
উত্তরঃ সন্তান যেমন স্কুলে যায়, তেমনই আপনাকেও অফিস যেতে হয়। এভাবে সন্তানকে বুঝিয়ে দেখতে পারেন।
আরো পড়ুন
বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
কেন সন্তানদের যৌন শিক্ষা দেওয়া জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।কিভাবে শুরু করবেন সন্তানের এই যৌন শিক্ষা?