বাচ্চাদের খাবার খাওয়ানো নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় না এমন মায়েদের দেখা পাওয়া সত্যিই কঠিন। তার উপর আবার যদি হয় পুষ্টিকর কোন খাবার তাহলে তো ঝামেলা দ্বিগুন, কেননা সেক্ষেত্রে স্বাদের সঙ্গে একটু কোম্প্রমাইস তো হয়েই থাকে। কিন্তু এমন বায়না চলতে থাকলে পুষ্টির ঘাটতি তো দেখা দেবেই। তাহলে উপায় কি? উপায় হল বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু সহজ টিপস যা আপনার খুদেকে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে।
-
শিশুর সঠিক পুষ্টির জন্য খাবার অপচয় রুখতে শেখাতে হবে
অনেক বাচ্চারাই খাবার অপচয় করে। এটা যে কতখানি ভুল তা শেখান। যদিও এখানে প্রথম পদক্ষেপ আপনাকে নিতে হবে। এমন অনেক মায়েরাই করে থাকেন যে বাচ্চার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি খাবার তাকে দিয়ে ফেলেন এবং যে কোন প্রকারে তা খাওয়ানোর জন্য জোর করতেই থাকেন। অবশেষে ব্যর্থ হয়ে তা ফেলে দিতে হয়। কিন্তু ভেবে দেখুন তো একবার, আপনার পেট ভরে যাওয়ার পর কেউ আপনাকে জোর করে খেতে বললে আপনি কি পারবেন খাবার খেতে? অমুকের বাচ্চা এতটা খেলে আমার ছানা কেন এত কম খাচ্ছে এমন ভাবনা থেকে আপনাকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাচ্চা যতটুকু খাবার স্বাছন্দ্যে খেতে চায় তাকে ততটুকু খাবারই দিন।
আবার অনেক সময়ই বাচ্চাদের মধ্যে খাবার নিয়ে তা নষ্ট করার প্রবণতা দেখা যায়। খাবারের অপচয় করা আসলেই কতটা ভুল তা বাচ্চাকে শেখাতে হবে। শুধু মুখের কথাতে যদি কাজ না হয় সেক্ষেত্রে তাকে বাস্তব ছবির সঙ্গে পরিচিত করান। যেখানে দরিদ্র বাচ্চারা অভাবের জন্য খাবার খেতে পায় না তেমন কোন জায়গায় শিশুকে নিয়ে যান, তাকে দেখান কেন আপনি তাকে খাবার অপচয় করতে বারণ করে থাকেন। এতে করে তার মধ্যে অযথা খাবার নষ্ট করার প্রবণতা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।
-
শিশুর সঠিক পুষ্টির জন্য মজার মজার রেসিপি তৈরি করুন
বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য মজাদার রেসিপি ট্রাই করতে পারেন। অনেকেই বাচ্চাকে রোজ এক খাবার খাইয়ে থাকেন। এতে করে বাচ্চাদের মধ্যে খাবারের প্রতি অনীহা বাড়তে থাকে। একে তো পুষ্টিকর কোন কিছু তাদের খাওয়ানো এক ঝক্কির ব্যাপার, তার উপর যদি রোজ একই রকম খাবারে দিতে থাকেন তাহলে খাবারের প্রতি বাচ্চাদের আরো বেশি একঘেয়েমি এসে যায়। তাই নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করুন। রোজ একই খাবার না দিয়ে বিভিন্ন খাবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দিতে পারেন এতে বাচ্চাদের একঘেয়েমি কাটবে।
পাশাপাশি ট্রাই করতেই পারেন ফুড আর্ট। ফুড আর্ট মানে এই নয় যে আপনাকে প্রফেশনাল শেফের মত করে খাবার পরিবেশন করতে হবে। এই ধরুন চেনা খাবারই একটু সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর ভাবে পরিবেশন করলেন। যেমন প্যান কেক দেওয়ার সময় উপর থেকে কেচ আপ দিয়ে একটা স্মাইলি একে দিলেন। আবার ফ্রেঞ্চ টোস্ট দিতে গিয়ে ধরুন কুকি কাটার দিয়ে কোন শেপে কেটে তারপর তা খাবারে দিলেন। এতে বাচ্চারা অনেক বেশি আনন্দের সঙ্গে খাবার খাবে খাবারের প্রতি তাদের আগ্রহও বাড়বে।
-
সবার সঙ্গে একসাথে বসে খাওয়া অভ্যেস করুন
- বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা যখন একসঙ্গে ডাইনিং টেবিলে খাবার খাচ্ছেন, বাচ্চাকেও সেই একই সময়ে খাবার খাওয়ানোর অভ্যেস করুন। বাচ্চারা সর্বদাই বড়োদের নকল করে। তাই তারাও যখন বড়োদের সঙ্গে এক টেবিলে খেতে বসবে, বড়োদের খাওয়ার ধরণও তারা নকল করতে শুরু করবে। এরকম ভাবে একটা সময়ে গিয়ে আপনি দেখবেন বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য আপনাকে আর আলাদা করে কোন সময় দিতে তো হচ্ছেই না, উপরন্তু তাদের বায়নাও কমে যাচ্ছে। এছাড়া অন্যদের দেখাদেখি সে রকমারি শাকসবজি খাওয়াটাও ধীরে ধীরে শিখে ফেলবে।
-
ঝামেলা কমাতে গ্যাজেট ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন
খাবার খাওয়ানোর সময় বায়না যাতে কম করে সেজন্য আপনি তার হাতে একটা স্মার্টফোন ধরিয়ে দিলেন। অথবা টিভিতে কার্টুনের চ্যানেল দিয়ে তাকে খাবার খেতে বসিয়ে দিলেন। এতে আপনার সমস্যা হয়তো কিছুটা হলেও কমছে ঠিকই। কিন্তু এর জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে আপনার সন্তানেরই। কারণ আপনি যখন তাকে টিভি বা স্মার্টফোনে মনোযোগী রেখে খাবার খাওয়াচ্ছেন সে সময় সে ভালো করে চিবিয়ে খাবার খাচ্ছে না, ফলে তার হজমের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আবার অন্য দিকে এভাবে খাবার খেতে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, ফলে যে সময় তার সামনে টিভি বা স্মার্টফোন থাকবে না তখন খাবার খাওয়াতে আপনাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
এগুলি ছাড়াও যে কথাটি না বললেই নয় তা হল আপনি খাওয়ানোর সময় বাচ্চাদের ভয় দেখানো থেকে বিরত থাকুন। আপনার ছোটবেলাতেও আপনি হয়তো এভাবেই মা ঠাকুমার ভয় দেখানোর জন্য তাড়াতাড়ি খেয়ে ফেলতেন। কিন্তু সময় বুঝে কখনও কখনও কিছু জিনিসের বদল ঘটাতেই হয়। আপনি রোজ খাবার খাওয়ানোর সময় যদি বাচ্চাকে ভয় দেখিয়ে খাবার খাওয়াতে থাকেন, আসলে এতে ভালো কোন কিছুই হয় না। প্রথমদিকে এই পদ্ধতি আপনার কার্যকরী মনে হলেও ধীরে ধীরে বাচ্চাদের এই ভয় কেটে যেতে থাকে। এটি না করে আপনি বরং অন্য পন্থা কাজে লাগাতে পারেন।। যেমন ধরুন বাচ্চাকে খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বোঝালেন, কোন খাবার খেলে তার কি কি উপকার হবে সেসব গল্প করতে করতে তাকে খাবার খাওয়ালেন। আবার ধরুন কোন শাকসবজি কীভাবে তৈরি হয়, বা আমাদের কৃষক ভাইয়েরা কীভাবে পরিশ্রম করার পর তা আমরা খেতে পাই এভাবে বুঝিয়ে বলুন। দেখবেন খাবার নিয়ে বায়না কমতে শুরু করবে।
আজকের অ্যাটিক্যালটি আপনাদের ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
আরো পড়ুন –
শিশুদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটবে
বিজ্ঞানের প্রতি শিশুর ঝোঁক বাড়াতে মেনে চলুন এই টিপসগুলি
সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছেন। এই কাজগুলো করার চেষ্টা করুন
বাচ্চা কথায় কথায় রেগে যায়, সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। রইল কিছু কার্যকরী টোটকা
শিশুর মধ্যে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে চাইছেন । মেনে চলুন এই উপায়গুলো